লিখুন
ফলো

জীবাশ্ম সম্পর্কে কি জানি আমরা?

আমরা ডাইনােসর সম্পর্কে যত কিছু জেনেছি তার সবই পাওয়া গেছে ফসিল থেকে। জীবদেহের কোনাে অংশ, বিশেষ করে শক্ত অংশ যেমন, হাড় বা দাঁত, জীবের মৃত্যুর পর মাটিতে থাকতে থাকতে এর কোষ কলা মাটির খনিজ উপাদান দ্বারা
পরিবর্তিত হয়ে পাথরে রূপ নেয়। এই পাথরকে বলা হয় ফসিল বা জীবাশ্ম।

জীবাশ্ম
জীবাশ্ম; image: wikipedia

বেশিরভাগ জীবাশ্ম তৈরী হয় পানির নিচে। তাই স্থলচর অপেক্ষা জলচর প্রাণীর ফসিল বেশি পাওয়া যায়। এজন্যই অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় ডাইনােসরের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে কম। অনেক ডাইনােসর প্রজাতি ফসিল হিসেবে রেখে গেছে কিছু দাঁত বা পায়ের হাড়। চামড়া বা অন্যান্য নরম মাংসের ফসিল খুবই বিরল। তাই বলা যায় এই জীবাশ্মের রেকর্ড অসম্পূর্ণ আর ডাইনােসরের গঠনের অনেক কিছুই আমাদের অজানা।

তারপরও বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রতি বছরই নতুন নতুন জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হচ্ছে আর আমরাও ডাইনােসর সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য জানতে পারছি। ডাইনােসরের জীবাশ্ম সাধারণত পাথর দিয়ে ঘেরা থাকে। খনন করার সময় এই পাথরকে সতর্কতার সাথে আলাদা করা। হয়। অনেক সময় জীবাশ্মের তুলনায় আশেপাশের পাথর নরম থাকে। আবার মরভূমিতে যে সকল জীবাশ্ম পাওয়া যায় তা তুলির সাহায্যে উপরের বালু সরিয়েই সংগ্রহ করা হয়।
image: wikipedia

কিন্তু এই জীবাশ্ম সংগ্রহ খুবই সময়সাধ্য এবং ধৈর্য্যের কাজ। বিজ্ঞানীরা যেসব জীবাশ্ম উত্তোলন করেন সেগুলােকে বেশ কিছু ভাগে ভাগ করেন। যেমন-

প্রকৃত জীবাশ্মঃ প্রত্নতত্ত্ববিদ ডাইনােসরের হাড় বা দাঁত খনন করে বের করে আনেন। তা হল প্রকৃত জীবাশ্ম। এই জীবাশ্ম যে প্রক্রিয়ায় তৈরী হয় তাকে বলে খনিজীকরণ বা (Minarelization)। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মাটিতে থাকা হাড়ের মধ্যে খনিজ পদার্থ জমে একে শক্ত ও কঠিন করে তােলে। ক্রিটেশিয়াস যুগের বৃহৎ শিকারী টিরেনােসরাসের দাঁত ও চোয়ালের হাড় এই প্রক্রিয়াই সংরক্ষিত ছিল।

“প্রতি বছরই নতুন নতুন জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হচ্ছে আর আমরাও ডাইনােসর সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য জানতে পারছি। ডাইনােসরের জীবাশা সাধারণত পাথর দিয়ে ঘেরা থাকে। খনন করার সময় এই পাথরকে সতর্কতার সাথে আলাদা করা হয়। অনেক সময় জীবাশের তুলনায় আশেপাশের পাথর নরম থাকে। আবার মরভূমিতে যে সকল জীবাশ্ম পাওয়া যায় তা তুলির সাহায্যে উপরের বালু সরিয়েই সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু এই জীবাশা সংগ্রহ খুবই সময়সাধ্য এবং ধৈর্য্যের কাজ।



ছাঁচ জীবাশ্মঃ অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবদেহ পুরােপুরি ফসিলে পরিণত হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এদের চারপাশের কাদা এত দ্রুত শক্ত হয়ে যায় যে তাতে ঐ জীবদেহের ছাপ থেকে যায়। যখন ঐ কাদা পাথরে পরিণত হয়
তখন হয়ত জীবের কোনাে অংশ ওখানে থাকে না কিন্তু পাথরে ঐ অংশের ন্যায় গর্ত হয়ে থাকে। জুরাসিক যুগের কিছু সামুদ্রিক প্রাণীর এরূপ জীবাশ্ম পাওয়া গেছে।

ছাঁচ জীবাশ্ম; image: wikipedia

নমুনা জীবাশ্মঃ কিছু জীবাশ্মে প্রাণীর দেহের কোনাে অংশ বা ছাঁচ থাকে না, বরং প্রাণীটা যে এখানে ছিল তার প্রমাণ থেকে যায়। অনেকটা পাখি উড়ে চলে যায় রেখে যায় পালক ধরণের। এই জীবাশ্মগুলাে বিজ্ঞানীদের কাছে খুবই আগ্রহের বস্তু। এর মাধ্যমে প্রাণীর জীবন আচরণ সম্পর্কে জানা যায়। ডাইনােসরের নমুনা জীবাশ্মের মধ্যে আছে এর পায়ের ছাপ, বাসা, থাকার গর্ত, এমনকি পাথরে পরিণত হওয়া ডাইনােসরের
মল (এদের বলা হয় coprolites)।

সম্পূর্ণ জীবাশ্মঃ হ্রদ বা সমুদ্রের তলদেশে ধীরে ধীরে পলি জমার মাধ্যমে অনেক সময় জলজ প্রাণী বিশেষ করে মাছের প্রায় সম্পূর্ণ জীবাশ্ম পাওয়া যায়। এতে হাড় ও পাখনার সাথে সাথে ত্বকেরও জীবাশ্ম থাকে।

অ্যাম্বারঃ অ্যাম্বার হলাে উদ্ভিদদেহ হতে নিঃসৃত রেজিন, যা জীবাশ্মে পরিণত হয়েছে। অনেক সময় মাছি বা এরকম ক্ষুদ্র প্রাণী এই রেজিনে আটকা পড়ে এবং অবিকৃত অবস্থায় থেকে যায়। আপনারা যারা জুরাসিক পার্ক সিনেমাটা দেখেছেন তারা জানেন যে, ওখানে এরূপ অ্যাম্বারীভূত এক মশার রক্ত থেকে ডাইনােসরের ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়। যদিও প্রকৃতপক্ষে অ্যাম্বারে প্রায় সম্পূর্ণ গঠন অবিকৃত থাকলেও কোষ বা ডিএনএ নষ্ট হয়ে যায়।

উদ্ভিদের জীবাশ্মঃ উদ্ভিদাংশও জীবাশ্মে পরিণত হয়, বিশেষ করে যখন তারা বায়ুহীন জলাশয়ে আটকা পড়ে। এরূপ আবদ্ধ অবস্থা উদ্ভিদের ক্ষয় হতে বাঁধা দেয়। প্রায় ৩ কোটি বছর পূর্বের কার্বোনিফেরাস যুগের ফার্ন উদ্ভিদের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। এরকম অসংখ্য উদ্ভিদের জীবদেহ মাটির নিচে চাপা পড়ে কয়লায় পরিণত হয়, এই
কয়লা আমরা জীবাশ্ম জ্বালানি রূপে ব্যবহার কর করি।

image: getty image

মূলত, ল্যাটিন শব্দ ফসাস (fossus) (অর্থ – উত্তোলন করা) থেকে ‘ফসিল’ শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে। বৈশ্বিকভাবে জীবাশ্মের ন্যায় জটিল বিষয়ের তথ্য সংরক্ষণকে ফসিল রেকর্ড নামে অভিহিত করা হয়। আবিষ্কৃত কিংবা অনাবিষ্কৃত সমুদয় জীবাশ্মের সংখ্যা, তাদের অবস্থান, শিলার বিন্যাস এবং পাললিক শিলার স্তর – এগুলোকে একত্রে ফসিল রেকর্ড বলা হয়। এই রেকর্ডের বিশ্লেষণ পৃথিবীর জীবনচক্রের ইতিহাস তুলে ধরার সেরা উপায় হিসেবে বিবেচিত। ভৌগোলিক সময়ের মানদণ্ডে জীবাশ্মের গঠন, বয়স এবং বিবর্তনের ধারায় সম্পৃক্ততা জীবাশ্মবিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

আরো পড়ুনঃ

কেমন হবে আগামীর মহাকাশ?

তৃতীয় নয়নঃ রহস্যময় পিনিয়াল গন্থি

দূরত্ব মাপতে আলােকবর্ষ কেন প্রয়োজন হলো?

কাঁদলে অশ্রু ঝরে কেন?

সংরক্ষিত নমুনাকে জীবাশ্ম হিসেবে তখনই বিবেচনা করা হয়, যখন এটি কমপক্ষে দশ সহস্রাধিক বছরের প্রাচীনকালের। ঊনবিংশ শতকে শীর্ষস্থানীয় ভূতাত্ত্বিকগণ ভৌগোলিক সময়ের মানদণ্ডে ৩৪০ কোটি – ১০,০০০ বছর বয়সের মধ্যে সংগৃহীত বস্তুকে জীবাশ্ম নামে আখ্যায়িত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিংশ শতকের শুরুতে রেডিওম্যাট্রিক ডেটিংয়ের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন জীবাশ্ম চিহ্নিত করতে বেশ সহায়ক হয়েছে।

ডাইনোসরের জীবাশ্ম; image: getty image

জীবাশ্মের আকার এককোষী ব্যাক্টেরিয়া থেকে বিশালাকৃতির ডাইনোসর ও অনেক মিটার লম্বা এবং কয়েক টন ওজনের গাছের মতো হতে পারে। সাধারণতঃ মৃত প্রাণীর অংশবিশেষ হিসেবে হাড় এবং দাঁত প্রায়শই বিচ্ছিন্ন জীবাশ্ম হিসেবে পাওয়া যায়।

অনেক স্থানে ডাইনােসরের হাড়ের সাথে মসৃণ পাথর পাওয়া যায়। তৃণভােজী ডাইনােসরেরা খাওয়ার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে এই পাথরগুলাে গিলে থাকে। এরা পাকস্থলীতে গিয়ে খাবারের শক্ত অংশ পিষতে সাহায্য করে। মুরগীও একই কারণে খাওয়ার সময়কিছু নুড়ি পাথর গিলে থাকে।

অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা কীভাবে বুঝতে পারেন কোথায় ডাইনােসরের জীবাশ্ম পাওয়া যাবে। ডাইনােসরের জীবাশ্ম সারা পৃথিবী জুড়েই আবিষ্কৃত হয়েছে। অনেকগুলােই আবিষ্কৃত হয়েছে আকস্মিকভাবে। তবে এক স্থানের জীবাশ্ম নির্দেশ করে অপর কোনাে স্থানে জীবাশ্ম পাওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে জীবাশ্ম ভাল পাওয়া যায় সেইসব পাথরে মধ্যে যারা অগভীর জলাশয়ে তৈরী হয়েছিল বা যে স্থান গুলাে আগে জলাশয় ছিল, পরবর্তীতে পানি শুকিয়ে সমভূমি বা পাহাড়ে পরিণত হয়েছে।


This is a Bengali article. Here is a description of the fossil.

All the reference are hyperlinked within article.

Featured Image: Wikipedia 

Total
0
Shares
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Article

কেমন হবে আগামীর মহাকাশ?

Next Article

ওয়ান্ডাভিশন: সিটকমের আড়ালে রহস্যঘেরা ব্যতিক্রমী এক সুপারহিরো সিরিজ

Related Posts

যেভাবে আমেরিকা পরিণত হলো বৈশ্বিক সুপার পাওয়ারে (পর্ব -২) : (ব্রেটন উডস কনফারেন্স থেকে বর্তমান)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরই মূলত বিশ্বজুড়ে আমেরিকার প্রভাব স্থায়ী রুপ লাভ করে। ১৯৪৫ সালে ২৪শে অক্টোবর ৫১টি দেশের অংশগ্রহণে…
আরও পড়ুন

উইঘুর নির্যাতন: একুশ শতকের ভয়াবহ গণহত্যায় নিরব কেন বিশ্ব?

উইঘুর মুসলিমদের ওপর আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর গণহত্যা চালাচ্ছে কমিউনিস্ট চীন। গণহত্যা এবং নির্যাতনের মাত্রা এত বেশি…

মাহেশিন্তে প্রাথিগারাম (২০১৬) : ইন-ডেপথ ক্যারেক্টার স্টাডি, বাটারফ্লাই ইফেক্ট এবং জীবনের বয়ে চলা

মাহেশিন্তে প্রাথিগারাম এর বাংলা অর্থ হলো মহেশের প্রতিশোধ। এটি একটি ভারতীয় মালায়ালাম ভাষার চলচ্চিত্র যেটি কেরালায় মুক্তি পায়…

বিশ্বের একমাত্র কার্বন নেগেটিভ দেশ ভুটান

সূচিপত্র Hide ধরিত্রী দিবস ও ভুটানসবুজে ঘেড়া ভুটানজলবায়ুভুটানের ইতিহাস ও সংস্কৃতিখাবার ক্যালেন্ডারের পাতায় আজ ২২ এপ্রিল। আজ বিশ্ব…

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন

Total
0
Share