আই অ্যাম লিজেন্ড মুভিটা কমবেশি আমরা সবাই দেখেছি। ভাইরাসের কারণে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া নিউইয়ার্ক সিটির কাল্পনিক করুণ চিত্র আমরা সেখানে দেখতে পায়। চরম ভগ্নদশা আর কঙ্কালের মতো ঝুলতে থাকা সুউচ্চ বিল্ডিংগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় মানববিহীন পৃথিবীর একটি চিত্র। আমরা যে গ্রহে বসবাস করছি তার নাম পৃথিবী। পৃথিবী সৌরজগতের একটি গ্রহ। আর সৌরজগতের কেন্দ্রবিন্দু সূর্য মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির একটি নক্ষত্র। এই পৃথিবীটা আমাদের জন্য, একে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদেরই। কিন্তু আমরা কি আসলেই পৃথিবীর দেখভাল করতে পারছি? নাকি ঠেলে দিচ্ছি ধ্বংসের মুখে! আমরা চাইলেই হয়তো কিছু ক্ষেত্রে এই পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারি। এর জন্য প্রয়োজন একটু বিজ্ঞান সচেতনতা। ডাইনোসর এই পৃথিবীতে দোর্দন্ড প্রতাপে দাপিয়ে বেড়িয়েছে ১৬ কোটি ৫০ লক্ষ বছর। কিন্তু ধ্বংস হয়ে গেছে ৬ কোটি ৫০ লক্ষ বছর পূর্বে। তখন হয়তো অনেক কিছুই করার ছিল না। কিন্তু আমরা মানুষ হিসেবে তো আমাদের পৃথিবীকে রক্ষার জন্য অনেক কিছুই করতে পারি। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি, প্রকৃতি ধ্বংস, সম্পদের অপব্যবহার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি, জলবায়ুর আকস্মিক পরিবর্তন, সম্পদের সমাপ্তিসহ নানাবিধ কারণে ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে আগামীর পৃথিবী। বেশ কিছু কারণে এ পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তার মধ্যে কিছু আছে মানবসৃষ্ট কারণ, আবার কিছু আছে প্রাকৃতিক। এমনটি ৮টি কারণ নিয়ে আজকে জানার চেষ্টা করব।
আকস্মিক জলবায়ুর পরিবর্তন
ক্রমবর্ধমানভাবে বৃদ্ধি পাওয়া মানুষের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে আমাদের এই পৃথিবী। এর ফলে বাতাসে বৃদ্ধি পাচ্ছে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ। অপরদিকে, প্রকৃতি ধ্বংস গাছপালা কেটে বন-জঙ্গল উজাড় করার মাধ্যমে কমে যাচ্ছে অক্সিজেন। যার ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে।
কয়েক দশক আগে বিশ্লেষকেরা মনে করত, আগামী ১০০ বছরে পৃথিবীর তাপমাত্রা গড়ে সর্বোচ্চ ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে তাতে করে এই তাপমাত্রার ৪ থেকে ৬ ডিগ্রী পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। ২০১৩ সালে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে মানুষ আবহাওয়ার সাথে খাপখেয়ে নিতে পারবে কিনা সেটা নিশ্চিত না। আর এই উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাবে। উপকূলীয় এলাকাসহ পৃথিবীর অনেকাংশই তলিয়ে যাবে সাগরের নিচে। এইতো গেল আগামী ১০০ বছরের হিসাব। কিন্তু ১০০০ বছর পরে কিংবা ১০ হাজার বছর পরে কি হতে পারে বলতে পারেন?
পারমাণবিক যুদ্ধ
একটি পারমাণবিক যুদ্ধের কারণে হয়তো পৃথিবী থেকে মানব সভ্যতার তাৎক্ষনিক বিলুপ্তি ঘটবে না। কিন্তু এর তেজস্ক্রিয়তা ও বিকিরণ এর প্রভাবে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে মানব জাতি। পরমাণু বিশ্লেষক সেথ বম বলেন-
পারমাণবিক যুদ্ধের পর পৃথিবীতে যে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়বে এবং যে শহরগুলো জ্বলতে থাকবে এই তেজস্ক্রিয়তা এবং ছাই মেঘের উপরে স্ট্রাটোস্ফিয়ার পৌঁছে যেতে পারে। দশকের পর দশক ধরে এই তেজস্ক্রিয়তার ছাই সেখানেই থাকবে। একসময় হয়তো সূর্যকে ঢেকে দেবে, অন্ধকার নেমে আসবে পৃথিবীতে।
পারমাণবিক যুদ্ধের ফলে মানুষের ধ্বংস হতে পারে কয়েকটি ধাপে। প্রথমে ব্যাপক প্রাণহানি, এরপর পরিবেশগত বিপর্যয়, অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং তেজস্ক্রিয়তার ছড়িয়ে পড়াতে ধীরে ধীরে মানবজাতির বিলুপ্তি। পারমাণবিক যুদ্ধের ফলে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যে প্রভাব পড়বে সেটা হচ্ছে ‘নিউক্লিয়ার উইন্টার’। এর ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা শত শত বছর ধরে ক্রমাগত কমতে থাকবে। হতে পারে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী একটি গ্রহ হিসেবে পৃথিবী বদলে যাবে। পারমানবিক বিশ্লেষক হেনরি কিসিঞ্জারের মতে, দুটি সশস্ত্র পারমানবিক শক্তির (যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া) মধ্যে পারমানবিক যুদ্ধ সংঘটিত হতে পারে। ২০০৬ সালে আমেরিকার জিওফিজিক্যাল পরিষদের বার্ষিক বৈঠকে একটি বিষয় সবচেয়ে জোর দিয়ে আলোচিত হয়েছিল যে, দুইটি দেশের মধ্যে পারমানবিক যুদ্ধ শুরু হলে সেট কখনই আঞ্চলিক পর্যায়ে থাকবে না।
বৈশ্বিক মহামারী
১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু মতো বৈশ্বিক মহামারী গুলো কয়েক মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করেছে। কিন্তু মানব সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটাতে পারেনি। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন এমন মহামারিও ঘটতে পারে যা পৃথিবীর সমগ্র মানব জাতিকে বিলুপ্ত করে দিতে পারে। স্প্যানিশ ফ্লুর পর বিশ্বব্যাপী ওষুধ শিল্পের ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে, আধুনিক হয়েছে পৃথিবী। একদিকে যেমন স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের উন্নতি হয়ছে, অন্যদিকে মানুষের যাতায়াতের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, শহরে মানুষের ঘনত্ব বেড়েছে । এটি বিশ্বব্যাপী মহামারী কে আরো বেশি ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
স্প্যানিশ ফ্লুতে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। তখন মানুষ ভ্রমণ করত ট্রেনে কিংবা নৌপথে। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে মানুষের যাতায়াত খুব দ্রুত হয়েছে। বিমানে চড়ে মানুষ খুব কম সময়ের মধ্যে এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে পাড়ি দিতে পারে। যার কারণে মানুষ খুব দ্রুত আক্রান্ত হতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়াতে পারে তড়িৎ গতিতে। ‘ব্ল্যাক ডেথ’ বা কালো মৃত্যুতে প্রায় ২০ কোটি মানুষ মারা পড়ে। ১৩৪৬ সাল থেকে ১৩৫৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর ব্যাপী বিরাজমান ছিল এই এপিডেমিক। এর হাত থেকেও মানব সভ্যতা রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু এর চেয়েও মারাত্মক প্যানডেমিক পৃথিবীতে আসতে পারে এবং এর মাধ্যমে মানবজাতির বিলুপ্তি ঘটতে পারে, একথা অস্বীকার করার উপায় নাই।
পরিবেশগত বিপর্যয়
পরিবেশগত বিপর্যয় মাধ্যমে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা, সম্পদের বিনাশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা জলবায়ুর আকস্মিক পরিবর্তন পৃথিবীকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীর ধ্বংস ডেকে আনতে পারে । কিন্তু লন্ডন ইউনিভার্সিটির গবেষক কারিন কুহলেম্যান মনে করেন সবচেয়ে বিপদজনক হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা। তিনি বলেন-
মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা এমন একটি বিষয় যা আলোচনায় খুব কমই উঠে আসে। এর পাশাপাশি আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে সম্পদের বিনাশকিন্তু এটা নিয়ে আমরা অনুতপ্ত হলেও এটা নিয়ে কথা বলতে চায় না।
জলবায়ু পরিবর্তনে ঠেকাতে হলে সর্বপ্রথম মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা রোধ করতে হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি কমানো না যায় তাহলে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানো সম্ভব না। এর ফলে ধ্বংসের দিকে চলে যেতে পারে পৃথিবী।
বিশ্ব ব্যবস্থার পতন
মানব সৃষ্ট কারণের মধ্যে এটি অন্যতম। বিশ্ব ব্যবস্থার পতন বলতে পৃথিবীর রাজনৈতিক এবং অর্থনীতিক ব্যবস্থা ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে। আমরা এই পৃথিবীতে নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে বসবাস করি। কিন্তু যদি ধসে পরে এই কাঠামো তখন কি হবে? উচ্চ দেউলিয়ার হার, বেকারত্বের হার, পারিবারিক ও সামাজিক অশান্তি, হতাশাগ্রস্ত, মানসিক বিপর্যয়, মৃত্যুর হার বৃদ্ধি এবং জন্মহার কমে যাওয়া ইত্যাদি পৃথিবীর ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা বুঝতে পারি পৃথিবীর অনেক দেশেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পরিবর্তে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। কারণ সেখানে রয়েছে হতাশা, অশান্তি, আত্মহত্যা, মৃত্যুহার বেশি এবং জন্মহার কমে যাওয়া এটা অনেক দীর্ঘ মেয়াদী একটি প্রক্রিয়া। এর ফলে পৃথিবী হয়ত ধ্বংস হবে না কিন্তু ডাইনোসরের মতো বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে মানবজাতি।
বৈশ্বিক অর্থনীতির পতনের ফলে মন্দা দেখা দিবে বিশ্বজুড়ে। এরপর ভেঙ্গে পড়বে সামাজিক কাঠোমো। দুর্ভিক্ষ, অনাহার অপুষ্টির মাধ্যমে একটি মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলর যেতে পারে মানবসভ্যতা।
বৃহৎ গ্রহানুর আঘাত
অতীতে মহাবিশ্বে পৃথিবীর চেয়ে অনেক বড় গ্রহ উল্কাপিন্ডের আঘাতে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। পৃথিবীর ক্ষেত্রে যে এমনটা কখনই ঘটবে না একথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। যদিও এ সম্ভবনা খুবই কম। মহাবিশ্ব থেকে ছুটে আসা কোনো বস্তুর আঘাতে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে একথা কয়েক দশক আগেও গুরুত্ব পায়নি বিজ্ঞানীদের কাছে। কিন্তু ১৯৮০ সালের পর এ ধারণা পাল্টে দিয়েছেন দুইজন বিজ্ঞানী। লুইস আলভারেজ ও তার ছেলে ওয়াল্টার আলভারেজের যৌথ প্রতিবেদনে বের হয়ে আসে ডাইনোসর বিলুপ্তির আসল রহস্য। তাদের দাবী, মহাকাশ থেকে ছুটে আসা একটি গ্রহাণুর আঘাতে ধ্বংস হয়ে গেছে ডাইনোসর প্রজাতি। তাদের এই দাবি সমর্থন পেয়েছে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সংস্থার কাছ থেকে।
এরপর আলোচনায় আসে বিষয়টি। মানবজাতির বিলুপ্তির পেছনেও এমন কোনো ঘটনা ঘটতে পারে। যদিও ডাইনোসর পৃথিবীর বুকে সাফার করেছে অনেক দীর্ঘ সময়। সে হিসেবে মানুষ পৃথিবীতে খুব কম সময়ই আছে। কিন্তু, বৃহৎ গ্রহানুর আঘাতে যে মানব সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটতে পারে একথা উড়িয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা ‘আর্টিফিসাল ইন্টেলিজেন্স’ মানবজাতির বিলুপ্তি ঘটাতে সক্ষম। একথা স্বীকার করেছেন খোদ স্টিফেন হকিং থেকে শুরু করে ইলন মাস্ক পর্যন্ত। এছাড়া বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন বিজ্ঞানী মনে করেন, এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবজাতির জন্য হুমকির কারণ হয়ে উঠতে পারে ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভির্সিটির অধ্যাপক স্টুৃর্ট রাসেল তার ‘হিউম্যান কম্প্যাটিবল: এ আই এন্ড দি প্রবলেম অব কন্ট্রোল’ বইতে বলেন,
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবর্ট তৈরি করা হয় বিভিন্ন নির্ধারিত কাজের জন্য, কাজের ক্ষেত্রে এরা দিন দিন এতটাই দক্ষ হয়ে উঠছে যে, দূর্ঘটনাবসত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে যদি তাদের খারাপ কাজে ব্যবহার করা হয় তাহলে এক সময় আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতে পারে।
এই বুদ্ধিমত্তাগুলো এতটাই দক্ষ হয়ে উঠছে যে, একসময় মানুষ হয়ত ভেবে বসতে পারে যে, সবকাজ তো এভাবেই সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে, মানুষের কি প্রয়োজন। হয়ত এক সময় সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রেও মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। বিকল্প হয়ে উঠবে রোবট। আর এভাবেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়ে উঠবে মানুষের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।
ইতিমধ্যেই আমরা জানি যে উন্নত বিশ্বে শিল্প ইন্ডস্ট্রিতে মানুষের কর্মসংস্থান কেড়ে নিয়েছে এই রোবটগুলো। বিশ জন শ্রমিক যে কাজ করতে পারে একটি রোবট একাই সেই কাজটি করে ফেলছে। এভাবেই একসময় পৃথিবীতে মানুষের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যাবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাবে। কোনোভাবে যদি হিতে বিপরীত হয়ে যায় তাহলে, এই প্রযুক্তিগুলো মানুষ প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হবে। আর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তারা হবে মানুষের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটা দৃশ্যপটের কথা ভেবে বিজ্ঞানীরা খুবই চিন্তিত। সেটা হলো ‘ডিপ ফেক’ ভিডিও তৈরি। এর মাধ্যমে বিখ্যাত ব্যক্তিদের হুবহু নকল ভিডিও তৈরি করা সম্ভব হবে। আপনি যা চান, যেভাবে চান, সেভাবে কোন বিখ্যাত ব্যক্তি কে উপস্থাপন করা সম্ভব। ধরুন, বিশ্বের কোন পারমাণবিক শক্তিধর দেশের নেতা অপর কোন পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রকে হুমকি দিচ্ছে এমন একটি ফেক ভিডিও তৈরি করা হল। এই নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হল পারমাণবিক শক্তিধর দুটি দেশের মধ্যে। প্রযুক্তি যত উন্নত হতে থাকবে এ ধরনের তৎপরতা থামানো ততোই কঠিন হয়ে পড়বে
মহা অগ্নুৎপাত
আমরা যে গ্রহে বসবাস করি তার উপরিভাগ শীতল হলেও অভ্যন্তর গলিত এবং উত্তপ্ত। মাঝে মাঝে আগ্নেওগিরির অগ্নুৎপাতের মাধ্যমে গলিত লাভা বাইরে বের হয়ে আসে । কিন্তু এই মহা অগ্নুৎপাতের মাধ্যমে পৃথিবী জিবজগৎ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরীণ অংশের বিস্ফোরণের মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে পৃথিবী। মহা বিস্ফোরণের মাধ্যমে যে পৃথিবীর জীবজগৎ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে তার উৎকৃষ্ট নজির রয়েছে পার্মিয়ান ও ট্রায়াসিক যুগে। সে সময় অগ্নুৎপাত এর মাধ্যমে পৃথিবীর প্রায় ৯০ শতাংশ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
কিছু কিছু বিজ্ঞানী অবশ্য বলে থাকেন যে, পার্মিয়ান এবং ট্রায়াসিক যুগের মহাবিস্ফোরণ বর্তমান মানব সভ্যতার সময়সীমার মধ্যে সংঘটিত হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু বৈশ্বিক শীতলীকরণ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় মাধ্যমে দুর্ঘটনা যে ঘটবে না এ কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই মহা অগ্ন্যুৎপাতের ফলে মারাত্মকভাবে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হবে, জীবজগৎ ধ্বংস হয়ে যাবে, খাদ্য উৎপাদন ধ্বংস হবে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা। তৈরি হবে মহামারীর মতো বিপর্যয়। এর মাধ্যমে পৃথিবীতে মানব সভ্যতার মহাসংকট তৈরি হতে পারে। এর ফলে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে মানবসভ্যতা। যদিও এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। পৃথিবী ধ্বংসের এই ৮টি কারণ ছাড়াও আরও জানা অজানা অসংখ্য কারণ থাকতে পারে। পৃথিবী ধ্বংস বা মানব সভ্যতার বিলুপ্তি যে ঘটবে, এই কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আমরা সচেতন হলে হয়ত সেটা শুধু দীর্ঘায়ত হতে পারে। নিরাপদে থাকতে পারে আমাদের ভবিষ্যৎ অনাগত প্রজন্মগুলো।
This is a Bangla Article. This is About eight reasons why the earth can be destroyed
All the references are hyperlinked within the article.
Featured Image: Britannica