ফাইজার কোম্পানি
মানব দেহে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে যে টিকা বা ভ্যাক্সসিনগুলো গ্রহণ যোগ্যতা পেয়েছে তার মধ্যে ফাইজার প্রথম সারিতে। ফাইজার কোম্পানি নিউ ইয়র্কের একটি বিখ্যাত ফার্মেসি ভিত্তিক কোম্পানি। এটি সাধারণত বেশ নামডাক পেয়েছে তাদের কিছু পণ্য যেমন Advil, Viagra, Xanax এবং Zotoloft এর জন্য। ২০২০ সালে এটি ওষুধ কোম্পানি হিসেবে দ্বিতীয় বৃহত্তম আয়ের কোম্পানি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন ফাইজার কোম্পানিকে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরির অনুমোদন দিয়েছে। চার্লস ফাইজার এবং তার এক কাজিন চার্লস এরহারট মিলে ১৮৪৯ সালে এই কোম্পানির আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন।
এর আঁতুড়ঘর ছিল চার্লস ফাইজারের প্রথম বাড়ি ব্রকলিনে। শুরুতে এই কোম্পানিটি একটি অতি সূক্ষ্ম রাসায়নিকের প্রস্তুতকারক হিসেবে কাজ করেন। এটি একটি বিল্ডিঙের বাইরে কাজে লাগানো হয়েছিলো। আস্তে আস্তে কোম্পানিটির প্রসার বাড়তে থাকলে ১৮৬৮ সালে পুরো কোম্পানিটিই ম্যানহাটনে চলে আসে। এবং পরবর্তীতে ১৮৮২ সালে শিকাগোতে তাদের আরেকটি শাখা খোলা হয়। বেশ সফলতা অর্জনকারী কোম্পানিটির একেবারে প্রথম সফল পণ্য হিসেবে ছিল কৃমি নিরাময় এবং স্যান্টনিন। বর্তমানে ফাইজার কোম্পানিটি ভিটামিন সি উৎপাদনের শীর্ষে আছে। ঠাণ্ডা, স্কার্ভি ইত্যাদি রোগের জন্য আমাদের ভিটামিন সি গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে। ১৯৫২ সালে এই কোম্পানিটি নতুন আটটি আন্তর্জাতিক স্থানে স্থানান্তরিত হয়। এটি ওষুধ কোম্পানির পাশাপাশি একটি সফল কৃষি বিভাগ খুলে যা পরবর্তীতে সেটি পশু বিভাগ হিসেবেই পরিচিতি লাভ করে। আশ্চর্যজনক একটি তথ্য হচ্ছে, ফাইজার কোম্পানিটি সাইট্রিক এসিড আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছিলো যা ব্যবহৃত হ্য পেপসিতে। এই এসিডের নানান ব্যবহার রয়েছে। বলা যায়, তাদের এই আবিষ্কারের পর বেশ কিছু জিনিস সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।
ফাইজারের পণ্যসমূহ
এসব পণ্যের পাশাপাশি সম্প্রতি কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় ফাইজার কোম্পানি। এটি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। জানা যায়, এই নিয়ে প্রায় ৬৬টি টিকা রয়েছে যার মধ্যে ১৭ টি প্রথম সারিতে ট্রায়ালে ছিল। বাকি ২৩ টি ১ম-২য় সারিতে, ৬ টি ২য় সারিতে এবং ২০ টি তৃতীয় সারিতে অবস্থান করেছে।
মডার্না কোম্পানি
এটি একটি ওষুধ এবং জৈব প্রযুক্তির একটি অসাধারণ কোম্পানি যা ক্যামব্রিজে অবস্থিত। সাধারণত ওষুধের আবিষ্কার, উন্নতি এবং ভ্যাকসিন টেকনোলোজির দিকেই এদের বেশি শ্রম দিয়ে থাকে। এদের সকল কাজ RNA এর উপর ভিত্তি করে করা হয়ে থাকে। কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন নিয়ে যখন সারা বিশ্বে উত্তাল চলছে তখন নভেম্বরে কোম্পানিটি ঘোষণা দেয় যে তারা তৃতীয় পর্যায়ের একটি পরীক্ষায় কোভিড-১৯ প্রতিরোধে প্রায় শতকরা ৯৪ শতাংশ কার্যকরী এক ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে যার ব্যবহার সম্পর্কে প্রাথমিক প্রমাণও দেখিয়েছে।
২০১০ সালে স্টেম সেল নামক এক জীববিজ্ঞানী ডেরিক রজির করা এক গবেষণাকে বাণিজ্যিকীকরণের জন্য মডার্না থেরাপিউটিক্সটি গঠন করেছিলো। ২০১৩ সালে মোডের্না এবং এস্ট্রাজেনেকা ক্যান্সার, বিপাকীয় রোগের চিকিৎসার জন্য এমআরএনএ আবিষ্কার, এর বিকাশ এবং বাণিজ্যের জন্য পাঁচ বছরের একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। সেই বছরই তাদের দল জানায় তারা ইঁদুরের হার্ট বিষয়ক চিকিৎসার উন্নতি সাধন করে যা তাদের দীর্ঘমেয়াদী ভাবে বেঁচে থাকার জন্য এক বিশেষ কোষের বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। ২০১৮ সালে কোম্পানিটি Moderna Inc হিসেবে পুনরায় নামবদ্ধ হয়। এটি টিকার প্রতীক এবং এর বিকাশের জন্য পোর্টফোলিও বাড়াতে সক্ষম হন। একটি বিশেষ মাধ্যমে জানা যায়, যদি এই কোম্পানি সফল হয় তবে ওষুধের জন্য এটি এক প্রকার বিপ্লব সৃষ্টি করবে। এটি সকল প্রকার ক্যান্সার থেকে রক্ষা করবে এবং জিকা ভাইরাস থেকেও বেঁচে আসতে সাহায্য করবে।
আরো পড়ুনঃ
স্বর্ণ বাহির করার এটি এম বুথ আছে যে দেশে
বিশ্ব সেরা অনলাইন শপিং সাইট অ্যামাজন সৃষ্টির গল্প
অটোম্যান সাম্রাজ্য এবং তার ইতিহাস
মডার্নার পন্যসমূহ
mRNA-1273
এটি কোভিড-১৯ এর একটি ব্যবহারযোগ্য ভ্যাকসিন তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। সম্প্রতি কোভিড-১৯ এর কবল থেকে রক্ষার জন্য এই কোম্পানি এই ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন। এছাড়া এটি Merck এর সাথে যুক্ত হয়ে ক্যান্সারের ভ্যাকসিন উন্নতির কাজ করে যাচ্ছে।
Plastic Products
বিভিন্ন ভ্যাকসিনের পাশাপাশি কোম্পানিটি সফলভাবে প্ল্যাস্টিক পণ্যেও বেশ উন্নতিসাধন করেছে। বাজারে পাওয়া যাচ্ছে তাদের পণ্য যা নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটায়। প্ল্যাস্টিকের লিটার বক্স, কজি ট্রাভেলিং এর বিভিন্ন পণ্য, পশু-পাখির বিছানা, ডিনার টেবিলের কাটা চামচ পর্যন্ত।
সাধারণত পশু-পাখিদের বিশেষ করে বিড়াল কুকুরদের জন্যে ব্যবহার করার জন্য লিটার বক্স তৈরি করে থাকে এই কোম্পানি। পশুপ্রেমিদের জন্যে এটি অনেকই সহজ করে দিয়েছে। এতে করে ঘর অপরিষ্কার হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। বর্তমানে পশুপ্রেমিদের কাছে এই পণ্যটি সহজলভ্য করে দিয়েছে মোডের্না কোম্পানি। কুকুর বিড়ালদের বিছানা, ঘর ইত্যাদি তৈরিতেও এগিয়ে আছে কোম্পানিটি। আর এইসকল পণ্য এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানানভাবে।
মার্চ ২০২১ সালে কোম্পানিটি প্রথম অংশগ্রহণ করেছে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন এর কাজে সহায়তা করতে। এছাড়া এটি ২০২১ সালে সেরা উদ্ভাবনী কোম্পানি হিসেবে ঘোষিত হয়েছে বলে জানা যায়। সর্বশেষ জানা যায়, শ্যানন ক্লিঙ্গার এখানে যুক্ত হয় কর্পোরেট অফিসার হিসেবে এবং তারা ঘোষণা দেয়, তারা প্রায় ১৩ মিলিয়ন কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন ফিলিপাইনে সরবাহ করবে।
বর্তমানে এই কোম্পানিটিতে অসংখ্য লোক কর্মরত আছেন এবং অর্থনৈতিক ভাবেও বেশ এগিয়ে আছে। নানান কর্মকাণ্ড ছাড়াও তাদের অর্থনৈতিক অবস্থান সাফল্যমণ্ডিত।