লিখুন
ফলো

কখনো আসেনি (১৯৬১) : পরিচালনায় জহির রায়হান নামক জিনিয়াসের আবির্ভাব

জহির রায়হান নামটি আমাদের জন্য চির আক্ষেপের। যতগুলো অনন্য কাজ তিনি করেছেন, সেগুলোর চেয়েও বেশি আলোচনা হয় তিনি আরো কি কি করতে পারতেন তা নিয়ে৷ তাঁর মূল নামমোহাম্মদ জহিরুল্লাহ।জন্মগ্রহণ করেন তৎকালীন নোয়াখালী জেলার ফেনী মহকুমায় ১৯৩৫ সালের ১৯শে আগস্ট। দেশভাগের পর ১৯৪৭ সালে তিনি পরিবারের সাথে কলকাতা থেকে গ্রামে চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক সম্পন্ন করেন। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি স্বীয় লেখালেখির মাধ্যমে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্যকে। লেখালেখির পাশাপাশি রায়হান নানা পত্রিকায় কাজ করেছেন সাংবাদিক হিসেবে। ১৯৫৫ সালে তাঁর লেখা প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ছোটগল্পের  সংকলন এই গ্রন্থের নাম ছিলোসূর্যগ্রহণ।

১৯৫৭ সালে প্রথমবারের মত তাঁকে সিনেমার সেটে দেখা যায়। এ জে কার্দারের জাগো হুয়া সাভেরানামক উর্দু ভাষার এই সিনেমায় তিনি ছিলেন একজন সহকারী পরিচালক। এটি মুক্তি পায় ১৯৫৯ সালে এবং এটিকে ৩২তম অস্কারে শ্রেষ্ঠ বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র ক্যাটাগরিতে পাকিস্তানের এন্ট্রি হিসেবে পাঠানো হয়। যদিও পরে এটি ঐ ক্যাটাগরিতে নমিনি হতে পারে নি৷ তবে ১ম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এটি স্বর্ণপদক জিতে নেয়।

এরপর পরিচালক সালাউদ্দিনেরযে নদী মরুপথে (১৯৬১)চলচ্চিত্রেও তিনি সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। পরিচালক এহতেশামেরএদেশ তোমার আমার (১৯৫৯)সিনেমায়ও সহকারী পরিচালকের ভূমিকায় দেখা যায় তাঁকে; পাশাপাশি এই সিনেমার টাইটেল গানটিও রচনা করেন তিনি।

জহির রায়হান
Image Source : bangladeshpost.net
এভাবে সহকারী পরিচালক হিসেবে হাত পাকিয়ে ১৯৬০ সালে তিনি নিজের প্রথম ছবি পরিচালনার কাজে হাত দেন জহির রায়হান।কখনো আসেনিনামক এই ছবি মুক্তি পায় ১৯৬১ সালে।

তাঁর এই অভিষেক চলচ্চিত্রটির স্টোরি টেলিং এবং ডিরেকশন দেখে রীতিমত অভিভূত করেছে আমাকে। মানে গত কিছু বছর ধরে বিদেশী পরিচালকদের সিনেমার যেসব বিষয় আমাকে বিমোহিত করেছে, সেসব বিষয় মাথায় রেখেই ছায়াছবি নির্মাণ করেছিলেন আমার দেশেরই এক পরিচালক; তাও সেই ষাটের দশকে!

এই সিনেমা দেখার পর স্বল্পায়ু এই পরিচালককে নিয়ে আমারও আক্ষেপের অভাব নেই। বেঁচে থাকলে আরো কত অসাধারণ চলচ্চিত্র বানাতে পারতেন তিনি!

১৯৭২ সালের ৩০শে জানুয়ারী মাত্র ৩৬ বছর বয়সে তিনি তাঁর ভাই প্রখ্যাত লেখক শহিদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে নিরুদ্দেশ হন৷ মিরপুরে পাকিস্তানী বাহিনী বা তাদের দোসররা তাঁকে হত্যা করে।

আসুন এবারকখনো আসেনি (১৯৬১)চলচ্চিত্রটি নিয়ে আলোচনা করি। এটি মুক্তি পায় ১৯৬১ সালের ২৪শে নভেম্বর। আইএমডিবি তে এই মুভির রেটিং ৮.৫। পরিচালনার পাশাপাশি গল্প এবং চিত্রনাট্যেও ছিলেন জহির রায়হান। সিনেম্যাটোগ্রাফি এবং এডিটিং এর কাজ করেছেন কিউ এম জামান। সংগীত পরিচালনায় ছিলেন খান আতাউর রহমান, যিনি আবার মুভিতে লিড রোলে অভিনয় করেছেন।

কখনো আসেনি (১৯৬১)
Image Source : bdfilms.info

খান আতাউর রহমান ছাড়াও এখানে অভিনয় করেছেনসুমিতা দেবী, সঞ্জীব দত্ত, শবনম, কণা, শহীদুল আলম, আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম।

জনরার দিক থেকে এটি আর্ট ফিল্মের ক্যাটাগরিতে পড়ে, এক্সপেরিমেন্টাল আর্ট ফিল্মও বলা যায়। ২ ঘন্টা ২১ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই চলচ্চিত্রটি ইউটিউবে পেয়ে যাবেন।

জহির রায়হান যে তাঁর সমসাময়িকদের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন, এই চলচ্চিত্রটিই তার প্রমাণ। অন্যান্য বেশিরভাগ আর্ট বা এক্সপেরিমেন্টাল সিনেমার মত বাণিজ্যিকভাবে এটিও সফলতা পায় নি। তবে একেবারে আনকোরা বিষয়বস্তু, স্টাইল এবং গল্পের বর্ণনার কারণে সমালোচকরা এই মুভির ব্যাপক প্রশংসা করেন।

সিনেমার একদম শুরুতে আমরা দেখি একটি বাড়ীকে ঘিরে মানুষের জটলা। এখানে তিনটি মৃতদেহ পাওয়া গেছে এবং পুলিশ এসে অনুসন্ধান শুরু করেছে। এরপর পরিচালক ওয়াইড শটে আমাদেরকে দেখান পাশের বাসার বারান্দা থেকে একজন নারী ঐ বাসার দিকে তাকিয়ে আছেন।

তারপরের দৃশ্যে আমরা দেখি একটি পরিবার বাসা বদলের উদ্দেশ্যে মালপত্র নিয়ে ঘোড়ার গাড়ীতে করে চলেছে।

কখনো আসেনি (১৯৬১)এর প্রেক্ষাপট ষাটের দশকের ঢাকা শহর। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের এই শহর এবং সমাজ আস্তে আস্তে নিজেকে চিনতে শুরু করেছে, দাম দিতে শিখেছে কলা এবং বুদ্ধজীবিদের। জহির রায়হান এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তৎকালীন সময়ের বাংলাদেশী সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জীবনাচরণকে তুলে এনেছেন সুনিপুণ দক্ষতায়। এই কাজটি করা এখনকার সময়েও খুব কঠিন৷ তবে তৎকালীন সময়ের টেকনিক্যাল সীমাবদ্ধতার ব্যাপারটি চিন্তা করলে পরিচালক হিসেবে জহির রায়হান কতটা মেধাবী ছিলেন তার পরিচয়ই পাবেন আপনি। কারিগরি দিকটি ভালো হলে এই চলচ্চিত্র হতো আরো প্রাঞ্জল। কিন্তু এই খামতিটুকু সিনেমাটির শৈল্পিক সৌন্দর্যকে একটুও ম্লান করতে পারে নি।

Image Source : bdfilms.info

জহির রায়হান কমিউনিস্ট ভাবধারায় বিশ্বাসী ছিলেন। এই চলচ্চিত্রে তাঁর বিশ্বাসের প্রতিফলন দেখতে পাই আমরা। প্রচুর সামাজিক এবং রাজনৈতিক বার্তায় ভরপুর এই সিনেমা। এখানে পরিচালক মানুষের অধিকার এবং সমতার কথা বলতে চেয়েছেন, দেখিয়েছেন কিভাবে অভিজাত শ্রেণী ক্যাপিটালিজমের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার চালায়। সমাজে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব এবং তাদের ধ্যানধারণার ব্যাপারটিও এখানে উপস্থিত।

খান আতাউর রহমান অভিনীত শওকতচরিত্রটি ঐসময়ে শিল্পীদের জীবন কেমন ছিলো সে সম্পর্কে ধারণা দেয় আমাদের। আমরা দেখি শওকত একজন আধুনিক মন-মানসিকতাসম্পন্ন তরুণ। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সে স্টাইলিশ জ্যাকেটে নিজেকে সজ্জিত করেছে, তার চুল মসৃণভাবে ব্যাক ব্রাশ করা। সে ছবি আঁকে এবং সেগুলোর প্রদর্শনীর আয়োজন করে। সমালোচক এবং সংগ্রাহকরা তার কাজের বেশ প্রশংসাও করে। তাকে বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন ক্যাফেতে বাঙালির চিরন্তন প্রিয় সময় কাটানোর উপায় আড্ডাবাজিতে মেতে উঠতেও দেখি আমরা। মোট কথা, একজন বোহেমিয়ান শিল্পীর যত বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তার সবগুলোই শওকতের মধ্যে উপস্থিত।

মুভিতে শিল্পের সমাদর করা লোকজনের উপস্থিতি সমাজের ঐসকল লোকজনের প্রতিনিধিত্ব করে যারা রুচিতে মননশীল এবং যাদের বিমূর্ত পুলক অনুভবের ক্ষমতা রয়েছে।

তবে মুদ্রার অন্য পিঠও দেখান আমাদেরকে জহির রায়হান। আমরা দেখতে পাই ছবি অঙ্কন করে জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ উপার্জন করতে পারে না শওকত। তাকে আর তার দুই বোনকে তার বাবার পরিমিত আয়ের টাকাতেই জীবনধারণ করতে হয়। বাবার হঠাৎ চাকরি চলে যাওয়া এবং তাঁর মৃত্যু তাদের জীবনে ঠেলে দেয় ঘোর অমানিশায়৷ ইতোমধ্যেই মরিয়মকে ভালোবেসে ফেলা শওকত মুখোমুখি হয় তার স্বপ্ন এবং বাস্তবতার প্রবল টানাপোড়েনের। কল্পনায় সে মরিয়মের সাথে সুখে-শান্তিতে বসবাস করে কিন্তু বাস্তবে নিজের আর দুই বোনের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার সক্ষমতাও তার নেই। মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব ক্রমশ আচ্ছন্ন করে ফেলে তার সত্তাকে। একসময় মমত্ববোধসম্পন্ন শওকতকে আমরা স্বার্থপর হয়ে উঠতেও দেখি। যার ফলে সে তার বোনদের চিরকুটের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়,

এই পৃথিবীতে আমরা সবাই একা। তোমরা তোমাদের পথ খুঁজে নাও, আমি আমার পথে যাচ্ছি।”

শেষ পর্যন্ত চলচ্চিত্রটিতে শওকতের ‘স্বপ্ন’ কি হতে পারতো আর ‘বাস্তবতা’ আসলে কি ঘটে; তার প্রতিনিধিত্ব করে।

Image Source : bdfilms.info

আগেই বলা হয়েছে জহির রায়হান ছিলেন রাজনীতি সচেতন ব্যক্তি, তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে নিপীড়িত মানুষের অধিকারের কথা বলেছেন। ঐসময়ে হওয়া সবগুলো রাজনৈতিক আন্দোলনে তিনি অংশ নিয়েছেন সক্রিয়ভাবে। যার বাস্তবিক প্রমাণ আমরা পাই ৫২’র ভাষা আন্দোলনে প্রথমদিকে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে তাঁর উপস্থিতি থেকে। এই সিনেমায় নিজের রাজনৈতিক বক্তব্যের প্রকাশে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন রুপক বা অ্যালিগরির। এখানে সিম্বোলিজমের মাধ্যমে তিনি তুলে ধরেছে নিপীড়ক এবং নিপীড়িত উভয় সত্তাকেই।

ভালোভাবে চিন্তা করলে আমরা শওকত, তার পরিবার এবং মরিয়মের চরিত্রের মাঝে তৎকালীন সময়ে পাকিস্তানী শাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশীদের সংগ্রামকে খুঁজে পাবো। আর সঞ্জীব দত্তের অভিনয় করা সুলতাননামক আর্ট কালেক্টরের চরিত্রটি পাকিস্তানী শাসকদের প্রতিভূ। তার মতে সে মরিয়মকে অর্জন করেছে। এই  ‘অর্জন’এর পর মরিয়মকে যে জীবনাচরণে অভ্যস্ত হতে হয় আর তার প্রতি সুলতান যে ধরণের আচরণ করে; সেগুলো তৎকালীন সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থারই কার্বন কপি যেন।

শওকতকে সুলতান যখন প্রথমবারের মত নিজের আর্ট কালেকশন দেখাতে নিয়ে যায়, তখন সে জানায় কিভাবে মরিয়মকে তার আগের অবস্থা থেকে ‘মুক্ত’ করে নতুন জীবন দিয়েছে। কিন্তু আমরা মুক্তি বলতে যা বুঝি, আর সুলতান মুক্তি বলতে যা বোঝে তার মাঝে রয়েছে বিস্তর ফারাক।‘মরিয়ম’এবং‘সুলতান’এই দুই চরিত্রের যে মিথস্ক্রিয়া, তাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এবং পাকিস্তানী শাসকদের আচরণের মধ্য ব্যাপক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। কারণ ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের শাসন থেকে পূর্ব পাকিস্তান নিজেদেরকে মুক্ত করেছিলো কিন্তু এই মুক্তির ফলে যে সুবিধা ভোগ করার কথা ছিলো, তা তারা কখনোই পায় নি। পূর্ব পাকিস্তানের যেমন নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার অধিকার ছিলো না, তেমনি মরিয়মেরও তার নিজের জীবনের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ বা নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার ক্ষমতা ছিলো না।

Image Source : bdfilms.info

পরিমিত বেতনে জীবনধারণ করতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যে সংগ্রাম, সেটিও এখানে জহির রায়হান তুলে ধরেছেন নিপুণতার সাথে। শওকতরা চলতো তার বাবার বেতনের টাকায়, একসময় তার বাবা তার চাকরি হারান এবং শেষপর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেন। তখন দুই বোনের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেমে আসে শওকতের কাঁধে। ফলে নিজের বোহেমিয়ান শিল্পী সত্তাকে ভুলে সুলতানকে নামতে হয় কাজের খোঁজে। কিন্তু কিছুতেই কাজ পায় না সে। এর আগপর্যন্ত শওকত ও তার বোনদের মাঝে সম্পর্ক চিরকালীন বাঙালি বড় ভাই- ছোট বোনের সম্পর্কের মত থাকলেও এই পর্যায়ে এসে তার কাছে বোনদেরকে বোঝা বলে মনে হতে থাকে। ফলে বড় ভাই ছোটদের দায়িত্ব নেবে বাঙালি সমাজের এই প্রথার সাথে অমিল দেখতে পাই আমরা। এছাড়া মরিয়মেরও চাওয়া আছে তার প্রেমিকের কাছে। সে চায় নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে শওকত তাকে সুলতানের বন্দীশালা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাক। ফলে উভয়মুখী দায়িত্বের চাপে দিশেহারা শওকত স্বার্থপরের মত আচরণ করতে শুরু করে। আর এভাবেই পুঁজিবাদী সমাজ কিভাবে একজন শিল্পীর সৃজনশীল সত্তাকে ধ্বংস করে সেটি দেখিয়েছেন জহির রায়হান। শওকতের এই আত্মকেন্দ্রিকতার ফলেই জীবন দিতে হয় তার বোনদেরকে। এখানে পুঁজিবাদের ব্যাক্তিবাদি মনোভাবের প্রতি ধিক্কার দিয়েছেন পরিচালক, তিনি বিশ্বাস করতেন মানুষে মানুষে সংহতিতে।

আবার সিনেমার সূচনার দিকে দৃষ্টি ফেরাই। এখানে আমরা দেখি একজন আর্টিস্ট এবং তার দুই বোন মৃত্যুবরণ করেছে। পাশের বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা মরিয়মই সম্ভবত একমাত্র মানুষ যে তাদের মৃত্যুর কারণ জানে। কখনো আসেনি (১৯৬১)চলচ্চিত্রেই এই দিকটি ‘ওপেন টু ইন্টারপ্রিটেশন।’মানে যার কাছে এটি যেরকম অর্থ বহন করে।

শওকতের পরিবারের মৃত্যুর পর আমরা দেখি আরেকটি একই ধরণের পরিবার শওকতরা যে বাসায় থাকতো, সেখানে থাকতে আসছে। আগেরবারের মতই মরিয়ম দাঁড়িয়ে আছে পাশের বাসার বারান্দায়। এটি হয়তোজীবন-চলতে-থাকেএই ব্যাপারটির দিকে জহির রায়হানের ইঙ্গিত। এই মরিয়ম চরিত্রের মাধ্যমে হয়তো তিনি আরো একটি বার্তা দিতে চেয়েছেন৷ সেটি হলো কষ্ট ভোগ করায় অভ্যস্ত হয়ে গেলে একটি সত্তা বা একজন মানুষ তার প্রিয় মানুষকেও কষ্টই দেবে। যদিও এক্ষেত্রে তার বা তার প্রিয় মানুষের কোন দোষ নেই। মূলত প্রতিবাদ না করে নীরবে সব সহ্য করার মানসিকতাসম্পন্ন মানুষের পরিণতি কি হতে পারে তার স্বরুপ আমরা দেখতে পাই মুভির শেষে।

Image Source : bdfilms.info

কখনো আসেনি (১৯৬১) বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এটি দেখে তৃপ্তি লাভের পাশাপাশি অভিভূত হবেন আপনি। কুশীলবদের সবার পার্ফম্যান্সই অসাধারণ। ভালো সংলাপের পাশাপাশি শ্রুতিমধুর কিছু গানসহ এটির মিউজিক আপনার সিনেমা দেখার এক্সপেরিয়েন্সকে করবে আরো সুন্দর। স্টাইল এবং বিষয়বস্তুর পাশাপাশি এই মুভিতে ছিলো গুরুত্বপূর্ণ বার্তা এবং মানুষকে ভাবানোর উপকরণ৷ সিনেমাপ্রেমী হলে এটা অবশ্যই দেখা উচিত। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে যে ‘সোনালী অতীত’টার্মটি ব্যবহৃত হয়, সেটি কেন ব্যবহৃত হয় তার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ এই চলচ্চিত্র।

 

আরো পড়ুনঃ

দ্যা বার্ডস (১৯৬৩): আলফ্রেড হিচককের অ-হিচককীয় সিনেমা

দ্যা বার্ডস (১৯৬৩) : আলফ্রেড হিচককের অ-হিচককীয় সিনেমা

কাগজ (২০২১): সিস্টেম বনাম মানুষের চিরচেনা গল্প

কাগজ (২০২১) : সিস্টেম বনাম মানুষের চিরচেনা গল্প

 

 

This is a Bangla article. The article is about the Bangla language film Kokhono Asheni (1961) of then East Pakistan.

All the necessary links are hyperlinked.

Featured images are collected from Google.

 

Total
0
Shares
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Article

হঠাৎ মানুষ বিলুপ্ত হয়ে গেলে কী ঘটবে পৃথিবীতে?

Next Article

পাস্তাঃ যে খাবার ছাড়া ইতালিয়ানরা এক প্রকার অসম্পূর্ণ

Related Posts

দ্যা বার্ডস (1963) : আলফ্রেড হিচককের অ-হিচককীয় সিনেমা

সিনেফাইল অথচ আলফ্রেড হিচকককে চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বিশ্ব চলচ্চিত্র যাঁদের দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত…

দ্যা ম্যান্ডালোরিয়ান সিজন ২: কেমন ছিল বেবি ইয়োডাকে নিয়ে ডিন জারিনের নতুন অ্যাডভেঞ্চার?

গল্পের মূল নায়ক ম্যান্ডালোরিয়ান ডিন জারিন একজন বাউন্টি হান্টার। নতুন বাউন্টি নিয়ে সে যখন নাভারো প্ল্যানেটে ফিরে আসে…

বয়েজ অ্যান দ্যা হুড (1991) : আমেরিকান পপ কালচার বদলে দেয়া কামিং-অফ-এইজ ফিল্ম

বয়েজ অ্যান দ্যা হুড (১৯৯১) একটি আমেরিকান কামিং-অফ-এইজ হুড ড্রামা ফিল্ম। হুড ফিল্ম বলতে ঐ জনরাকে বোঝানো হয়…

ডু দ্যা রাইট থিং (1989) : স্পাইক লির ম্যাগনাম ওপাস যা তিন দশক পর এখনও প্রাসঙ্গিক

“কি রকম গরম পড়ছে দেখতে পাচ্ছো? এরকম গরম পড়লে তো দুই গোলার্ধের বরফসহ পুরো দুনিয়াই গলে যাবে!”  স্যাল’স…

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন

Total
0
Share