লিখুন
ফলো

বিশ্বের একমাত্র কার্বন নেগেটিভ দেশ ভুটান

ক্যালেন্ডারের পাতায় আজ ২২ এপ্রিল। আজ বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ( Earth Day )। ১৯৭০ সাল থেকে প্রতিবছরের ২২ এপ্রিল পালন করা হয় এই দিনটি। এ দিবসটির লক্ষ পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষার মাধ্যমে ধরিত্রীকে টিকিয়ে রাখা। পৃথিবী বা আমাদের ধরণীর পরিবেশ রক্ষা করে সুন্দর আগামীর জন্য রেখে যাওয়া আমাদের কর্তব্য। পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে সুন্দর পরিবেশ করাই এ দিবসের আসল উদ্দেশ্য। 

ধরিত্রী দিবস ও ভুটান

এ বছরের ধরিত্রী দিবস প্রতিপাদ্য বিষয় ‘রিস্টোর আওয়ার আর্থ’। জলবায়ু সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২ কোটি মানুষ দাবি জানিয়ে রাস্তায় নামে এভাবেই সূচনা হয় এই দিনটির। মার্কিন সিনেটর গেলর্ড নেলসন ১৯৭০ সালের ২২ এপ্রিল দিবসটির প্রচলন করেন। পরিবেশ ও প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা করলেই আমাদের পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।  

কয়েক দশক ধরেই পরিবেশবীদরা সচেতন করছেন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো। এ অবস্থায় প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা খুব দরকারি। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচাইতে বেশি প্রভাব ফেলে কার্বন কার্বন ডাই অক্সাইড। এ জন্য কার্বন নিঃসরণের কমাতে জোড় দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বনায়ণের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে বিশ্ববাসীকে। পরিবেশ রক্ষায় নিজেদের সচেতনতার সেরা দৃষ্টান্ত হচ্ছে ভুটান। বিশ্বের একমাত্র কার্বন নেগেটিভ দেশ হচ্ছে ভুটান। চলুন জেনে নেই ভুটান সম্পর্কে কিছু তথ্য। এ দেশটি পরিবশ রক্ষায় কাজ করে চলেছে দীর্ঘ দিন ধরে। 



দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম এই দেশটি  টুরিস্টদের কাছে খুব জনপ্রিয় একটি স্থান। বাংলাদেশর প্রতিবেশী ভুটান।  জংখা ভাষায় ভুটানকে বলা হয় দ্রুক ইয়ুল এর বাংলা অর্থ  বজ্র ড্রাগনের দেশ। ভুটানের রাজার উপাধি হচ্ছে ড্রাগন রাজা।

ভুটানের আয়তন ৪৬,৫০০ বর্গকিলোমিটার। রাজধানী থিম্পু। ভারত ও চীন ঘিরে রেখেছে ভুটানকে। শুদু তাই নয় হিমালয় পর্বতমালার পূর্বাংশে অবস্থিত ভুটান।

সবুজে ঘেড়া ভুটান

Photo Source: Google

সবুজে ঘেরা দেশ হচ্ছে ভুটান। দেশটির ৭০ শতাংশের  বেশির ভাগ অঞ্চলই বনভূমি। উন্নত শিক্ষিত জাতিরা যেখানে কার্বন নেগেটিভ দেশ হিসেবে কাজ করতে নারাজ সেখানে ভুটানের অবস্থান বেশ শক্ত। ভুটানের শিক্ষার হার প্রায় ৬০ শতাংশ। তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় তারা পরিবেশের গুরুত্ব দিয়েছে। ভুটানের শিক্ষার অন্যতম একটি বিষয় হচ্ছে পরিবেশটা২০০৯ সালে দিকে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যেখানে অংশগ্রহণকারি দেশগুলো একমত হয় যে পরিবেশ রক্ষায় তারা কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে কাজ করবে। অন্য দেশগুলো ভুলে গেলেও ভুটান থেমে থাকেনি। তারা কাজ চালিয়েগেছে পরিবেশ রক্ষায়। এই সম্মেলনের পর ভুটান বনায়ণ ও পরিবেশ রক্ষায় অনেক বেশি জোরদার অবস্থান নেয়। তারা প্রচুর পরিমাণে বনায়ণ শুরু করে। যার ফলে তারা আজ বিশ্বের একমাত্র কার্বন নেগেটিভ দেশ। তবুও তারা থেমে নেই পরিবেশ বিষয়ে কাজ করতে। ক্রমাগত তারা কাজ করছে। তাদের লক্ষ ২০৩০ সালের মধ্যে ভুটান জিরো নেট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ও এর সাথে এবং জিরো পরিমান বর্জ্য উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিত হবে বিশ্ব দরবারে। 



জলবায়ু

ভুটানের উচ্চতা কারণে এই দেশটির আবহাওয়া ও জলবায়ু বেশ বৈচিত্রময়। বিভিন্ন  অঞ্চলের উচ্চতা আবহাওয়ায় প্রভাব ফেলেছে। ভুটানের দক্ষিণ অঞ্চলের উষ্ণ এবং আর্দ্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু যার তাপমাত্রা সারা বছরই ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। অন্যদিকে এই দেশটির মধ্য অঞ্চলে বিরাজ করে নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু। উত্তরাঞ্চলের হিমালয়ের কারণে এখানে গরম কালেও বেশ ঠাণ্ডা থাকে আর শীতে হাড় কাঁপানো শীত।

ভুটানের ইতিহাস ও সংস্কৃতি

Photo Source: Google

ভুটানের ইতিহাস থেকে জানা যায় দীর্ঘ সময় ভুটানের অন্য দেশের সাথে কোন সম্পর্ক ছিলো না। কিন্তু বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে আর নিজেদের উন্নত জাতি হিসেবে গঠনে তারা অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং প্রশাসনিক সংস্কারের কাজ করে।  

উগিয়েন ওয়াংচুক ভুটানের প্রথম রাজা। তিনিই প্রতিবেশি দেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের কাজ করেন।  ভুটানের উন্নয়নে একের পর এক পদক্ষেপ নিতে থাকেন তিনি।  ১৯১০ সালে  উগিয়েন বিভিন্ন চুক্তি করেন ভারত ও ব্রিটিশদের সাথে। ভুটান এগিয়ে যেতে থাকে তার দেখানো পথ ধরে। সময়ের সাথে আসতে থাকে রাজার পরিবর্তন তবে সব রাজাই ছিলেন রাজা উগিয়েন ওয়াংচুক বংশধর। ভুটানের বর্তমান রাজা গিয়েল ওয়াংচুক তিনি পঞ্চম বংশধর ও রাজা জিগমে খেসার ছেলে। পূর্বে ভুটানে পরম রাজতন্ত্র থাকলেও ২০০৮ সালে এর সমাপ্তি ঘটে। ভুটান পরম রাজতন্ত্র থেকে সরে এসে  সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ও এর পাশাপাশি সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। ভুটানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রি লোটে শেরিং, তিনি পূর্বে দেশটির রাষ্ট্রপতি পদে ছিলেন। 



ভুটানের সংস্কৃতির প্রভাব তাদের জীবনের সাথে জোরালো ভাবেই মিশে আছে। তারা তাদের সংস্কৃতি ধর রেখেছে ঠিক যেমন আগে ছিলো। ভুটানের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। ভুটানিদের কাছে নিজেস্ব সংস্কৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাদের সংস্কৃতির একটি বড় অংশ জুড়েই রয়েছে তাদের ধর্ম।

খাবার

Photo Source: Google

খাবার হচ্ছে একটি দেশের সংস্কৃতির অংশ। ভুটানের খাবারের তাদের সংস্কৃতি ফুটে উঠে। ভুটানের মানুষেরা অনেক মশলাযুক্ত খাবার খেতে ভালোবাসেন। তারা খাবারে অনেক মরিচ ব্যবহার করে তাই স্বাভাবিক ভাবেই তাদের খাবার অনেক ঝাল। 

ভুটানের লোকেদের তাদের মূল খাবার ভাত। এছাড়াও তারা গরু, মুরগি, মাছ, সবজি, ডাল খায় আমাদের মতই তবে ঝাল অনেক বেশি দিয়ে।  তাদের জনপ্রিয় খাবারের মধ্য রয়েছে রেড রাইস,মোমো, এমা দাশি ও জাশসা মারু।



ভুটান উন্নত দেশ না হয়েও নিজেদের লক্ষ সামনে রেখে কাজ করে চলেছে তাদের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য। যেটা সত্যি প্রশংসনীয়। নিজেদের পরিশ্রম নিজেস্ব পরিকল্পনা লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষায় ভুটান সারা বিশ্বের কাছে রোল মডেল হতে পারে। ধরিত্রী দিবসের মূল গুরুত্ব সামনে রেখে কাজ করে যাওয়া জাতি হচ্ছে ভুটান। নৈসর্গিক সৌন্দর্য  আর পরিবেশকে সাথে নিয়ে  দেশটি ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

This is a Bangla Article. Here, everything is written about the carbon negative of Bhutan

All links are hyper linked.

Feature image taken from Google

Total
0
Shares
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Article

সৌরজগতের সীমানা ও সূর্যের প্লাজমার আদ্যোপান্ত

Next Article

কিভাবে এলো আজকের সাবমেরিন?

Related Posts

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এবং মোহসিন ফখরিযাদে

সূচিপত্র Hide ক্যারিয়ারজাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাপারমাণবিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণপারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি (২০০৭-২০২০)মৃত্যু মোহসিন ফখরিযাদে। ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী। মনে করা হতো…
আরও পড়ুন

পাইলট থেকে ট্রাক ড্রাইভার-এয়ারলাইন ক্যারিয়ার কোভিড-১৯ মহামারী দ্বারা যে ভাবে ধ্বসে গেলো

এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এবং লাভজনক কর্মজীবনের পথ এখন আর নিশ্চিত নয়। কলিস ওয়াগনার তার ব্যক্তিগত পাইলট লাইসেন্স পেয়েছে।যখন তিনি আর্থিক মন্দার সময় একজন শিল্প প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি হারান, তিনি তার শখ পূরণের জন্য পাইলটে যোগ দেন।যেখানে সে…

মাত্থু ভাডালারা (২০১৯) : সাসপেন্স আর হিউমারের চমৎকার ব্লেন্ডে নির্মিত উপভোগ্য একটি ট্রিপি থ্রিলার

এই মুভির নামের বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘নেশা থেকে বিরত থাকুন’ বা ‘নেশা ছেড়ে দিন’। ‘মাত্থু ভাডালারা’ নামটি পরিচালক…

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন

Total
0
Share