লিখুন
ফলো

এরদোয়ান: রুটি বিক্রেতা থেকে মুসলিম বিশ্বের নেতা

‘ইউরোপের রুগ্ন দেশ’ তুরস্ক এখন অনেকটাই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। একুশ শতকের সূচনা থেকেই জ্ঞান-বিজ্ঞান, সামরিক শক্তি, অর্থনীতি এবং কৌশলী পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বের বুকে পুনরায় মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে অটোমান সাম্রাজ্যের উত্তরসূরীরা। খেলাফত হারানোর প্রায় একশো বছর পর পরাশক্তি হওয়ার দৌড়ে তুরস্কের অবস্থান এখন অনেকটাই সুসংহত। মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যেও এই দেশটি নেতৃত্বে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর এসব অবদানের পেছনে কলকাঠি যিনি নাড়ছেন, তিনি হলেন সেদেশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রেজেপ তায়্যিপ এরদোয়ান।

বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের তালিকায় এরদোয়ানের নাম উপরের দিকেই থাকবে। প্রায় দুই দশক ধরে তুরস্কের রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন তিনি। বিভিন্ন ইস্যুতে এই ব্যক্তি যেমন ভূয়সী প্রশংসায় ভেসেছেন তেমনি অনেক সময় সামাল দিয়েছেন সমালোচনা আর নিন্দার ঝড়ও। চলুন ‘গ্যালাপ ইন্টারন্যাশনাল’ এর জরিপে সবচেয়ে জনপ্রিয় মুসলিম নেতা খ্যাত তুর্কি প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে কিছু জানার চেষ্টা করি।

প্রাথমিক জীবন

ইস্তানবুলের কাছিমপাশাতে ১৯৫৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রেজেপ তায়্যিপ এরদোয়ান জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন পেশায় একজন জাহাজের ক্যাপ্টেন। আরবিতে তখন ছিল ‘রজব’ মাস। তাই তার নাম রাখা হয় রেজেপ (তুর্কি ভাষায় ‘রজব’ কে ‘রেজেপ’ বলা হয়), দাদার নাম তায়্যিপ এফেনদির থেকে নেয়া হয় ‘তায়্যিপ’ আর বংশীয় উপাধি ‘এরদোগান’ যোগ হয়ে নাম দাঁড়ায় ‘রেজেপ তায়্যিপ এরদোয়ান’। পাঁচজন সহোদরের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।

শৈশবে এরদোয়ান; image: uk.history

এরদোয়ানের লেখাপড়ার হাতেখড়ি শুরু হয় পিয়ালেপাশার প্রাইমারি স্কুলে। ১৯৬৫ সালে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ভর্তি হন ইমাম হাতিব স্কুলে। এই স্কুলে এরদোয়ান উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশুনা করেন।

১৯৭৩ সালে এরদোয়ান বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অর্থনীতি ও ব্যবসা শিক্ষা ইন্সটিটিউটের জন্য নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে এই প্রতিষ্ঠানটি মারমারা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও প্রশাসনিক অনুষদকে বিজ্ঞান অনুষদ হিসেবে পরিবর্তন করা হয়। এরদোয়ান ১৯৮১ সাল পর্যন্ত এখানে পড়ালেখা শেষ করে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হন।



রুটি, শরবত ও লেবু বিক্রেতা

সে সময় এরদোয়ানের পরিবারের আর্থিক অবস্থা যে খুব বেশি ভালো ছিল তা নয়। এর মাঝে সদস্য সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। কী আর করা যায়! ছুটির দিনগুলোতে তিনি বাজারে বেরিয়ে পড়তেন। সিমিট (তুরস্কের রাস্তায় বহুল বিক্রিত প্রসিদ্ধ রুটি) এবং লেবুর শরবত বিক্রি করতেন। এখান থেকে যা মুনাফা আসত তা দিয়ে পরিবারকে সহায়তার পাশাপাশি স্কুলের বেতন পরিশোধ করতেন।

image: uk.history

ছোটবেলা থেকেই তার বই পড়ার প্রতি তীব্র নেশা ছিল। শরবত ও রুটি বিক্রির কিছু টাকা জমিয়ে ব্যক্তিগত পাঠাগারের জন্য বই কিনতেন তিনি। সে সময় থেকেই গড়ে উঠতে থাকে তার সখের ব্যক্তিগত পাঠাগার। যার ফলে কলেজ জীবনে পা রাখার আগেই তৈরি করে ফেলেন মোটামুটি বড়সড় একটি ব্যক্তিগত গ্রন্থশালা।

স্কুল জীবন থেকেই তিনি ফুটবল মাঠের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন। মহল্লার ফুটবল টিমের খেলার মাধ্যমেই হাতেখড়ি। মাত্র ১৪ বছর বয়সে কাছিমপাশা জামিয়াল্টি ক্রীড়া ক্লাবের সদস্য হিসেবে তিনি বেশ নামকরা ফুটবলারে পরিণত হন। জামিয়াল্টি থেকে ইস্তানবুলের অন্যতম প্রসিদ্ধ টিম আইইটিটির এর ফুটবল টিমে দীর্ঘদিন খেলেছেন। আইটিটিতেই উনার প্রফেশনাল ফুটবল খেলা শুরু হয়। যেটাকে তার জীবনের প্রথম চাকরিও বলা যেতে পারে।



আইইটিটির কয়েকটি ম্যাচের ক্যাপ্টেন হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তী সময়ে ফুটবল মাঠে তার ক্রীড়া শৈলীতে মুগ্ধ হয়ে ইস্তানবুল ফুটবল ক্লাব তাকে আমন্ত্রণ জানায়। এক পর্যায়ে তিনি জাতীয় যুব ফুটবল ক্লাবের খেলোয়াড় হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার সুযোগ পান। কিন্তু অভিভাবক হিসেবে পিতার স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক হওয়ায় বিপত্তিতে পড়েন এরদোয়ান। তার বাবা আহমেদ এরদোয়ান স্পষ্টই জানিয়ে দেন যে- তিনি তাকে লেখাপড়া করে বড় করতে চান, খেলোয়াড় হিসেবে নয়।

ফুটবলার এরদোয়ান; image; daily sabah

এরপর তিনি তুরস্কের অন্যতম প্রসিদ্ধ ফুটবল ক্লাব এসকেশিহির ও ফেনারবাহচে ফুটবল ক্লাব থেকে আমন্ত্রণ পেলেও বাবার অস্বীকৃতির কারণে আর খেলতে পারেননি।

মূল রাজনীতিতে এরদোয়ান 

১৯৮৯ সালে তুরস্কের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বেইয়্যুলু পৌরসভার মেয়র নির্বাচনের মাধ্যমে এরদোয়ানের সফল রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়। এরপর ১৯৯১ সালে তুরস্কের সাধারণ নির্বাচনে ড. নাজিমুদ্দিন এরবাকানের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল রেফা পার্টি থেকে এরদোয়ান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৪ সালের ২৭ মার্চ তুরস্কের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এরদোয়ান রেফা পার্টি থেকে ইস্তানবুলের মেয়র পদে নির্বাচন করেন এবং জয়লাভ করেন।



এরদোয়ান দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার পাশাপাশি সেরা বক্তাও ছিলেন। ১৯৯৭ সালের অভ্যুত্থানের পর তিনি অনেকগুলো সমাবেশে উপস্থিত থেকে নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে বক্তব্য রেখেছেন। ১৯৯৭ সালের ১২ ডিসেম্বর এমনি একটি সমাবেশ হয়েছিল তুরস্কের শির্ট শহরে, যেখানে এরদোয়ান আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন।

এরদোয়ান সেদিন এক ঐতিহাসিক বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেই বক্তব্যে তুরস্কের অন্যতম ইসলামী জাগরণী কবি জিয়া গোকালপ-এর ‘সৈন্যদের দোয়া’ (যে কবিতা জিয়া গোকালপ ১৯১২ সালে বালকান যুদ্ধের সময় লিখেছিলেন) কবিতার কয়েকটি লাইন আবৃতি করেন-

‘মিনার আমাদের বেয়নেট
গম্বুজ আমাদের শিরস্ত্রাণ
মসজিদ আমাদের ব্যারাক
মুমিনরা আমাদের সৈনিক।’

এ কবিতার কয়েকটি লাইনই যে এরদোয়ানকে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে ঠেলে দিবে, আবার এই কবিতাই যে একসময়ে তাকে তুরস্কের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত করবে, সেটা তখন কে জানত!

image: getty image

জিয়া গোকালপের এই কবিতা আবৃতির কারণে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে এরদোয়ানের নামে দিয়ারবাকের কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। তুরস্কের পিনারহিসার জেলখানায় ১২০ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর ১৯৯৯ সালের ২৪ জুলাই তিনি মুক্তি লাভ করেন।

একে পার্টি গঠন

২০০১ সালের ১৪ আগস্ট তুরস্কের ৩৯ তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আদালত ও কালকিনমা পারটিসি বা একে পার্টি (জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি) গঠিত হয়। আর এরদোয়ানকে করা হয় নবগঠিত পার্টির চেয়ারম্যান। একের পর এক একে পার্টির সাফল্য এরদোয়ানকে এনে দিতে থাকে তুমুল জনপ্রিয়তা। একে পার্টি গঠনের মাত্র ১৪-১৫ মাসের মাথায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে।



এরদোয়ানের উপর রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন করতে পারেননি। সেই জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ ছিলনা। পরবর্তীতে এরদোয়ানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। অবশেষে ১৪ই মার্চ, ২০০৩ সালে তুরস্কের ২৫ তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রেজেপ তায়্যিপ এরদোয়ান শপথ গ্রহণ করেন। এর ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে তুরস্কের ১২তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ করেন এরদোয়ান।

১৫ই জুলাইয়ের অভ্যুত্থান

ফেতুল্লাহ গুলেনের নেতৃত্বেই ১৫ই জুলাই ২০১৬ এর সামরিক অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছিল। কিন্তু সেই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়। সেদিনের অভ্যুত্থান তুর্কি জনগণ রুখে দিয়েছিল। মোবাইল ফোনের অ্যাপসের মাধ্যমে সেদিন এরদোয়ান জনগণের প্রতি এক ঐতিহাসিক আহবান জানান। যার সারকথা ছিল এমন-

আজকের অভ্যুত্থান সামরিক বাহিনীর একটি অংশের বিদ্রোহ। আমি মনে করি, জনগণ এই ষড়যন্ত্রের উত্তম জবাব দিবে। জনগণের টাকায় কেনা ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার নিয়ে জনগণের ওপর হামলার খেসারত তাদের দিতে হবে। আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিব। শক্তভাবে ময়দানে দাঁড়াব। সন্ত্রাসীদের হাতে দেশ ছেড়ে দেব না। আমি জনগণকে আহবান করছি। সবাইকে ময়দানে আসতে আদেশ দিচ্ছি। গুটিকতক বিদ্রোহীরা যা নিয়ে আসুক না কেন, আমরা শক্তভাবে জবাব দেব। জনগণের চেয়ে বড় শক্তি আমি আজ পর্যন্ত দেখিনি।

এরদোয়ানের সেই ডাকে তুর্কি জনতা সাঁড়া দিয়েছিল। সেদিনের সেই সামরিক অভ্যুত্থান এরদোয়ান দক্ষতার সাথে নস্যাৎ করে দেন। তাতে ক্ষমতার ওপর এরদোয়ানের অবস্থান আরো শক্ত হয়েছে।

image: getty image

অভ্যুত্থানের পর এক বিতর্কিত গণভোটের মাধ্যমে সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি বাতিল করেন তিনি। প্রতিষ্ঠা করেন প্রেসিডেন্ট শাসিত গণতান্ত্রিক সরকার। এতে করে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত হয় প্রেসিডেন্টের হাতে। ২০১৮ সালে ফের ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রীর পদ বাতিল করে সেদেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। 

মুসলিম বিশ্বে এরদোয়ানের প্রভাব

পূর্ববর্তী সরকারগুলোর সময় তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম দেশগুলোকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। একই সাথে পাশ্চাত্যের দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। তুরগুত ওযেল ক্ষমতায় আসার পর এ নীতির কিছুটা পরিবর্তন হয়।



২০০২ সালে ক্ষমতায় বসার পর এরদোয়ান বিভিন্ন মুসলিম দেশে সফর করেন। এ সময় ইরাক, ইরান ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করতে থাকেন।

মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে তুরস্ক যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ভালো সম্পর্কে বজায় রেখেছে। পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া এই তিনটি দেশ এখন তুরস্কের অন্যতম বিশ্বস্ত বন্ধু এবং অংশীদার। আরব বিশ্বের দেশগুলোতেও তুমুল জনপ্রিয়তা রয়েছে এরদোয়ানের।

image: getty image

২০১৯ সালে বিবিসি আরবি বিভাগ কর্তৃক একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং ফিলিস্তিনসহ ১০টি দেশে ২৫ হাজারের বেশি মানুষ এই জরিপে অংশগ্রহণ করে। বিশ্বনেতাদের মধ্যে জনপ্রিয়তার প্রশ্নে এরদোয়ান প্রায় ৫০ শতাংশের অধিক ভোট পান। যেখানে এরদোয়ানের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তার ধারের কাছেও ছিল না।

বর্তমানে সিরিয়ার সাথে তুরস্কের সম্পর্ক ভালো নয়। সিরিয়ার ভূখণ্ড আগ্রাসনের কারণে এরদোয়ান বেশ সমালোচিত হন। এই কারণে সিরিয়ার সাথে তুরস্কের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে। বিশেষ করে কুর্দি ইস্যুতে একাধিকবার তুরস্ক সিরিয়ার সাথে সংঘাতে জড়ায়।

আরো পড়ুনঃ

দেশে দেশে বোরকা ও আযান নিষিদ্ধের গল্প

অপারেশন সূর্য দীঘল বাড়ী: কল্পনাকেও হার মানায় যে কমান্ডো অভিযান

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি ভ্যাক্সসিন ফাইজার এবং মোডের্না কোম্পানির ইতিহাস



যে বিষয়গুলো নিয়ে এরদোয়ানের সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয় তার মধ্যে একটি হলো ইসরায়েল-তুরস্ক সম্পর্ক। ১৯৪৯ সালে ইসরায়েলকে মুসলিম দেশ হিসেবে তুরস্ক সর্বপ্রথম স্বীকৃতি প্রদান করে। বর্তমানে এরদোয়ান সরকার ক্ষমতায় আসার পরও এই সম্পর্ক অব্যাহত রয়েছে।

তবে এরদোয়ানকে বিভিন্ন সময় ইসরায়েলের প্রতি কঠোর অবস্থান নিতেও দেখা গেছে। বিশ্ব অর্থনীতিক ফোরামের এক প্যানেল আলোচনায় ইসরায়েলকে খুনি হিসেবে আখ্যা দেন তিনি এবং ঐতিহাসিক ‘ওয়ান মিনিট’ ঘটনার জন্ম দেন। এতে করে ইসরায়েলের সাথে তুরস্কের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে। তারপর ২০১০ সালে ‘মাভি মারমারা’ ঘটনা ঘটে।

মুসলিম বিশ্বে তুখোড় জনপ্রিয় এই নেতাকে উইঘুর ইস্যুতে নিশ্চুপ থাকতে দেখা গেছে। সভ্য দুনিয়ায় উইঘুরদের উপর যখন চীনের বিরুদ্ধে অসভ্য ও বর্বরোচিত নির্যাতনের অভিযাগ উঠেছে তখন চীনের সাথে সুম্পর্ক বজায় রেখেছেন এরদোয়ান সরকার। চীন থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে তুরস্কে আশ্রয় নেওয়া স্বজাতি উইঘুরদেরও চীনের হাতে তুলে দিয়েছে তুরস্ক।

এমনকি তুর্কি পার্লামেন্টে পূর্ব তুর্কিস্তানের অবস্থা অনুসন্ধানের  প্রস্তাব তোলা হলেও এরদোয়ানের একে পার্টি বিপক্ষে ভোট দিয়ে তা বানচাল করে দেয়। 



ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বাণিজ্যিক প্রবেশাধিকার চুক্তি, বিগত দশ বছর ধরে চলাকালীন মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সুদের হার কমানো, উসমানীয় শাসনাধীন দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ও বিশ্বমহলে নেতৃস্থানীয় ও সৌহার্দ্যপুর্ণ সম্পর্ক, বিরোধী বিক্ষোভকারীদের সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ, ইত্যাদি কারণে বিশ্বমহলে তিনি সবচেয়ে বেশি আলোচিত।

একদিকে এরদোয়ানের যেমন জনপ্রিয়তা রয়েছে অন্যদিকে রয়েছে সমালোচনা। তার বিরোধীরা তাকে কঠোর ভিন্নমত দমনকারী নামে আখ্যায়িত করেন। তারা দাবী করেন এরদোয়ান দেশের সংবাদমাধ্যম ও বিচারবিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করছে।

কুর্দি ইস্যুতে এরদোয়ান বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচিত। সিরিয়া ভূখণ্ডে কুর্দি বিরোধী অভিযান তুরস্কের অনধিকারচর্চা বলে ধারণা করেন অনেক বিশ্লেষক। আবার ৩৫ লক্ষ সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া এবং ফিলিস্তিন, কাশ্মীর ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে মুসলিমদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থানের কারণে এরদোয়ানকে মুসলিম বিশ্বের নেতা ভাবতে শুরু করেছেন অনেকেই। 


This is a Bengali article. it about biography of recap tiyyp erdogan.

Featured Image: Daily Sabah

All links are hyperlinked

Total
0
Shares
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Article

দেশে দেশে বোরকা ও আযান নিষিদ্ধের গল্প

Next Article

মঙ্গল গ্রহে পানির খোঁজ

Related Posts

ভিয়েতনাম যুদ্ধ: মার্কিন বাহিনীর পরাজয়ের করুণ ইতিহাস (পর্ব-১)

বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে ভিয়েতনামের স্বাধীনতা সংগ্রাম একটি অন্যতম উল্লেখযােগ্য ঘটনা। ভিয়েতনাম যুদ্ধ ছিল একটি দীর্ঘস্থায়ী বিপ্লবী যুদ্ধ। এই…

দ্য ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন: পশ্চিমা সভ্যতা বনাম ইসলাম

হার্ভাড ইউনিভার্সিটির স্যামুয়েল পি হান্টিংটন। ১৯৯৬ সালে ফরেন অ্যাফেয়ার্সে প্রকাশিত হয় “দ্যা ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন অ্যান্ড দ্যা রিমেকিং অব ওয়ার্ল্ড…

মুসলিম বিশ্বের ব্যতিক্রমী ভাস্কর্য সমূহ

সূচিপত্র Hide উটের ভাস্কর্য, সৌদি আরবদ্য হাংরি হর্স, সৌদি আরবক্রাইস্ট ব্লেসিং, ইন্দোনেশিয়াআরবীয় যুগল, আরব আমিরাতহারসেনিং দ্য ওয়ার্ল্ড, কাতারসালাউদ্দিন…

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন

Total
0
Share