সিনেফাইল অথচ আলফ্রেড হিচকককে চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বিশ্ব চলচ্চিত্র যাঁদের দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে, তাঁদের মধ্যে তিনি অগ্রগণ্য। ১৮৯৯ সালের ১৩ই আগস্ট জন্মগ্রহণ করা এই ব্রিটিশ ভদ্রলোক চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন টাইটেল কার্ড ডিজাইনার হিসেবে ১৯১৯ সালে।
পরিচালক হিসেবে অভিষেক ঘটে ১৯২৫ সালে দ্যা প্লেজার গার্ডেন নামক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এটি ছিলো একটি নির্বাক চলচ্চিত্র। ১৯২৭ সালে মুক্তি পায় তাঁর পরিচালিত দ্যা লজার : আ স্টোরি অফ দ্যা লন্ডন ফগ নামক মুভিটি। মূলত এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই তিনি থ্রিলার জনরায় প্রবেশ করেন। তাঁর নির্মিত ১৯২৯ সালের ব্ল্যাকমেইল নামক মুভিটি ছিলো ব্রিটেনের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র। ১৯৩৯ সালের মধ্যেই তিনি বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
পৃথিবীতে যেসব পরিচালকদের কাজ নিয়ে সবচেয়ে বেশী গবেষণা হয়, তাঁদের মধ্যে তিনি অন্যতম। চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে যে জনরা তাঁর দ্বারা সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ হয়েছে, সেটি হলো থ্রিলার। আক্ষরিকভাবে বলতে গেলে এই জনরা বর্তমানে যে আকৃতি লাভ করেছে, তাতে সবচেয়ে বেশি অবদান আলফ্রেড জোসেপ হিচককের।
৬ দশকব্যাপী বিস্তৃত ক্যারিয়ারে পরিচালনা করেছেন ৫০টিরও বেশি চলচ্চিত্র। বোদ্ধারা তাঁকে ডাকে ‘দ্যা মাস্টার অফ সাসপেন্স’ নামে। চলচ্চিত্রক্ষেত্রে অবদানের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য অর্জন করেছেন ‘নাইট কমান্ডার অফ দ্যা মোস্ট এক্সিলেন্ট অর্ডার অফ দ্যা ব্রিটিশ এম্পায়ার (কেবিই)’ এর সম্মাননা। তবে সিনেমাপ্রেমীদের অন্তরে তাঁর জন্য যে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা রয়েছে তার তুলনা কোন পুরষ্কারের সাথেই করা সম্ভব না।
হিচককের নাম নিলে যেসব সিনেমার কথা চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মনে ভেসে উঠবে সেগুলো হলো ডায়াল এম ফর মার্ডার (১৯৫৪), ভার্টিগো (১৯৫৮), নর্থ বাই নর্থওয়েস্ট (১৯৫৯), সাইকো (১৯৬০)। এই মুভিগুলোই তাঁর ক্যারিয়ারে ব্যবসায়িকভাবে সবচেয়ে সফল। এছাড়া এগুলো তাঁকে অস্কারে এনে দেয় একের পর এক নমিনেশন। মূলত পঞ্চাশ এবং ষাটের দশকই ছিলো ওঁনার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সেরা সময়।
এরকম একটা সময়েই তিনি নির্মাণ করেন দ্যা বার্ডস (১৯৬৩)। এটি একটি ন্যাচারাল হরর/থ্রিলারধর্মী মুভি। যাতে অভিনয় করেন রড টেলর, টিপ্পি হার্ডেন, জেসিকা ট্যান্ডি, সুজান প্ল্যাশেট, ভেরোনিকা কার্টরাইটসহ আরো অনেকে।
মুভিটির প্লট রচিত হয় ড্যাফনি দ্যু মরিয়ের এর একই নামের গল্প হতে। যেটি প্রকাশিত হয় ১৯৫২ সালে। এটিই ড্যাফনি এর গল্প অবলম্বনে হিচককের একমাত্র কাজ নয়। ১৯৪০ সালে মুক্তি পাওয়া তাঁর আরেক বিখ্যাত চলচ্চিত্র রেবেকার ক্ষেত্রেও হিচকক তাঁর গল্প ব্যবহার করেছিলেন।
দ্যা বার্ডসের আইএমডিবি রেটিং ৭.৭। রটেন টমাটোজে ৯৫% ফ্রেশনেস স্কোর এবং ৮৫% অডিয়েন্স স্কোর রয়েছে। স্ট্রীমিং প্লাটফর্মগুলোর মধ্যে পিকক প্রিমিয়ামে এটি দেখতে পারবেন ফ্রীতে।
হিচককের নির্মিত অন্যান্য মুভির সাথে দ্যা বার্ডসের ব্যাপক বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। তাঁর অন্যান্য মুভিগুলোতে দেখা যায় একের পর এক রহস্য বা জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং মুভির শেষে এসে পাজলের বিভিন্ন বিক্ষিপ্ত অংশগুলো জায়গামত বসে গিয়ে সব জটিলতার অবসান ঘটে। কিন্তু দ্যা বার্ডসে তিনি হেঁটেছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে। গল্প বলার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন অ্যালেগরি বা রুপকের। এবং প্রথমদিকের কিছুক্ষণ বাদে মুভির পুরোটা সময়জুড়েই বিরাজ করেছে একটি ভৌতিক বা হন্টিং পরিবেশ।
দ্যা বার্ডসের গল্প আবর্তিত হয়েছে একটি ছোট উপকূলীয় ক্যালিফোর্নিয়ান শহরকে ঘিরে। যার নাম বোডেগা বে। এখানে কিছু সময় পরপরই পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে এসে শহরবাসীর উপর আক্রমণ করে। কিন্তু পাখিদের এই আক্রমণের কারণ কি তা হিচকক মুভির কোথাও ব্যাখ্যা করেন নি। আমরা এখন এই আক্রমণের কারণগুলোই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো। কারণ পাখিদের আক্রমণের কারণগুলো জানলেই আমরা মুভিটিতে হিচকক আসলে কি বোঝাতে চেয়েছেন তা বুঝতে পারবো।
প্রথমেই দৃষ্টিপাত করা যাক এই মুভির নামকরণের দিকে। দ্যা বার্ডস নামটি দ্বৈত অর্থ প্রকাশ করে। একদিকে রয়েছে সত্যিকারের পাখি, যারা বোডেগা বে নামক শহরে আক্রমণ করে। অন্যদিকে বার্ড শব্দটি আবার নারীদেরকে বোঝাতে স্ল্যাং টার্ম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এক মতবাদ অনুসারে এই মুভিতে আমরা আসলে নারীদের আচরণ এবং জেন্ডার ডায়নামিক্সের ব্যাখ্যা দেখি। সত্যিকারের পাখিদের আক্রমণের সাথে মনের মানুষকে কাছে পাওয়া নিয়ে নারীদের দ্বন্দ্বের বিষয়টিকে মিলিয়ে দিয়েছেন এখানে হিচকক।
মুভিটি দেখে আমরা বুঝতে পারি যে মিচের সাথে অনেক নারীর যোগাযোগ রয়েছে। মেলানি বোডেগা বে তে আসলে যখন তার সাথে মিচের প্রাক্তন প্রেমিকা অ্যানির সাথে দেখা হয়, তখন মেলানির প্রতি অ্যানির ব্যবহার বেশ শত্রুভাবাপন্ন। যদিও একটা সময় অ্যানি পাখির আক্রমণের শিকার হয়েই মারা যান। এই ঘটনাটি সিম্বলিক। এটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে প্রিয় মানুষকে কাছে পাওয়ার দ্বন্দ্বে একজন নারী কিভাবে অপর নারীকে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করতেও পিছপা হন না।
গল্পের কেন্দ্রীয় বার্ড বা পাখি হলো মেলানি ড্যানিয়েলস। সে জনপ্রিয়, আকর্ষণীয়া এবং স্বাধীনচেতা আর পুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া মনোযোগ উপভোগও করে খুব৷ এছাড়া তার দুরন্তপনারও যথেষ্ট খ্যাতি আছে। যদিও অনেকেই এটিকে ভালো চোখে দেখে না। তাই, অনেকাংশে দ্যা বার্ডস আধুনিক নারীদের প্রতি বদ্ধ সমাজের নেতিবাচক মনোভাবকে প্রকাশ করে। যে সমাজ এখনও স্বাধীনচেতা নারীদেরকে গ্রহণ করার মত মানসিকতা গঠন করে উঠতে পারে নি। মুভি দেখার সময় অন্যান্য নারীরা মেলানির দিকে যেভাবে তাকায় সেটি দেখে দর্শক ব্যাপারটি অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন৷
এছাড়া তার সাথে পাখিদের আক্রমণেরও সম্পর্ক রয়েছে। সে বোডেগা বে শহরে আসার পরই সেখানে পাখিদের আক্রমণের শুরু হয়৷ মিচের সাথে তার সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পাখিদের আক্রমণ হতে দেখা যায়। যেমন : প্রথমবার মিচের সাথে দেখা হবার পর যখন তার সাথে আবার মিচের দেখা হওয়ার সময় হয়, তখনই একটি সীগাল মাথায় আঘাত করে তাকে রক্তাক্ত করে। যেন মিচের সাথে আবার দেখা করতে চাওয়ার ফলেই তাকে হামলার শিকার হতে হয়।
এরপর যখন সে মিচের বোন ক্যাথির জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে শহরে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখনই একটি সীগাল উড়ে এসে অ্যানির বাসায় দরজায় আঘাত করে এবং সেখানেই মারা যায়।
এক পর্যায়ে গিয়ে মেলানিকে বোডেগা বে শহরে ঘটে যাওয়া সব দূর্ঘটনার জন্য দায়ী করে এক নারী চরিত্র। গল্প থেকে আমরা ধারণা করতে পারি এই আত্মপ্রত্যয়ী এবং বিশ্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল কেতাদুরস্ত নারীর আগমনে ছোট্ট শহর বোডেগা বে-তে উত্তেজনা, দ্বন্দ্ব এবং সামাজিক ঐক্যের জন্য হুমকিস্বরূপ এমন যৌনতার সৃষ্টি হয়েছে।
এই চলচ্চিত্রের শেষের দিকে আমরা মেলানি ড্যানিয়েলসকে পাখিদের দ্বারা ভয়ংকর আক্রমণের শিকার হতে দেখি। এই সিনটি আবার সেক্সুয়াল ওভারটোনে ঠাসা। এবং একটা সময় আমরা দেখি আহত মেলানিকে মিচ কোলে করে নীচে নামাচ্ছে। এই সিনে আমরা অনুভব করি যে, বদ্ধ সমাজ আবারও সবসময় যে কাজটি করে সেটিই করেছে। মেলানিকে নামিয়ে এনেছে অন্য সবার স্তরে। এই মেলানি আর আগের মেলানি এক নয়। তার আত্মপ্রত্যয়, স্বাধীনচেতা মনোভাব লোপ পেয়েছে। এখন সে দূর্বল এবং ভীত। জীবনধারণ করতে এখন থেকে তাকেও নির্ভর করতে হবে বিপরীত লিঙ্গের মানুষের উপর।
আবার মিচের মা লিডিয়ার মনের মধ্যে চলা অন্তঃকোন্দলের মাধ্যমেও পাখিদের আক্রমণ ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। মা পাখি যেমন তার বাসা এবং বাচ্চাদের আগলে রাখতে চায়, তেমনি লিডিয়াও সবসময় মিচকে আগলে রাখতে চায়। মুভির একটা পর্যায়ে তিনি মেলানিকে বলেনও যে, “আমার ছেলে মনে হয় তোমাকে খুব পছন্দ করে কিন্তু এই ব্যাপারে আমার কেমন অনুভব করা উচিত তা বুঝতে পারছি না।”
মা-ছেলে হলেও মিচ আর লিডিয়ার মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা অস্বাভাবিক। মিচ তাকে ডার্লিং, ডিয়ার বলে ডাকে; প্রত্যেক সপ্তাহে তাকে দেখতেও যায়। পশ্চিমা বিশ্বে যা খুবই বিরল।
কয়েক বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মিচই এখন তার পরিবারের কর্তা। এবং লিডিয়া চায় মিচের জীবনে মুখ্য নারী চরিত্র হিসেবে কেবল তিনিই থাকবেন৷
অ্যানি আর মেলানির কথোপকথনের এক পর্যায়ে আমরা দেখি যে, অ্যানির সাথে যখন মিচের সম্পর্ক ছিলো তখন অ্যানির সাথেও লিডিয়ার খটমট লেগেছিলো। যদিও অ্যানি মেলানিকে নিশ্চয়তা দেয় যে মিচ আর লিডিয়ার মধ্যে ইডিপাস কমপ্লেক্সের মত কিছু নেই, তবুও যখন লিডিয়া পাখিদের আক্রমণের ফলে চোখ উপড়ানো কৃষকের মৃতদেহ দেখে তখন মনে হয় এটি যেন ইডিপাসের ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত। কারণ সফোক্লিসের নাটকে ইডিপাস যখন বুঝতে পারে যে সে তার মাকে বিয়ে করেছে, তখন সে তার দুই চোখ নষ্ট করে ফেলে।
লিডিয়া সবসময়ই এই ভয়ে ভীত থাকেন যে মিচ বিয়ে করলে আর তার প্রতি মনোযোগ দেবে না। মিচের কাছে অপাংক্তেয় হয়ে থাকতে তিনি চান না। আয়রনিকভাবে লিডিয়া মেলানিকে তখনই পছন্দ করেন যখন পাখির আক্রমণে সে জর্জরিত। কারণ এখন সে অসহায় এবং তার সাহায্য প্রয়োজন। এটি আবার মেলানির জন্যও ভালো। কারণ ছোলবেলা থেকে সে মাতৃস্নেহ বঞ্চিত। তাই শেষপর্যন্ত আমরা দেখি যে সংঘর্ষে না জড়িয়ে এই দুই চরিত্রের মধ্যে সহাবস্থান সম্ভব।
অন্যদিকে, মিচের সাথে মেলানির দেখা হয় যখন সে তার বোন ক্যাথির জন্য লাভবার্ড কিনতে গিয়েছিলো। পরে মেলানি নিজেই একজোড়া পাখি কিনে ক্যাথিকে উপহার দেয়। এই পাখিযুগলকে খাঁচায় বন্দী অবস্থায় বেশ কয়েকবার দেখা গেছে স্ক্রীনে। আর পুরো মুভিতে শুধু এরাই মানুষের উপর কোন আক্রমণ করে নি।
ভালোবাসা, বিবাহ বন্ধন এগুলোর মাধ্যমে আমরা নিজেদের চরিত্রের খারাপ দিকগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি, খাঁচায় বন্দী পাখিজোড়া দ্বারা হয়তো এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন আলফ্রেড হিচকক। খাঁচা এখানে হতে পারে বন্ধন বা বিবাহের প্রতীক।
দ্যা বার্ডসের কাহিনী আবার একটি সত্য ঘটনা থেকে কিছুটা অনুপ্রাণিত। ষাটের দশকে মন্টেরে বে নামক স্থানে পাখিরা অস্বাভাবিকভাবে শহরের দালানসমূহের উপর হামলে পড়তে থাকে। কয়েক দশক পর জানা যায় ওখানকার পাখিদের এমন অদ্ভুত আচরণের জন্য দায়ী সম্ভবত কোন বিষাক্ত জলজ উদ্ভিদ বা শ্যাওলা। যেগুলো তারা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেছিলো। সুতরাং, এই চলচ্চিত্র আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে আমরা কতটা কম জানি৷
এছাড়া প্রকৃতির কাছে আমরা কতটা অসহায়, যে কোন একটা প্রাকৃতিক উপাদানের অদল-বদলে আমরা কতটা নাজুক হয়ে পড়ি এই শিক্ষাও আমরা এই মুভি থেকে পেতে পারি। গ্লোবাল ওয়ার্মিং, ক্লাইমেট চেঞ্জ, করোনা বা কোভিড-১৯ এর সময়ে এই মুভি খুলে দিতে পারে ভাবনার নতুন নতুন দ্বার। তাই, এই চলচ্চিত্রকে মানুষের ক্রমাগত অবিবেচকের মত আচরণের বিরুদ্ধে প্রকৃতির প্রতিশোধের গল্পও ভাবতে পারেন আপনি।
মুভির শুরুতে আমরা দেখি মানুষজন স্বাধীনভাবে ঘুরছে, চলছে আর পাখিরা খাঁচায় আবদ্ধ। আর মুভির শেষে দেখি প্রকৃতির একটুখানি বিরুপ আচরণের ফলে মানুষেরাই আজ খাঁচায় বন্দী। করোনাকালীন লকডাউনও আমাদেরকে এই শিক্ষাই দেয়। দ্যা বার্ডস মুভিতে পাখিদের আচরণকে যদি আমাদের অস্বাভাবিক মনে হয়, তাহলে এই উপলব্ধিও আমাদের হওয়া উচিত যে আমরা মানুষরাও প্রত্যেকদিন এমন অস্বাভাবিক আচরণই করে চলেছি অন্য মানুষ বা প্রকৃতির সাথে।
আরো পড়ুনঃ
ডু দ্যা রাইট থিং (1989) : স্পাইক লির ম্যাগনাম ওপাস যা তিন দশক পর এখনও প্রাসঙ্গিক
ইহুদীবাদী ইসরায়েলের ইতিহাস (১ম পর্ব): মুসলমানদের জেরুজালেম বিজয়
ড্যাফনে ডু মরিয়ের এর মূল গল্পে পাখিরা ছিলো নাৎসিবাদের প্রতীক। আর দ্যা বার্ডস মুভিটি যখন মুক্তি পায় তখন চলছিলো স্নায়ুযুদ্ধ। এই মুভির মাত্র এক বছর আগেই কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস হয়েছিলো। পাখিদের আক্রমণে এই মুভিতে মানুষের টেবিল বা অন্য কোন শক্ত কোন বস্তুর নিচে অবস্থান নেওয়া যেন নিউক্লিয়ার বোমা থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাঙ্কারে অবস্থান নেওয়াকেই মনে করিয়ে দেয়৷ তাই, আলফ্রেড হিচকক যেন এই মুভির মাধ্যমে মানুষকে নিউক্লিয়ার অস্ত্রের ব্যবহারের ফলে কি ধ্বংসাত্বক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে সেই ব্যাপারে ইঙ্গিতও দিয়ে থাকতে পারেন।
রেস্টুরেন্টে বসে থাকা মাতাল লোকটির কথায় যেন সেই ভাবই প্রতিধ্বনিত হয়। কারণ পাখিদের আক্রমণের মধ্যেই তিনি বলে ওঠেন, “ইট’স দ্যা এন্ড অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড!”
দ্যা বার্ডস মুভিতে পাখিরা যেভাবে আক্রমণ করে তার সাথে বাইবেলে বর্ণিত পঙ্গপালের আক্রমণের সাথে মিল রয়েছে। যেন মানুষের করা ক্রমাগত পাপ তাদেরকে শাস্তি দিতে আসছে। এই শাস্তি হতে পারে তাদের একের সাথে অপরের বিরুপ আচরণের মাধ্যমে অথবা তাদের প্রতি প্রকৃতির বিরুপ আচরণের মাধ্যমে।
তাই, দ্যা বার্ডস মুভিতে পাখিদের এমন ধ্বংসাত্মক আচরণের পিছনে কারণ হলো মানুষ এবং তাদের অবিবেচকের মত আচরণ। যতদিন মানুষ প্রকৃতি এবং অন্যান্য সব প্রাণীদের ব্যাপারে না ভেবে কেবল নিজের কথা ভাববে, ততদিন একের পর এক দূর্যোগ তাদের উপর নেমে আসবে বিভিন্নভাবে, বিভিন্নরূপে। আলফ্রেড হিচককের মত গুণী নির্মাতারা এভাবেই তাঁদের কাজের মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক করেন, ভাবান, জাগ্রত করেন তাদের ঘুমন্ত বিবেককে।
This is a Bangla Article. Here, everything is written about “The Birds (1963) and The Director Alfred Hitchcock “
Featured Image Taken from this link: “janeaustenrunsmylife“
All Links are Hyperlinked