“আমার বয়স যখন ১১, তখন এলাকায় র্যাবিস ছড়িয়েছিলো। আমার কুকুর তাতে আক্রান্ত হয়। এটি তার মাকে কামড় দেয় আর তাতে এটির মা মারা যায়। এরপর থেকে যখনই এটির কাউকে মারার প্রয়োজন হতো, তখনই এটি কামড়ে দিতো ঐ প্রাণীকে। এই অবস্থায় পাড়ার লোকেরা ঠিক করলো আমার কুকুরটিকে তারা মেরে ফেলবে। কিভাবে যেন লোকদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গেল এটি।কিছুদিন পর তাকে আবার দেখতে পেলাম আমি। তখন এটির স্বাস্থ্যের ভগ্নদশা। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই মারা গেলো আমার কুকুর। তার লাশ নিয়ে আমি পাড়ার পেছন দিকে কবর দিলাম। ঐ রাতেই কবর খুঁড়ে এলাকাবাসী কুকুরটির লাশ বের করে খাওয়ার জন্য। একমাত্র যে কারণে আমার এখন সেই ঘটনাটি মনে পড়ছে সেটি হলো এলাকায় আবার র্যাবিস ছড়াচ্ছে।”
আপাতদৃষ্টিতে অর্থহীন এই ডায়লগের মাধ্যমে শুরু হয় এই সিনেমার গল্প আর আমরা দেখতে পাই আমাদের নায়ককে। পুরো মুভিজুড়ে খুব বেশি ব্যাকস্টোরি না দিলেও পরিচালক না হং-জিন এই ডায়লগের মাধ্যমে দর্শকদের জানিয়ে দেন কেমন পরিবেশে এখানকার চরিত্ররা বেড়ে উঠেছে এবং তাদের মানসিক বিকাশ ঘটেছে৷ তিনি এটিও পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন প্রয়োজনের সময় তারা কতটা মরিয়া হয়ে উঠতে পারে।
পরিচালক না হং-জিনের অভিষেক হয়দ্যা চেসার (২০০৮)এর মাধ্যমে। চলচ্চিত্রবোদ্ধা হলে সেই মুভি নিয়ে আপনাকে নতুন করে কিছু না জানালেও চলবে। আজকে আমরা যে মুভি নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি সেটি হলো না হং-জিন পরিচালিত দ্বিতীয় সিনেমাদ্যা ইয়েলো সী।এটি মুক্তি পায় ২০১০ সালের ২২শে ডিসেম্বর এবং ৯ মিলিয়ন ডলার বাজেটের বিপরীতে বক্স অফিস হতে আয় করে ১৫.৮ মিলিয়ন ডলার। পরিচালনার পাশাপাশি ১৪০ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই সিনেমার চিত্রনাট্যও লিখেছেন না হং-জিন। সিনেম্যাটোগ্রাফিতে ছিলেনলি সাং-জে।মুভিটির সংগীত পরিচালনা করেছেনইয়াংকিউ জ্যাংওবাইউং-হুন লিজুটি। এতে কোরিয়ান এবং ম্যান্ডারিন উভয় ভাষাই ব্যবহৃত হয়েছে। দ্যা ইয়েলো সী এর আইএমডিবি রেটিং ৭.৩ এবং রটেন টমাটোজে ফ্রেশনেস রেটিং ৮৮%। বর্তমানে কোন স্ট্রিমিং সাইটেই এই থ্রিলার/ড্রামা মুভিটি এভেইলেবল না। দেখতে হলে কোথাও থেকে ডাউনলোড করে নিতে হবে।
দ্যা চেসারে আমরা যেরকম চেস বা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া দেখি, সেরকম চেস দ্যা ইয়েলো সীতেও উপস্থিত। তবে দ্যা চেসার আর এটির কাহিনীর মধ্যে ব্যাপক বৈসাদৃশ্য রয়েছে। এখানকার ল্যান্ডস্কেপ যে শুধু বড় তা-ই নয়, এটি অনেক বেশি ডার্ক। এখানে একটি নিষ্ঠুর পৃথিবীর গল্প বলা হয় যা তাড়িত হয় মানুষের বিধ্বংসী প্রবৃত্তি দ্বারা, আর এই প্রবৃত্তি জন্ম দেয় আরো বেশি বিশৃঙ্খলা ও হানাহানির। শেষদিকে গল্পের চরিত্রদেরকে তাদের নির্বুদ্ধিতার শাস্তি কড়ায়-গণ্ডায় বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও কোন কার্পণ্য দেখায় না এই দুনিয়া। এই মুভিটা একটা ভয়াল অভিজ্ঞতা, যা নিরলসভাবে দর্শককে উদ্দীপ্ত রাখে ও প্যাঁচানো প্লটকে ফাইনাল চ্যাপ্টারে পৌঁছে দেয় এবং এন্ডিংয়ের মাধ্যমে তাদেরকে বিষাদগ্রস্ত করে ফেলে। এছাড়া গল্পের ব্ল্যাক কমেডিক ব্যাপার-স্যাপার এবং কিভাবে এখানকার চরিত্ররা নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনে তা দেখে দর্শক হয়তো মনের অজান্তে হেসেও উঠতে পারেন কষ্টের হাসি।
এটির ইন্টারন্যাশনাল ভার্সন বা ডিরেক্টর’স কাট আছে যা থেকে শুরুতে আপনি প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী পাবেন, যা মুভিটির প্লট বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। গল্পের সূত্রপাত ঘটে চীনের ইয়ানবিয়ান স্বায়ত্তশাসিত এলাকার ইয়ানজিতে, যা চীন, উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। জাপানী দখলদারিত্বের সময়ে (১৯১০-১৯৪৫) অত্যাচার থেকে নিস্তার পেতে অসংখ্য কোরীয় মানুষ এই এলাকায় চলে আসে। এদের অনেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরও এখানে থেকে যায়। চাইনিজ সমাজের অংশে পরিণত হওয়া এসকল কোরীয় চাইনিজ মানুষজনকে ‘জোসেঅনজক’বা‘চাওজিয়ানজু’নামে ডাকা হয়। তারা কোরিয়ান ও চাইনিজ উভয় ভাষাতেই পারদর্শী।
স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তির পর ১৯৯০ এর দশক থেকে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মাঝে কোন শত্রুতা নেই। যার ফলশ্রুতিতে জোসেঅনজক লোকজন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকান দেশের নাগরিকদের মত জীবিকার সন্ধানে দক্ষিণ কোরিয়ায় আসতে শুরু করে। তবে সমস্যা হলো এদের অনেকে বেআইনিভাবে এখানে প্রবেশ করে এবং তাদের উপর অত্যাচার, অবিচারের ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। যার ফলে তাদেরকে নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় সামাজিক ইস্যু সৃষ্টি হয়েছে।
দ্যা ইয়েলো সী এর কেন্দ্রীয় চরিত্র গু-নাম (হা জিয়ং-উ),যে ইয়ানজিতে ট্যাক্সি চালায়। তার স্ত্রী গিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া কিন্তু বহুদিন ধরে তার কোন খোঁজ নেই, পাঠাচ্ছে না কোন টাকা-পয়সাও। এই বিষয় নিয়ে সে খুবই হতাশ। নিজের একমাত্র মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে সে বাস করে নোংরা একটি বাসায়। নিরাশা আর জুয়ার টাকার দায় তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। যে মহাজন তার কাছে ৬০,০০০ ইউয়ান পায়, সে প্রায়শই তার বাসায় আসে এবং সার্কাস্টিকভাবে মনে করিয়ে দেয় তার শরীরের অঙ্গ বিক্রি করেও সে দেনা শোধ করতে পারবে না। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে নিজের চাকরীও খুঁইয়েছে গু-নাম। সে জীবনযুদ্ধের পরাজিত সৈনিক যার সামনে কোন পথ খোলা নেই।
একদিন লোকাল ক্রাইম বসমাইয়ন জেওং-হাকযে সংক্ষেপেমাইয়ন-গা(কিম ইয়ন-সেওক)নামে পরিচিত, এমন একটি অফার নিয়ে তার কাছে আসে যা রিফিউজ করা তার পক্ষে ছিলো অসম্ভব। যদি গু-নাম তার কথামত কোরিয়া গিয়ে একজনকে খুন করতে পারে, তাহলে মাইয়ন-গা তার সমস্ত দেনার দায় মিটিয়ে দেবে। এছাড়া যেহেতু ঐ লোককে হত্যা করার পূর্বে কিছুটা সময় তার হাতে থাকবে, সেহেতু কোরিয়ায় তার স্ত্রীকেও খুঁজতে পারবে সে। গু-নাম এই অফারটি গ্রহণ করে এবং ট্রেনে করে ডাইলান যায়। সেখান থেকে অন্যান্য অবৈধ অধিবাসীদের সাথে সে ইয়েলো সী পেরিয়ে কোরিয়া যাওয়ার জাহাজে চড়ে বসে।
এই মুভির গল্প নিজস্ব টাইটেলসমৃদ্ধ ৪টি অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রথম অধ্যায়ের নাম ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’, যার মূল ফোকাস নায়ক আর তার আশাহীন জীবনকে স্ট্যাবলিশ করার উপর। পরিচালক গু-নামের চারপাশের ধূসর, ডিপ্রেসিং পরিবেশকে ফুটিয়ে তুলেছেন অসাধারণভাবে। শ্যুটিং হয়েছে ইয়ানজি এবং সংলগ্ন এলাকাসমূহে। চারপাশের মানুষ এবং পরিবেশের শীতকালীন আবহ ফুটে উঠেছে অকৃত্রিমভাবে সাথে সেট এবং পোষাক-আশাকে ছিলো ডিটেইলিংয়ের ক্ষেত্রে পরিচালক ছিলেন যত্নশীল।
গু-নাম স্বল্পবাক, নিজের সম্পর্কে তেমন কিছু বলে না। তবে সময়ে সময়ে বলা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ডায়লগসমূহ তার করুণ জীবন সম্পর্কে অনেককিছু জানিয়ে দেয় আমাদেরকে। একটি দৃশ্যে আমরা দেখি সে তাদের কাঁচ ভেঙ্গে যাওয়া বিয়ের ছবির দিকে তাকিয়ে আছে আর পাশে আছে তার শ্বশুর, যার তাকে দুঃখিত ছাড়া অন্যকিছু বলার নেই। একসময় হয়তো তাদের সংসারেও সুখ ছিলো কিন্তু এখন প্রায়ই গু-নামকে তার স্ত্রীর সাথে কোরিয়ার কারো সম্পর্ক আছে এমন দুঃস্বপ্ন তাড়া করে। আশেপাশের লোকজন যেমন বলে, সে কি আসলেই তাকে পরিত্যাগ করেছে?
শেষের দিকের টেনশন বিল্ড করতে পরিচালক ধীরলয়ে বেশ সময় নিয়েছেন। দ্বিতীয় অধ্যায় ‘মার্ডারার’।এটিতে আমরা দেখি কোরিয়ান সমাজ গু-নামের কতটা অপরিচিত, স্বল্পভাষী হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে তার অপ্রতিভ আচার-আচরণ ও বাচনভঙ্গির ফলে তারা বুঝে যায় সে স্থানীয় নয়৷ কোরিয়াতে নিজের মূল কাজ করার জন্য প্ল্যান করার পাশাপাশি সে খুঁজে বেড়ায় তার স্ত্রীকে৷ কিন্তু কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লাভ করা ছাড়া এই কাজে তেমন সাফল্য পায় না সে।
অবশেষে সেই মুহুর্ত আসে যখন গু-নামকে মাইয়ন-গার কথামত খুন করতে হবে। এই সীনকে সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে হিচককীয় সাসপেন্সের আদলে। আমরা গু-নামকে দেখি তার টার্গেট যে বাসায় থাকে, তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে। কিন্তু সে বাসায় ঢুকতে তৈরী হওয়ার আগেই আকস্মিকভাবে একটি ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাকে নিঁখুতভাবে দেখানো হয়েছে মোশন-ডিটেক্টিং লাইট-বাল্বের মাধ্যমে। লাইটগুলোর সিরিয়ালি জ্বলা-নেভার মাধ্যমেই পরিস্থিতি আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। গু-নামকে এখন অবশ্যই কিছু করতে হবে কিন্তু তার টার্গেটের বাসায় প্রবেশ ঘটনাপ্রবাহকে আরো বিপদসঙ্কুল করে তোলে।
আকস্মিকভাবে যে ঘটনা ঘটে তার ফলাফল হিসেবে গু-নাম নিজেকে আবিষ্কার করে এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে। তাকে তাড়া করে পুলিশ এবং অন্যান্যরা। এখানে একটা চেস সিন দেখি আমরা যা দ্যা চেসারের ভক্তদের বিমোহিত করবে। দূর্ভাগা গু-নামকে রাস্তা এবং গলি-ঘুপচি দিয়ে যত দ্রুততার সাথে সম্ভব দৌড়ে অসংখ্য পুলিশ এবং পেট্রোল কারকে ফাঁকি দিতে হবে। এই দৃশ্য সুন্দরভাবে দেখাতে কোন কার্পণ্য করেননি হং-জিন। গাড়ির সাথে গাড়ির বা অন্যকিছুর সাথে গাড়ির এতসব সংঘর্ষের ভেতর দিয়ে কিভাবে নিজের চরিত্রে থেকে জিয়ং-উ দৌড়েছেন তাও একটা রহস্য বটে!
তৃতীয় অধ্যায় ‘জোসেঅনজক’এ প্লট জটিল থেকে জটিলতর হতে শুরু করে। প্রেক্ষাপটে আগমন ঘটে সিউলের ক্রাইম বস কিম তে-ওন(চো সেওং-হা)এর, যে এই ঘটনার সাথে জড়িত। নিজের জড়িত থাকার সকল প্রমাণ মেটাতে সে বদ্ধপরিকর, তাই পুলিশ ধরার আগেই গু-নামকে সমীকরণ থেকে হটিয়ে দিতে চায়। পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে যায় মাইয়ন-গার কোরিয়ায় আসার মাধ্যমে। এই জটপাকানো স্টোরিলাইনে কনফিউজড হয়ে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। অনেককিছুরই কোন ব্যাখ্যা নেই, চরিত্রগুলোর মধ্যে সম্পর্কও একটু বেশি জটিলতায় ঘেরা। এমনকি কোরিয়ান দর্শকরাও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যেতে পারেন৷ কারণ মারা যাওয়ার আগে এক ক্যারেক্টার অস্পষ্টভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্রের কথা প্রকাশ করে। তবে সাবটাইটেল দিয়ে দেখলে এই সমস্যা হবে না।
যাইহোক, জটিল গল্পকে হাই-টেনশন লেভেলে নিয়ে যাওয়ার মত পর্যাপ্ত শক্তি ও প্রয়াস আছে এই চলচ্চিত্রে; এবং এটা ডার্কলি এক্সাইটিং। এখানকার দুঃস্বপ্নময় পরিস্থিতিতে যেকোন কিছুই ঘটতে পারে। ভীতিজাগানিয়া সব অ্যাকশন সিকোয়েন্স দিয়ে দর্শকদের আগ্রহকেও তুঙ্গে রাখা হয়। দ্যা চেসারের মতই এই মুভিটি গ্রিজলি এবং ভায়োলেন্ট। ফলে অনেক ক্যারেক্টারকেই নানাভাবে প্রাণ হারাতে ও আহত হতে দেখি আমরা। অন্যান্য কোরিয়ান বা চাইনিজ গ্যাংস্টার মুভির গ্যাংস্টারদের মত এখানকার গ্যাংস্টাররাও নিজেদের নিয়মে অটল থাকে। এভাবে নিজেদের পন্থায় সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে তারা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে। এদের কর্মকান্ড দেখে দর্শকরা এক ধরণের মরবিড আনন্দ পেতে পারেন।
দ্যা চেসারের চরিত্রগুলো অদল-বদল হয়েছে এই মুভিতে। জিউং-উ, যে ঐ মুভিতে স্যাডিস্টিক সিরিয়াল কিলারের চরিত্রে অভিনয় করেছে, সে এখানে ফ্লড বা ত্রুটিযুক্ত নোয়া হিরো। আর ঐ মুভিতে তাকে তাড়া করে বেড়ানো ইয়ন-সেওক এখানে নির্দয়, ভীতিজাগানিয়া লার্জার-দ্যান-লাইফ ভিলেন। গু-নাম পছন্দ হওয়ার মত কোন ক্যারেক্টার না, তবে বেচে থাকার চেষ্টায় তার সংকটাপন্ন দশা দেখে আমরা দুঃখ অনুভব করি। অন্যদিকে এই মুভির সবচেয়ে বড় আয়রনি হলো শহুরে দক্ষিণ কোরীয় গ্যাংস্টাররা মাইয়ন-গার দানবীয় হিংস্রতা এবং তার দলের কম সফিস্টিকেটেড গ্যাংস্টারদের সাথে পেরে ওঠে না। কুঠার এবং ছুরি ছাড়াও তার কাছে রয়েছে একটি বিশালাকৃতির হাড়। যা দিয়ে একটি ইন্টেন্স অ্যাকশন সীনে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একদল গ্যাংস্টারকে কুপোকাত করে সে। যদিও এই মুভির খুল্লামখুল্লা, বাস্তবিক অ্যাকশন দৃশ্যগুলো সহ্য করা সবার পক্ষে সম্ভব না, তথাপি পরিচালক মাইয়ন-গার কিছু ব্রুটালিটি সরাসরি না দেখিয়ে দর্শকদের কল্পনার উপর ছেড়ে দিয়েছেন৷ নিজেদের চরিত্রে উভয় অভিনেতাই ছিলেন অনবদ্য, তাদের অসাধারণ পার্ফম্যান্স ছাড়া এই মুভির কপালে এত প্রশংসা জুটতো না। সেওং-হার পার্ফম্যান্সও ছিলো যথেষ্ট পাওয়ারফুল৷
একটা সময় নিজের টার্গেটের স্ত্রীকে তাকে কেন হত্যা করা হয়েছে সে রহস্যের কিনারা করার কথা দিলেও গু-নাম বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে এখানকার অন্যান্য ক্যারেক্টার থেকে খুব বেশি সুপেরিয়র না। শেষ অধ্যায় ‘দ্যা ইয়েলো সী’তে বেঁচে থাকার চেষ্টাতেই ব্যস্ত থাকতে হয় তাকে। এতসব ধোঁকা এবং প্রতারণার মধ্যে একসময় ভাগ্যকে মেনে নেয়ার ভাবও আমরা তার মধ্যে লক্ষ করি। দ্যা ইয়েলো সী খুবই কম্পেলিং একটা থ্রিলার, যা ডার্ক নিহিলিস্টিক উপাদানে ভরপুর। এটির এন্ডিং অনেকটা অ্যান্টি-ক্লাইম্যাটিক, যেভাবে শুরু হয়েছে সেভাবে শেষ হয় না৷ তবে এই অবিশ্বাসের ট্র্যাজেডিতে এটাকেই যথার্থ বলে মনে হয়। অস্পষ্ট এন্ডিং কি আসল না কল্পনা তা নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে দর্শকদের মাঝে। তবে বেচারা গু-নামের কাছে তার আর কোন মাহাত্ম্য নেই। তার আসলে ইয়েলো সী অতিক্রম করাটাই উচিত হয়নি।
This is a Bangla article. This article is a review of the South Korean film The Yellow Sea (2010).
All the necessary links are hyperlinked.
Featured images are collected from Google.