১৯২৪ সালের ৩ই মার্চ। গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে তুরস্কের যাত্রা শুরু হয়ে মাত্র ৪ মাস হলো। এই সময় তুরস্কের সংবিধান থেকে খিলাফত শব্দটি বিলুপ্ত করা হলো। এর আগে ১৯২৩ সালের ২৯ই অক্টোবর উসমানীয় সাম্রাজ্য ভেঙে তুরস্ক প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন আধুনিক তুরস্কের জনক মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক। আধুনিক তুরস্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত প্রায় ১০০ বছরের তুরস্কের রাজনৈতিক ইতিহাসে পাঁচবার সামরিক হস্তক্ষেপ সংঘটিত হয়েছে। আর প্রত্যেকটি সামরিক হস্তক্ষেপের পেছনের গল্প পরোক্ষভাবে অনেকটাই এক। চলুন সে বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
তুরস্কের ইতিহাস নিয়ে আমাদের এই লেখাটি দুই পর্বে সমাপ্ত হবে। এখানে আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সেদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং সামরিক অভ্যুত্থান সমূহের অন্তর্নিহিত কারণ গুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কিভাবে স্মরণ হল সে বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। তুরস্ক সম্পর্কে জানতে আগ্রহী পাঠকগণ এই লেখা থেকে তুরস্কের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করবেন আশা করছি।
উসমানীয় খেলাফত ছিল মুসলিম ইতিহাস ও সভ্যতার এক গৌরবোজ্জ্বল এক অধ্যায়। ১২৯৯ সালে আনাতলিয়াকে ভিত্তি করে যেই উসমানীয় সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন হয়েছিল, কয়েক শতাব্দীর মধ্যেই তার বিস্তৃতি ঘটেছিল এশিয়া ইউরোপ এবং আফ্রিকা মহাদেশ জুড়ে। ১৪৫৩ সালের ২৯ মে সুলতান মুহাম্মদ ফাতেহ সেই সময়কার সবচেয়ে শক্তিশালী সভ্যতা বাইজেন্টাইনকে পরাস্ত করে ইস্তানবুলের যে ঐতিহাসিক বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন, সে বিজয় সম্ভবত গত সহস্রাব্দে মুসলমানদের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা।
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় আতাতুর্ক ছিলেন একজন সামরিক কর্মকর্তা। উসমানীয় সাম্রাজ্যের পরাজয়ের পর তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি তুর্কি জাতীয় আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তার সামরিক অভিযানের ফলে তুরস্ক স্বাধীনতা লাভ করে। আতাতুর্ক এরপর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেন।
তিনি ভেবেছিলেন আধুনিকায়ন ও উন্নতির পথে প্রধান বাধা হলো ইসলাম। সেই জন্য সাবেক উসমানীয় সাম্রাজ্যকে একটি আধুনিক, পশ্চিমাপন্থী, সেক্যুলার জাতিরাষ্ট্রে রুপান্তরের উদ্যোগ নেন। আতাতুর্কের সংস্কার আন্দোলনের মূলনীতির উপর আধুনিক তুরস্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। তার মতবাদ ‘কামালবাদ’ নামে পরিচিত পায়।
আতাতুর্কের সংস্কারের মূল দিক ছিল নতুন তুরস্ককে পশ্চিমা সংস্কৃতির আলোকে গড়ে তোলা। শিক্ষাব্যবস্থাকে ধর্মনিরপেক্ষকরণ, মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ করা, ইসলামী পোষাক পরিহার করে পশ্চিমা পোষাকের সংস্কৃতি আমদানি করা, পুরুষদের সুট-কোর্ট এবং মহিলাদের পশ্চিমা আদলে সংক্ষিপ্ত পোষাক পরিধানে বাধ্য করা, সামাজিক জিবনকে ধর্মনিরপেক্ষতার ধাঁচে সাজানো, সামাজিক কৃষ্টি কালচার থেকে ইসলামী রীতিনীতি বাদ দিয়ে পশ্চিমা কৃষ্টি কালচার আমদানি করা, নারীদের হিজাব নিষিদ্ধ করা, আরবীর পরিবর্তে তুর্কি ভাষায় আজানের প্রচলন চালু করা, অসংখ্য মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া এইগুলো ছিল মূলত কামাল আতাতুর্কের সংস্কারের মুখ্য বিষয়।
স্বাভাবিকভাবেই তুরস্কের জনগণের মধ্যে বিরাট একটা অংশ দীর্ঘদিনের পশ্চিমাপন্থী শাসনের প্রভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার আদলে গড়ে ওঠে। ধর্মীয় রীতিনীতির তুলনায় উন্নয়নের জন্য পশ্চিমা কালচারকেই বেশি গুরুত্ব দিত। এই ধরণের মানুষের সংখ্যাটা নেহায়েতই কম ছিল না। সাধারণ মানুষের মধ্যে যেমন সিংহভাগ ছিল পশ্চিমাপন্থী সেক্যুলার তেমনি সামরিক বাহিনীর বিশাল একটা অংশও ঐ আদর্শে বিশ্বাসী ছিল। পশ্চিমা ভাবধারাই বেড়ে ওঠা এই সামরিক বাহিনীর একটা অংশ কখনই ডানপন্থী সরকারকে ভালো চোখে দেখেনি। যখনই ডানপন্থী ইসলামী সরকার কোনো সংস্কারের দিকে পা বাড়িয়েছে তখনই সামরিক বাহিনীর বিদ্রোহের স্বীকার হয়েছে।
তুরস্ক প্রজাতন্ত্র ঘোষণার পর থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়ে তুরস্কে সামরকি বাহিনী থেকে শুরু করে সকল স্তরে কামালবাদ বা কামাল আতাতুর্কের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল। কাজেই যেকোনো সরকারের পক্ষে এই ব্যবস্থা পরিবর্তন করা সম্ভব ছিল না। তুরস্কের প্রথম ডানপন্থী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আদনান মেন্দেরেস। ১৯৫০ সালে আদনান মেন্দেরেসের ডেমোক্রেটিক পার্টি ক্ষমতায় এলেও সংস্কারটা কিন্তু তখনই শুরু করতে পারেনি। এরপর ১৯৫৪ এবং ১৯৫৮ সালের নির্বাচনেও ডেমোক্রেটিক পার্টি ক্ষমতায় এলো। কিন্তু এই সরকারকে সেনাবাহিনী ভালো চোখে দেখেনি।
১৯৬০ সালের অভ্যুত্থান
ডেমোক্রেটিক পার্টির সাথে ১৯৫৭ সালের নির্বাচনের পর থেকেই সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক খারাপের দিকে চলে যায়। কারণ ইতিমধ্যেই আতাতুর্কের প্রবর্তিত রাষ্ট্রব্যবস্থার কিছুটা পরিবর্তন এনেছিল দলটি। যেমনঃ তুর্কি ভাষার আজান পাল্টে পুনরায় আরবীতে আজান দেওয়া শুরু হয়েছিল, বন্ধ হয়ে যাওয়া কুরআন ক্লাস আবার চালু হয়েছিল, রেডিওতে কুরআন তিলাওয়াত করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, আতাতুর্কের সময় বন্ধ করে দেওয়া কয়েক হাজার মসজিদ খুলে দেওয়া হয়েছিল, নারীদের হিজাব নিষিদ্ধ করার আইন বাতিল করা হয়েছিল ইত্যাদি।
কিন্তু অভ্যুত্থানের জন্য এটাই একমাত্র কারণ ছিল না। ১৯৫৮ সালের পর আদনান মেন্দেরেস সরকারের সাথে সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক তিক্ততার পর্যায়ে চলে যায়। অপরদিকে বিরোধী দলীয় নেতা ইসমত ইনুনুর সাথে সামরিক বাহিনীর জেনারেলদের সম্পর্ক ভালো হতে থাকে। তুরস্ক তখন ন্যাটোর সদস্যপদ গ্রহণ করা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। ন্যাটোর সদস্যপদ গ্রহণ করায় সামরিক বাহিনীর একটা বিশাল অংকের বাজেট ও প্রশিক্ষণ আমেরিকা সরবারহ করত। এদিকে আদনান মেন্দেরেস ক্ষমতায় আসার পর ইসমত ইনুনুর অধীনে চাকরি করা বেশ কিছু অভিজ্ঞ জেনারেলকে অবসরে পাঠায়। এই নিয়েও মেন্দেরেস সরকারের প্রতি সেনাবাহিনীর একটা চাপা ক্ষোভ ছিল।
এগুলোর পাশাপাশি সরকারের দমনপীড়নমূলক আইন ও সমালোচনাধর্মী পত্রিকা বন্ধের বিরুদ্ধে তুমুল আন্দোলন শুরু করে বিরোধীরা। এই যখন অবস্থা তখন ১৯৬০ সালের শুরুর দিকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বসেন সরকার। এসবের মধ্যদিয়েই তুরস্কের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দৃশ্যপটে চলে আসে সামরিক বাহিনী।
২৭ মে ১৯৬০ সালে সর্বপ্রথম রেডিওতে তুরস্কের জনগণ শুনতে পেল সেনা অভ্যুত্থানের কথা। সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে কর্নেল আলপ আরসলান সেনা শাসন জারির ঘোষণা দিলেন। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ্য করলেন ডেমোক্রেটিক পার্টি দিন দিন দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে এবং জাতীয় একতা নষ্ট করছে। এই ঘোষণার পরপরই প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, সামরিক বাহিনীর প্রধানসহ অনেককে গ্রেফতার করা হয়। তার মানে হল সামরিক বাহিনীর প্রধানের পক্ষা থেকে নয় বরং উপর থেকে এই অভ্যুত্থানের কলকাঠি নাড়া হয়েছিল।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, পরপর তিনবার বিপুল ভোটে জয় লাভ করা ডেমোক্রেটিক পার্টির এই দুর্দশায় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধ কেউ সামান্যতম প্রতিবাদও করেনি। বরং উল্টো দিকে ইস্তানবুল ও আনকারার সিংহভাগ জনগণ সেনা অভ্যুত্থানকে সমর্থন জানিয়েছিল। বিশেষ করে পশ্চিমা ভাবধারার তরুন ছাত্রসমাজের কাছ থেকে সামরিক বাহিনী সবচেয়ে বেশি সমর্থন পেয়েছিল।
অভ্যুত্থানের তিনদিন পর সেনাবাহিনীর সদ্য বিদায় নেওয়া সাবেক প্রধান সেমাল গুরসেলকে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর জাতীয় ঐক্য কমিটি ঘোষণা করা হয়। এদিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় ডেমোক্রেটিক পার্টিকে। ৭৭ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট সেলাল বায়ারকে বয়সজনিত কারণে ক্ষমা করলেও ১৯৬১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় আদনান মেন্দেরেসকে।
১৯৭১ সালের সামরিক অভ্যুত্থান
১৯৬০ সালের অভ্যুত্থানের পর ১৫ অক্টোবর, ১৯৬১ সালে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে পুনারয় গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসে তুরস্কের রাজনীতি। এই অভ্যুত্থানের পর প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। একদিকে মোস্তফা কামালপন্থী জেহেপে অপরদিকে আদনান মেন্দেরেসের ডেমোক্রেটিক পার্টির ভাবধারায় গঠিত আদালত পার্টি। ১৯৬৯ সালের নির্বাচনে ডানপন্থী আদালত পার্টি পুনরায় ক্ষমতায় আসলে পশ্চিমা ভাবধারার বামরা খুব হতাশ হয়ে পড়ে। সে সময় চরম অস্থিতিশীলতার মধ্যদিয়ে যাচ্ছিল তুরস্ক।
১৯৭০-এ এসে পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস গুলোতে চরম অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। আনকারার ইসরাইলের দূতাবাসে হামলা, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িবহরে আগুন দেয়াসহ বেশ কিছু ঘটনার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অন্যদিকে সরকারের ব্যর্থতার কারণে অর্থনীতিক মন্দা চরম আকার ধারণ করেছে। মুদ্রাস্ফীতি গিয়ে দাড়িয়েছিল ৮০ শতাংশে।
এ সময় বাম সংগঠনগুলোর কেন্দ্র ছিল মিডলইস্ট টেকনিক্যাল ইউনিভার্নিটি। সেখানে বেশ কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। এতে সেনা অফিসারসহ বেশ কয়েকজন মারা যায়। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বার বার বন্ধ ঘোষণা করেও সহিংসতা থামানো যাচ্ছিল না।
এদিকে ১৯৭১ সালের ৯ মার্চ সেনাপ্রধান ও বিমানবাহী প্রধান মিলে সামরিক বাহিনীর প্রধানকে অভ্যুত্থান ঘোষণার মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করার জন্য চাপ দেন। ১১ মার্চ জেনারেলদের নিয়ে একটি সভা করা হয়। এই খবর পাওয়ার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এমপিদের নিয়ে জরুরি সভা ডাকেন। সেনা অভ্যুত্থান যেন সংঘটিত না হয় সেই জন্য সব চেষ্টায় করেন। এক পর্যায়ে অবস্থা তুলে ধরে সেনাবাহিনীকে কড়া হুঁশিয়ারি দেন। কিন্তু অবশেষে সব চেষ্টায় বৃথা যায়।
১২ মার্চ, ১৯৭১ সাল দ্বিতীয়বারের মতো হোঁচট খায় তুরস্কের গণতন্ত্র। অর্থনৈতিক মন্দার জের ধরে দেশটিতে দ্বিতীয়বারের মতো অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানগণ এক যৌথ বিবৃতিতে সাক্ষর করে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পাঠান। প্রধানমন্ত্রী সোলেমান দেমিরেলকে দেশ পরিচালনায় কামাল আতাতুর্কের দর্শন মেনে নতুন একটি শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য সরকার গড়ার জন্য ‘স্মারকলিপি’ দেওয়া হয় সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে। কিন্তু রহস্যজনকভাবে পদত্যাগ করে বসেন প্রধানমন্ত্রী সোলেমান দেমিরেল। ফলে রক্তপাতহীন ওই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে নেয় সামরিক বাহিনী।
সেনাবাহিনী প্রথমে ডানপন্থী রিপাবলিকান পিপলস পার্টির নেতা নিহাত এরিমকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ঘোষণা করে। দুই বছর পর অবসরপ্রাপ্ত নৌকর্মকর্তা ফাহরি কোরুতার্ককে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়। এই দুই বছর সামরিক বাহিনীর অধীনে অন্তবর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করে। ক্ষমতাচ্যুত দেমিরেল এরপর রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। প্রায় দুই দশক পরে তিনি পুনরায় তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ থেকে ২০০০ সাল প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন দেমিরেল।
This is a bengali article. It about history of turkey army coup ‘part-1’
All the references are hyperlinked within the article.
Featured Image: middle east monitor