জন্ম এবং প্রাথমিক জীবন
১৯৪০ সালের ১৮ই নভেম্বর সালালাহরে আল সাইদ রাজপরিবারের সুলতান কাবুস জন্মগ্রহণ করেন। ১৭৪৪ সাল থেকে এই পরিবারটি আরব উপদ্বীপে দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ওমান শাসন করে আসছে।
সুলতান কাবুসের প্রাথমিক শিক্ষা অর্জিত হয় সালালাহরেই। এরপর জ্ঞান অর্জনের জন্য অল্প বয়সেই পাড়ি জমান ভারতের পুনেতে। পুনেতে তিনি ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি শঙ্কর দয়াল শর্মার ছাত্র ছিলেন। এরপর মাত্র ১৬ বছর বয়সে শিক্ষা গ্রহণের জন্য চলে যান যুক্তরাজ্যে। ২০ বছর বয়সে ভর্তি হন লন্ডনের বিখ্যাত ‘রয়েল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্টে’। সেখান থেকে ১৯৬২ সালে স্নাতক সমাপ্ত করার পর যোগ দেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে।
বৃটিশ আর্মির একজন সাধারণ সৈন্য হিসেবে তিনি জার্মানিতে এক বছর দায়িত্ব পালন করেন। সামরিক দায়িত্ব পালন সমাপ্ত করে পুনরায় ফিরে আসেন লন্ডনে। সেখান থেকে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন। তার বাবা সুলতান সাঈদ বিন তৈমুরের কড়া নজরদারি থেকে বাঁচতে অনুকূল সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন কাবুস। তারপর ফিরে আসেন নিজ দেশ ওমানে। সালালাহতে ফিরে আসার পর তিনি ইসলাম এবং দেশের ইতিহাসের উপর পড়াশোনা করেন।
ক্ষমতা দখল
সুলতান কাবুসের শাসনামলে ওমান
শুধু তাই নয়, সুলতান কাবুসের আমলেই ওমানে একটি লিখিত সংবিধান প্রণীত হয়। ১৯৯৬ সালের নভেম্বর মাসে রাষ্ট্রের মৌলিক বিধি উপস্থাপন করেন ওমানের সুলতান কাবুস বিন সাঈদ আল সাঈদ। এটিই হলো ওমানের প্রথম লিখিত সংবিধান। এই সংবিধান ইসলামী আইন ও প্রচলিত আইনের কাঠামোয় বিভিন্ন অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এর মাধ্যমে মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে কোনো সরকারি শেয়ার হোল্ডিং সংস্থার কর্মকর্তা হওয়া যাবে না। ২০১০ সালের হিসাব মতে, ওমানের মানুষের গড় আয়ু ৭৬ বছর, যা পৃথিবীর দীর্ঘ আয়ুর দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।
১৯৭০ সালে যখন সুলতান কাবুস ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন ওমানে মাত্র তিনটি স্কুল ছিল, উচ্চ শিক্ষার কোনো মাধ্যম ছিল না। বর্তমানে ওমানে প্রায় ১১ হাজার স্কুল রয়েছে। এছাড়াও উচ্চশিক্ষার জন্য রয়েছে অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে। উচ্চশিক্ষার জন্য ওমানের সর্বপ্রথম ১৯৮৬ সালে ‘সুলতান কাবুস বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
বর্তমানে ওমানের নারীরা ইসলামিক বিধি মেনে স্বচ্ছন্দে চলাচল করতে পারেন। পড়াশোনা, চিকিৎসা কিংবা অফিস-আদালতসহ সব জায়গাতেই নারীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। মজার ব্যাপার হল, অন্যান্য দেশে নারীদের অনগ্রসরতার কারণ নারী কোটা রাখা হয়। কিন্তু ওমানের সুলতান কাবুস বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা অনগ্রসর, যার কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের কোটা রয়েছে। কর্মক্ষেত্রেও পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমান ভূমিকা রাখছে যা সুলতান কাবুস এর শাসনামলে সম্ভব হয়েছে।
তখন থেকেই সেদেশের গণমাধ্যমগুলোর প্রতি কড়াকড়ি নীতি আরোপ করা হয়। সরকারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত স্বাধীন সংবাদমাধ্যমগুলোকে বন্ধ করে দেয়া হয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এর ব্যাপক প্রতিবাদ করে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, তখন বিভিন্ন বই বাজেয়াপ্ত এবং মানবাধিকার কর্মীদের হয়রানিও করা হয়। সুলতান কাবুস এর দীর্ঘ ৫০ বছরের শাসনামলে এটি ছিল একমাত্র বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুলতান কাবুস
সুলতান কাবুসের হাত ধরেই ওমান আরব লীগ ও জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। এছাড়াও উপসাগরীয় আরব রাজতন্ত্রগুলোকে নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল’।
২০১৩ সালে সর্বপ্রথম ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এক টেবিলে আনতে সক্ষম হয় ওমান। ওই আলোচনার সূত্র ধরেই তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে দুই পক্ষ। যা ঐ অঞ্চলে শান্তি স্থাপনের জন্য ঐতিহাসিকভাবে স্মরণীয় হয়ে আছে। ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের এই আলোচনার ধারাবাহিকতায় ঐতিহাসিক পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি হয়েছিল।
আরো পড়ুনঃ
এফবিআই এর চোখে বিশ্বের শীর্ষ কয়েকজন সন্ত্রাসী
ঐতিহাসিক যে যুদ্ধ সমাপ্ত হয়েছিল মাত্র ৩৮ মিনিটেই!
২০১৮ সালে ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে নিজ প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানান সুলতান কাবুস। ওমানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখা যায়, ওমানের ট্রেডিশনাল সাদা পোশাক, সাদা পাগড়ী এবং সাদা স্যান্ডেল পরিহিত বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার স্ত্রী সারাকে স্বাগত জানাচ্ছেন সুলতান কাবুস। যদিও ওই প্রতিবেদনে দুই নেতার মধ্যে কি নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা গোপন রাখা হয়।
২০০৭ সালে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সুলতান কাবুস বলেন-
আমরা দেশের ভেতর নির্মাণ ও উন্নয়নের কাজ করি। আর বিদেশীদের সাথে বন্ধুত্ব, শান্তি, ন্যায়বিচার ও সম্প্রীতি, সহবস্থান এবং গঠনমূলক সংলাপে বিশ্বাস করি। এভাবেই আমরা শুরু করেছিলাম, এখনো আমরা এভাবেই আছি, আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা এভাবেই চলবো।
মৃত্যু এবং উত্তরাধিকার
This is a Bengali article. It’s a biography of sultan Qaboos. Necessary reference are hyperlinked within article.