গল্পের বইটি যখন পড়া শুরু করেছি তখন ভাবি নাই যে এক বসায় আমাকে এই বই পড়া শেষ করতে হবে। এতটাই ভালো লাগছিলো যে উপন্যাসের প্রায় প্রতিটি লাইন পড়েই আমি মুগ্ধ হচ্ছিলাম, আর সেই সাথে অনুপ্রাণিত হচ্ছিলাম।
একজন উঠতি বয়সী ছেলের ভালোবাসার বিচ্ছেদ থেকে উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করা আর সেখান থেকে আলোকের পথে আসা। মনের প্রশান্তি খোঁজার জন্য এই বয়স এ গাঁজা, ফেন্সিডিল এর পিনিক সহ বিভিন্ন রকমের মনের খোরাক জোগানো বন্ধুদের আড্ডা ছেড়ে মসজিদের একজন ইমাম সাহেবের সাথে বন্ধুত্ব করা, সত্যিই অনুপ্রেরণা জোগায়।
‘হৃদয় আল্লাহর ঘর। মানুষের হৃদয়টা তৈরি করা হয়েছে এই জন্য যে সেখানে শুধুমাত্র আল্লাহ থাকবেন। সে ঘরে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু ঢুকালেই শুরু হবে তোমার জাগতিক অশান্তি’
‘তোমার হাতে তোমার কোনো প্রিয় জিনিসই নিরাপদ নয়। যেকোনো সময়ে সেটা কেড়ে নেওয়া হবে, এমনকি তোমার প্রিয় জীবনটাও। তাই শিক্ষা হলো, যা পেয়েছ তার জন্য এত উল্লাসের কিছু নেই, যা হারিয়েছ তার জন্য এত বিষাদের ও কিছু নেই’
‘ ভালোবাসা এক ধরনের অভ্যাস, দেখ না সিগারেট ছাড়তেও মানুষের কত কষ্ট হয়। তাই বিচ্ছেদের কথা মাথায় রেখেই ভালোবাসতে হবে, এই জন্য আমাদের ধর্মে বারবার মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে বলা হয়। এই মৃত্যু মানেই বিচ্ছেদ। সুখের সময় আমরা বিচ্ছেদের কথা পুরোপুরি ভুলে যাই। তখন সেই সুখটা সিগারেটের মতো অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়’
‘ এই সসীম মহাবিশ্বের ভিতরে একটা অসীম বস্তু আছে, সেই অসীম বস্তুর নাম হৃদয়। এই জন্য বলা হয় অন্তরের চাহিদা অসীম। এই অসীম অন্তর বা হৃদয় সৃষ্টি করা হয়েছে এক অসীম সত্তার জন্য, সেই অসীম সত্তার নাম- আল্লাহ।’
‘ যে দোয়া কবুল হয় সে দোয়া প্রার্থনাকারী কে স্পর্শ করে ‘
‘ইমান শুরু হয় অন্তর থেকে, পরে দেহের বাইরে ইসলাম রূপে সেটা প্রকাশ পায়। ইসলাম শুরু হয় বাইর থেকে পরে অন্তরে প্রবেশ করে সেটা পূর্ণতা পায়। তুমি দেখতে যেমনই হও না কেন, তোমার কর্মটাই ইসলাম।’
‘ব্যক্তি শুদ্ধ হলে সমাজ শুদ্ধ হবে, সেই শুদ্ধ ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র তৈরি করলে সেটা হবে কল্যাণ রাষ্ট্র। তেমন কল্যাণ রাষ্ট্র তার নাগরিকের জন্য যেমন উপকারী তেমনি বাদবাকি পৃথিবীর জন্যও উপকারী।’
পুরো বই জুড়ে এরকম অনেক সুন্দর অনুপ্রেরণামূলক কথা আছে যা সত্যিই ভাবতে শিখাবে তরুণ সমাজকে জীবনের মূল্যবোধ বুঝতে।
ছেলেটি যখন ইমাম সাহেবের এরকম অনুপ্রেরণামূলক কথা শুনে ইসলাম সম্পর্কে বুঝতে পারে, সে বুঝে এটা শুধু ধর্ম নয়, এটা আইডিওলজি। তখন তার ইচ্ছা হয় দুনিয়া ঘুড়ে দেখার। আর সেই ইচ্ছায় তৈরি হয় পাকিস্তানের লাহোরে তাবলীগী ইজতেমায় যাওয়ার। সেখান থেকে আফগানিস্তানে আল্লাহর পথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা, তালিবানদের সম্পর্কে জানা, যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুর পথ থেকে ফিরে আসা। সে খুঁজে পায় এক নিরাপদ পারিবারিক জীবন, যেখানে তার দেখা মেলে ভালোবাসার আসমান, যার সিদ্ধান্ত সে নির্দ্বিধায় আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়। কারন সে বিশ্বাস করে তার যা প্রয়োজন সেটা তার চেয়ে আল্লাহ বেশি ভালো জানেন। এরপর নিউইয়র্ক এর টুইন টাওয়ারের দুর্ঘটনা, যার কারনে আফগানিস্তান এ এবং তার নতুন পরিবার এর উপর হামলা, এরপর ছেলেটির উপর অমানুষিক নির্যাতন কিউবা এর গুয়ান্তানামো কারাগারে বন্দী সেলে। সবকিছু মিলিয়ে সাজানো পুরো উপন্যাসটি এক অন্যরকম অণুপ্রেরণা জোগায়।
অনেক ধন্যবাদ লেখক লতিফুল ইসলাম শীবলী এতো সুন্দর উপন্যাস আমাদের উপহার দেয়ার জন্য।
This is a Bengali Article. It’s a book review of “ASMAN“
All links are hyperlinked
Featured image taken fromGoogle