বেনসন অ্যান্ড হেজেস প্রথম অংশ প্রতিষ্ঠা এবং প্রাথমিক বিকাশ এবং কি ভাবে ব্যবসার সম্প্রসারণ হলো তা নিয়ে বিস্তারিত ভাবে জানতে পড়তে পারেন প্রথম অংশ।
নানা রদবদল এবং কোম্পানির বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া
১৯৬৫ সালে বেনসন অ্যান্ড হেজেস লিমিটেড ব্রিটেনের বাজারে মেফেয়ার এবং স্টার্লিং নামে দুটি নতুন সিগারেট ছাড়ে। এবং ১৯৬৬ সাল নাগাদ তারা ব্রিটেনের সর্ববৃহৎ কিং-সাইজ সিগারেট প্রস্তুতকারী ব্র্যান্ডে পরিণত হয়। যদিও কিং-সাইজ সিগারেট ছিলো গ্রাহকদের কাছে বিক্রিকৃত মোট সিগারেটের মাত্র ৪ শতাংশ। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ বেনসন অ্যান্ড হেজেস লিমিটেড এর প্রধান কার্যালয় ছিলো তাদের প্রথম অফিসের জায়গায়; অর্থাৎ লন্ডনের ১৩ বন্ড স্ট্রীটে। ১৯৯৯ সালে রাণী ২য় এলিজাবেথ কোম্পানির রাজকীয় সনদ রদ করেন৷ কেননা, রাজপরিবারে তখন আর তেমন সিগারেটের প্রয়োজনীয়তা ছিলো না। ফলে কোম্পানি তাদের সিগারেট বক্সের ফ্ল্যাপের উপর থেকে রাজকীয় সনদের সীল সরিয়ে নেয়। ২০০৭ সালে জাপান টোব্যাকো৯.৭ বিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে গ্যালাহার্সকে কিনে নেয়।
১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৭২ সালের জানুয়ারী; এই সময়ের মধ্যে সিল্ক কাট লো-টার সিগারেটের বিক্রি ৪ গুণ বৃদ্ধি পায়৷ ধারণা করা হয় ১৯৭৩ সালে বেনসন অ্যান্ড হেজেস ছিলো আমেরিকার ৮ম সবচেয়ে বেশি বিক্রিত সিগারেট ব্র্যান্ড।
১৯৮৬ সালে বেনসন অ্যান্ড হেজেস (কানাডা) রথম্যান্সনামক কোম্পানির সাথে একীভূত হয়। তখন এই কোম্পানির নাম হয় রথম্যান্স, বেনসন অ্যান্ড হেজেস ইনকর্পোরেটেড। এক্ষেত্রে রথম্যান্স কোম্পানির ৬০ শতাংশ এবং ফিলিপ মরিস কোম্পানির ৪০ শতাংশের মালিক হয়। ২০০৮ সালে ফিলিপ মরিস ২ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে পুরো রথম্যান্স, বেনসন অ্যান্ড হেজেস ইনকর্পোরেটেড কিনে নেয়। তখন তারা নিজেদের কোম্পানির অপর একটি শাখা সৃষ্টি করে এবং এটির নাম দেয় ফিলিপ মরিস ইন্টারন্যাশনাল।
১৯৯৯ সালে আমেরিকান প্রতিষ্ঠান অল্ট্রিয়াবেনসন অ্যান্ড হেজেস (ইউএসএ)ক্রয় করে।
বেনসন অ্যান্ড হেজেসএখনও ফিলিপ মরিস ইউএসএ, ফিলিপ মরিস ইন্টারন্যাশনাল, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো এবং জাপান টোব্যাকোর প্রধান ব্র্যান্ড। পার্লামেন্টবিশ্বের ১২তম সর্ববৃহৎ বিক্রিত সিগারেট ব্র্যান্ড।
বিশ্বজুড়ে বেনসন অ্যান্ড হেজেস
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, রাশিয়া, মিশর, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে বেনসন অ্যান্ড হেজেসএর সিগারেট বিক্রি হয়। গ্যালাহার্স গ্রুপকে কিনে নেওয়া জাপান টোব্যাকো এখনও হ্যামলেট সিগার উৎপাদন এবং বিক্রি করে থাকে।
সিগারেটের রং, ফিল্টারের সাইজ এবং প্যাকেটে সিগারেটের সংখ্যা
অঞ্চলভেদে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এইসব সিগারেটের রং হয় সোনালী বা রুপালী। এছাড়া কোথাও কোথাও লাল, সবুজ, নীল, সাদা বা কালো রং এর বেনসন অ্যান্ড হেজেসও দেখা যায়।
ব্রিটেনে ২০০১ সালে বেনসন অ্যান্ড হেজেস তাদের স্পেশাল ফিল্টারের বদলে নিয়ে আসে গোল্ড এবং সিলভার ভার্সন। সিলভার ভার্সনে টার এবং নিকোটিন উভয়ের পরিমাণ ছিলো কম।
২০০৮ সালে তারা ১৪টি সিগারেটসহ প্যাকেট নিয়ে আসে বাজারে। পাশাপাশি আগে থেকে বিদ্যমান ১০টি এবং ২০টি সিগারেটসহ প্যাকেট তো ছিলোই।
২০১২ সালের অক্টোবরে তারা নিয়ে আসে তাদের বেনসন অ্যান্ড হেজেস ডুয়ালব্র্যান্ড। কেউ যদি মেন্থল ফ্লেভারের সিগারেট পছন্দ করতো, তাহলো তারা ফিল্টারের ভেতরে থাকা ক্যাপসুলে চাপ দিয়ে ঐ ফ্লেভার নিয়ে আসতে পারতো। আবার ক্যাপসুল না ভেঙ্গে সাধারণ সিগারেটের স্বাদ পাওয়ারও উপায় ছিলো এই ব্র্যান্ডে।
২০১৮ সালে তারাব্লু, স্কাই ব্লু, ব্লু ডুয়াল সুপারকিংস, ব্লু ডুয়াল ডাবল ক্যাপসুলনামক ভার্সন নিয়ে আসে।
এইসব সিগারেটের ক্ষেত্রে ফিল্টার সাইজ হলো কিং সাইজ এবং সুপারকিং সাইজ। কোন কোনটি আবার উভয় সাইজেই পাওয়া যায়।
এছাড়া বেনসন অ্যান্ড হেজেস রোলিং টোব্যাকোও বিক্রি করে। এটি গোল্ড এবং সিলভার উভয় ভার্সনেই পাওয়া যায়। তবে সিলভার ভার্সনটি কেবল ৩০ গ্রামের পাউচ প্যাকে পাওয়া যায়।
অস্ট্রেলিয়ায় তাদের সিগারেটের ভার্সনগুলো আবার ক্লাসিক টুয়েন্টি ফাইভস, রিচ টুয়েন্টি ফাইভস, স্মুথ টুয়েন্টিজ, স্মুথ টুয়েন্টি ফাইভস, সাটল টুয়েন্টি ফাইভস, ফাইন টুয়েন্টি ফাইভস এবং আল্টিমেট টুয়েন্টি ফাইভসনামে পরিচিত।
ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়ায় প্যাকেজিং এর আইন অনুযায়ী এগুলোকে প্যাকেটজাত করা হয়।
ফিলিপ মরিসের মালিকানাধীন বেনসন অ্যান্ড হেজেস (ইউএসএ) আমেরিকায় তাদের উৎপাদিত সিগারেট সমূহের নাম দিয়েছে যথাক্রমে :-
কিংস, মেন্থল, মাল্টিফিল্টার কিংস, ডিলাক্স, ডিলাক্স মেন্থল, লাক্সারিএবংলাক্সারি মেন্থল।ভার্সনভেদে এগুলো বক্স, সফট প্যাক অথবা উভয় ধরণের প্যাকেটে করে বিক্রি করা হয়।
আমাদের বাংলাদেশে বেনসন অ্যান্ড হেজেস
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো১৯৫৬ সালে বেনসন অ্যান্ড হেজেস (ওভারসিজ)কিনে নেয়। এর মাধ্যমে তার ফিলিপাইন এবং তাইওয়ান ব্যতীত অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ এশিয়া এবং প্যাসিফিক অঞ্চলে বেনসন অ্যান্ড হেজেস সিগারেটের বাজারজাত করার অধিকার লাভ করে। তারাই বাংলাদেশে বেনসন অ্যান্ড হেজেস সিগারেট বিক্রি করে। ১৯৯৭ সালে তারা প্রথম এই কোম্পানির বেনসন অ্যান্ড হেজেস স্পেশাল ফিল্টারদেশের বাজারে ছাড়ে। শুরু থেকেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এদেশে বেনসন অ্যান্ড হেজেস। উত্তরোত্তর এই জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি পায়। ২০১২ সালে তারাই প্রথম এদেশের মানুষকে ক্যাপসুলসমৃদ্ধ ফিল্টার বিশিষ্ট সিগারেটের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। এই ব্র্যান্ডের নাম ছিলো বেনসন অ্যান্ড হেজেস সুইচ।২০১৮ সালে তারা আরো একটি সম্পূর্ণ নতুন ধরণের ব্র্যান্ড লঞ্চ করে। এটির নাম বেনসন অ্যান্ড হেজেস প্লাটিনাম।এটির ফিল্টার ছিলো টিউব আকৃতির এবং কিছুটা অংশ ছিলো ফাঁপা৷
বর্তমানে বাংলাদেশে তাদের স্পেশাল ফিল্টার, সুইচ, প্লাটিনাম এবং লাইট নামক ভার্সন পাওয়া যায়।
বিতর্ক
বিশ্বের অনেক বড় কোম্পানির মত বিতর্ক সঙ্গী হয়েছে বেনসন অ্যান্ড হেজেসেরও। এক্ষেত্রে দায় মূলত কোম্পানির কানাডা শাখার।
কানাডিয়ান ক্লাস অ্যাকশন লস্যুট
২০১২ সালের ১২ই মার্চ রথম্যান্স, বেনসন অ্যান্ড হেজেসসহ মোট ৩টি সর্ববৃহৎ কানাডিয়ান কোম্পানিকে সেই দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ক্লাস-অ্যাকশন লস্যুটের মুখোমুখি হতে হয়। এতে তাদের বিরোধীরা ছিলেন প্রাক্তন এবং বর্তমান ধূমপায়ীরা। এজন্য তাদেরকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে মোট ২৭.৩০ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়।
২০১৫ সালে অপর একটি ঘটনায় ঐ ৩টি কোম্পানিকে আরো ১৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। এতে তাদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন কুইবেকের ধূমপায়ীরা। এছাড়া কানাডার কয়েকটি প্রদেশ একত্রিত হয়ে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ধূমপানের ফলে হওয়া স্বাস্থ্যক্ষতির কারণে যে চিকিৎসা ব্যয় হয়, তা আদায়ের জন্য মামলা করার কথা ভাবছে।
স্পন্সরশিপ এবং পপুলার কালচারে বেনসন অ্যান্ড হেজেস
নিজেদের পণ্যের নাম বিশ্বের নানা প্রান্তে পৌঁছে দিতে ফর্মুলা ওয়ান, অস্ট্রেলিয়ান ট্যুরিং কার, আইস স্কেটিংএবং ক্রিকেট খেলার নানা সিরিজ এবং টুর্নামেন্টে স্পন্সর হয়েছে তারা। কিন্তু পরে খেলাধুলায় তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদেরকে ভিন্ন পথে হাঁটতে হয়।
এছাড়া নিউজিল্যান্ডে ফ্যাশন উইক এবং কানাডাতে আতশবাজি বিষয়ক কম্পিটিশনেরও স্পন্সর হয়েছে তারা।
জনপ্রিয় ব্রিটিশ ব্যান্ড ওয়েসিস এর নোয়েল এবং লিয়াম গ্যালাঘারবেনসন অ্যান্ড হেজেসের ভক্ত। নোয়েল তো নিজের দুটি বিড়ালের নামও দিয়েছেন বেনসনএবং হেজেস।
এই কোম্পানির নাম ব্যবহৃত হয়েছে মুভিতেও। নিউজিল্যান্ডে নিষিদ্ধ নামের তালিকায় স্থান পেয়েছিলো বেনসনএবং হেজেস।এই ঘটনার পর এক দম্পতি তাদের জমজ বাচ্চার নাম রাখেন বেনসন এবং হেজেস। আমেরিকান ব্যান্ড ফানতাদের ২য় অ্যালবামে একটি গানের নাম রাখে এই কোম্পানির নামে।
এছাড়া দ্যা কাক্কু’স এগনামে পরিচিত বিখ্যাত হ্যাকিং এর ঘটনায় অপরাধীরা ‘বেনসন’ এবং ‘হেজেস’ এই নাম দুটি ব্যবহার করে।
This is a Bangla article. This article is about the history of the famous cigarette brand Benson & Hedges.
All the necessary links are hyperlinked.
Featured images are collected from Google.