লিখুন
ফলো

গত এক মেয়াদে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার যত হাস্যকর কাজ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার এক মেয়াদে অনেক কিছু বলেছেন বা করেছেন যা বই আকারে ছাপা হলে ইতিমধ্যেই পাঠকদের বিনোদনের খোরাক জোগাত। ট্রাম্পের সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা মি. জন বোল্টন বোধ হয় সেই কাজটিই করে দিলেন। জন বোল্টন যে খুব সাধু ব্যক্তি তা কিন্তু নয়। মধ্যপ্রাচ্যসহ সারাবিশ্বে মার্কিন আগ্রাসনের মূল কূটকৌশলী বলা হয় তাকে। বেশ কয়েক মেয়াদ যাবৎ ইউএস প্রেসিডেন্টগুলোর মাথা বিগড়ে দেওয়ার কাজটা বেশ দক্ষতার সাথেই পালন করে আসছিলেন তিনি। কিন্তু চাকরীচ্যুত হয়ে বেচারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাস্যকর কাজ-কারবারের ফিরিস্তি নিয়ে স্বাস্থ্যবান একটি বই লিখে ফেলেছেন তিনি

ডোনাল্ড ট্রাম্প বেচারা জন বোল্টনকে চাকরীচ্যুত করার সময় অবশ্য কম কথা শোনায়নি। সে সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প, জন বোল্টনকে বলেছিলেন তিনি একজন “অদক্ষ” এবং “পাগলা বোকা বুড়ো”। এছাড়া আরো বলেছিলেন “জন বোল্টন যুদ্ধ বাধাতে খুবই পছন্দ করে”।

 

জন বোল্টন
জন বোল্টন; image: Getty image

সেই অপমানের প্রতিশোধ নিতেই হয়তো জন বোল্টন এবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু হাস্যকর বিষয় নিয়ে একটি বই লিখে ফেলেছেন। যা রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী। “দ্য রুম হোয়্যার ইট হ্যাপেন্ড” নামক এই বইয়ে আলোচিত কয়েকটি হাস্যকর বিষয় হলো,,

  • ডোনাল্ড ট্রাম্প জানতেন না যে, যুক্তরাজ্যের পারমাণবিক অস্ত্র আছে

জন বোল্টন তার বইয়ের একটি অংশে বলেছেন,

২০১৮ সালে ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সাথে এক বৈঠকে কথা বলার সময়, যেখানে একজন কর্মকর্তা ব্রিটেনকে পরমাণু শক্তিধর দেশ বলে উল্লেখ করেন।

তখন নাকি বেচারা ট্রাম্প উত্তরে বলেছিলেন: “ওহ আচ্ছা,, আপনার দেশে পরমাণু অস্ত্র আছে বুঝি?”

জন বোল্টনের মতে, ট্রাম্প মজা করে একথা বলেনি। বরং সে না জেনে শিশুসুলভ প্রশ্ন করেছিলেন। একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানতেন না যে ব্রিটেন পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র। এটি শুধু হাস্যকর নয় বরং লজ্জাজনকও বটে।

  •  ট্রাম্প ভেবেছিল ফিনল্যান্ড রাশিয়ার অংশ

ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে এক বৈঠকের আগে, ট্রাম্প জিজ্ঞেস করেছিল যে ফিনল্যান্ড, “রাশিয়ার একধরনের উপরাষ্ট্র” কিনা। এতে হলঘরে হাস্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হলেও সবাই মুখ চেপে হাসি থামিয়ে রাখেন।

ডোনাল্ট ট্রাম্প ভাবতেন ফিনল্যান্ড রাশিয়ার অংশ; image: ABC News

মূলত ফিনল্যান্ড একটা স্বাধীন দেশ। ইউরোপের উত্তরে বাল্টিক সাগর পাড়ের এই দেশটি পৃথিবীর অন্যতম সুখি দেশ। মজার ব্যাপার হলো, রাশিয়ার সাথে সীমান্ত থাকলেও এই দেশটি কখনই রাশিয়ার অধীনে ছিল না। এমনকি সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশও ছিল না। কিন্তু একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেচারা ট্রাম্প এইটা জানতেন না। যেহেতু রুশ সরকার ফিনল্যান্ডে ট্রাম্পকে বৈঠকের আহবান জানিয়েছিলেন, তাই তিনি ধরেই নিয়েছিলেন যে ফিনল্যান্ড বোধ হয় রাশিয়ার অংশ।

  • নির্বাচনে আবারও জয়লাভের জন্য চীনের সাহায্য চেয়েছিলেন

জন বোল্টন তার বইয়ে লিখেছেন,

চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর সাথে এক বৈঠকে ট্রাম্প হঠাৎ কায়দা করে আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে ফেললেন, চীনের বিরাট অর্থনীতির প্রশংসা করলেন এবং মি. শি-কে অনুরোধ করলেন তার জেতা তিনি যেন নিশ্চিত করেন।

শি জিনপিংয়ের সাথে ট্রাম্প; Image: CCTV News

অথচ বাহ্যিকভাবে আমরা দেখতে পায় যে চীনের সাথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেশ বিতণ্ডতায় জড়িয়েছেন। চীনের সাথে শুরু করেছেন বাণিজ্য যুদ্ধ।

  • উইঘুরে মুসলিম বন্দিশিবির তৈরি করা চীনের ঠিক কাজ ছিল

হোয়াইট হাউজ থেকে একাধিকবার উইঘুরে মুসলিম বন্দিশিবির তৈরির সমালোচনা করা হয়েছে, এমনকি মি. ট্রাম্প নিজেই এই সমালোচনা করেছেন। নিন্দা করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এরও।

কিন্তু বোল্টন তার বইয়ে লিখেছেন,

বৈঠকের এক পর্যায়ে শি জিনপিং যখন ওই শিবির গঠনের পেছনে তার যুক্তি তুলে ধরেন, তখন বেচারা ট্রাম্প বলে বসেন, তিনি চীনের পদক্ষেপ সমর্থন করেন। মি. বোল্টন লিখেছেন, “আমাদের যে দোভাষী, তিনি বলেন, মি. ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল, চীনের উচিত শিবিরগুলো তৈরির কাজে এগিয়ে যাওয়া। ট্রাম্প মনে করেন এটা একেবারে সঠিক কাজ এবং চীন ঠিক পথেই হাটছে।”

জন বোল্টনের লেখা বই; image: CNN
  • ট্রাম্প প্রস্তাব দেন তিনি দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে চান

আমেরিকান সংবিধান অনুযায়ী একজন ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না।

কিন্তু জন বোল্টন বলছেন, ট্রাম্প চীনা প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন যে, তিনি যাতে দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেন, তার জন্য প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে আমেরিকানরা খুবই আগ্রহী।

শি জিনপিংও ট্রাম্পের সুরে সুর মিলিয়ে বলেন, আমেরিকায় খুব বেশি নির্বাচন হয়, কারণ তিনি মি. ট্রাম্পের জায়গায় আর কাউকে দেখতে চান না। ট্রাম্প তখন মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়েছিলেন।

  • ট্রাম্পের মতে ভেনেজুয়েলা আক্রমণ ‘দারুণ’ ব্যাপার হবে

ট্রাম্প প্রশাসনের বিদেশ নীতি নিয়ে অন্যতম বড় একটা মাথাব্যথার বিষয় ছিল ভেনেজুয়েলা। আর আমেরিকা দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর কট্টর বিরোধী।

এই দেশটি প্রসঙ্গে আলোচনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ভেনেজুয়েলা আক্রমণ করলে “দারুণ” হবে, আর দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি “আসলে কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই অংশ”।

ট্রাম্প
image: getty image
  • হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারাও তাকে নিয়ে মশকরা করে

জন বোল্টন একটা অকার্যকর হোয়াইট হাউসের বর্ণনা দিয়েছেন। যেখানে গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণী বৈঠকগুলো আসলে “খাওয়াদাওয়ার পার্টি”তে পরিণত হয়।

যখন তিনি হোয়াইট হাউসে আসেন, সে সময়কার স্টাফ প্রধান জন কেলি তাকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন, “এটা কাজ করার জন্য খুবই নিকৃষ্ট জায়গা, তুমি নিজেই টের পাবে।”

এমনকি পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও, যাকে ট্রাম্পের অনুগত ও খুব ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয়, তিনিও ট্রাম্পকে “ফুল অফ শিট” বা “মাথা ভর্তি গোবর” বলে একটি নোটে উল্লেখ করেছিলেন বলে এই বইয়ে দাবি করা হয়েছে।

যদিও বেচারা ট্রাম্প টুইট করে দাবি করেছেন, বইয়ের আগাপাশতলা মিথ্যে। চাকরি যাওয়ার আগে পর্যন্ত বোল্টন তাঁর নামে বইয়ে সব ভাল ভাল কথা লিখেছিলেন, বরখাস্ত হওয়ার পরদিনই সব বদলে দেন তিনি।

  • ২০২০ নির্বাচনে মুহুর্মুহু টুইট

গত কয়েকদিনে ২০২০ মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল গণনা বিলম্বিত হওয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মাথা অনেকটাই বিগড়ে গিয়েছিল বলা যায়। এত বেশি পরিমাণ টুইট তিনি করেছেন যা রীতিমতো হাস্যকর। গত বুধবার শুধুমাত্র এক দিনেই ১২৫ বার টুইট করে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন তিনি। সেদিন এক ঘন্টার মধ্যেই টুইট করেছিলেন ৪৮ বার।

ডোনাল্ড ট্রাম্প

হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ডেমোক্র্যাটদের প্রতিনিধিত্বকারী অভিশংসন ব্যবস্থাপককে তুলাধোনা করে অনেক টুইট করেছেন ট্রাম্প। এর আগে ট্রাম্পের সর্বোচ্চ টুইটের রেকর্ড ছিল ১২৩টি। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ওই রেকর্ড করেছিলেন তিনি। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে এর চেয়েও বেশি টুইট করার রেকর্ড আছে ট্রাম্পের। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে এক দিনে ১৬১টি টুইট করেছিলেন তিনি।

  • মাস্ক নিয়ে বিতর্ক

করোনাকালীন পুরো সময়টাই ট্রাম্পের হাস্যকর যুক্তিতে মিডিয়া সরগরম ছিল। প্রথমত তিনি করোনাকে চীনের তৈরি বলে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু বরাবরের মতোই তিনি কোনো প্রমাণ হাজির করেননি। তিনি বলেন-

এটি  সত্যি খুবই ব্রিলিয়ান্ট শত্রু। আমরা ইতোমধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছি। আপনারাও তা দেখেছেন। প্রত্যেক সমস্যার সমাধান করে অ্যান্টিবায়োটিক। বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে বড় শত্রু এ ভাইরাস এতটাই ব্রিলিয়ান্ট যে অ্যান্টিবায়োটিকে কোনো কাজ হচ্ছে না। আমি বরাবরই মাস্কের বিরুদ্ধে, কিন্তু আমার মতে, সেটার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় এবং জায়গা রয়েছে।

image: CNN

এর আগে তিনি বলেছিলেন, তিনি মাস্ক পরবেন না। মাস্ক পরার জন্য ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনকে নিয়ে তিনি ব্যাঙ্গও করেছেন।

আবার ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্কের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময় মি. ট্রাম্প বলেছিলেন, ”আমি পুরোপুরি মাস্কের পক্ষে।”

তিনি আরও যোগ করেন যে, মাস্ক পরলেও তাকে দেখতে অনেকটা ‘লোন রেঞ্জারের’ মতো লাগে। লোন রেঞ্জার হচ্ছেন আমেরিকান কল্পকাহিনীর একজন নায়ক, যিনি তার আদিবাসী আমেরিকান বন্ধু টোনটোর সঙ্গে মিলে পশ্চিমা আমেরিকায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেন।

তবে গত এপ্রিল মাসে যখন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করার জন্য সবার জন্য জনসম্মুখে মাস্ক পরার সুপারিশ করলে, মি. ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি সেটা করবেন না। তিনি বলেন-

 

আমি এটা করবো বলে মনে হয় না,” তিনি তখন বলেছিলেন। ”মুখে মাস্ক পরে আমি প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, স্বৈরশাসক, রাজা, রানীদের স্বাগত জানাচ্ছি- এমনটা দেখা যাবে বলে আমি মনে করি না।

 

পড়ুন অটোম্যান সাম্রাজ্যের ইতিহাস এবং ব্রুনাই সুলতান: এক খ্যাপাটে রাজার গল্প


This is a Bengali article. This article is about Trump’s ridiculous work.

All the reference are hyperlinked within the article

Featured Image: Fox News

Total
0
Shares
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Article

বেনসন অ্যান্ড হেজেস : রাজকীয় ব্রিটিশ সিগারেটের সাতকাহন [পর্ব-১]

Next Article

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ হওয়ার কারণ এবং যার ফলশ্রুতি এর ভয়াবহ পরিণতি

Related Posts

অবশেষে সহায়তা বিলে স্বাক্ষর করলেন ট্রাম্প

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, ১২ ডিসেম্বর হোয়াইট হাউজে দেখা যায়, তিনি করোনাভাইরাস ত্রাণ প্যাকেজে স্বাক্ষর করেছেন।Al Drago/Getty Images রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প কংগ্রেস বিল…

৫০০ কোভিড ভ্যাকসিন নষ্ট

মডার্নার ভ্যাকসিন আরো ব্যাপকভাবে বিতরণ করার মূল কারন হলো এটি স্বাভাবিক হিমায়িত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়। ক্রেডিট- নিউ ইয়র্ক টাইমস উইসকনসিনের একটি হাসপাতালের একজন ফার্মাসিস্টকে…

লাভ (২০২০) : বুদ্ধিদীপ্ত স্ক্রিপ্টিং, ডার্ক কমেডি, সম্পর্কের টানাপোড়ন এবং ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের লেয়ারে মোড়ানো একটি সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার

“তুই যে ওকে খুন করেছিস কতক্ষণ হয়েছে? না মানে আমি জানতে চাচ্ছিলাম কারণ এখন ওর শরীর কাটলে রক্ত…
আরও পড়ুন

উইঘুর নির্যাতন: একুশ শতকের ভয়াবহ গণহত্যায় নিরব কেন বিশ্ব?

উইঘুর মুসলিমদের ওপর আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর গণহত্যা চালাচ্ছে কমিউনিস্ট চীন। গণহত্যা এবং নির্যাতনের মাত্রা এত বেশি…

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন

Total
0
Share