লিখুন
ফলো

অপারেশন সূর্য দীঘল বাড়ী: কল্পনাকেও হার মানায় যে কমান্ডো অভিযান

সিলেটের টুলটিকর ইউনিয়নের প্রত্যেকটি বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে র‌্যাব। র‌্যাবের বিপুল পরিমাণ সদস্য সংখ্যা এবং গাড়িবহর বলে দিচ্ছে এই অভিযান কতটা গুরুত্বপূর্ণ! র‌্যাব সদস্যদের হাতে রয়েছে হ্যান্ড মাইক এবং কয়েকজন ব্যক্তির ছবি সংবলিত লিফলেট। রাত প্রায় ১২টা বেজে গেছে। তখন অভিযান চলছিল ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব শাপলাবাগ আবাসিক এলাকায়।

আবদুস সালাম সড়কের ২২ নম্বর বাড়িতে ঢুকতে চেষ্টা করল র‌্যাব। কিন্তু তৎক্ষণাৎ একটি অঘটন ঘটে গেল! বাড়ির মধ্য থেকে মস্ত বড় ছুরি হাতে তেড়ে এলো এক ব্যক্তি। স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলো, ‘বাড়ির মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করলে পরিণতি অত্যন্ত খারাপ হবে’। বাড়িটিকে ঘিরে ঘনীভূত হল রহস্য। র‌্যাব কর্মকর্তাদেরও আর জানতে বাকি রইলো না যে, তারা তাদের গৌন্তব্যে পৌঁছে গেছে। বাড়িটির নেমপ্লেটে লেখা রয়েছে ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’।

২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তরাঞ্চলের গ্রামীণ ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের কয়েকটি শাখায় হামলা চালায় জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ডাকাতি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ। এ নিয়ে দেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তোপের মুখে পড়ে সরকার। ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জেএমবি-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মোট ২৬টি সন্ত্রাসী হামলা চালায় জেএমবি। এসব ঘটনায় ৭৩ জন নিহত এবং প্রায় ৮০০ জন আহত হন।



এরপরই নড়েচড়ে বসে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো। ২০০৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর জেএমবির সামরিক প্রধান আতাউর রহমান সানি ধরা পড়েন র‌্যাবের হাতে। পরের টার্গেট হিসেবে হিটলিস্টে উঠে আসে শায়েখ আব্দুর রহমানের নাম। কিন্তু কোনোভাবেই ধূর্ত আব্দুর রহমানের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সানিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর র‌্যাব জানতে পারে ঢাকার পল্লবীর বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন শায়েখ। তাৎক্ষণিক বিপুল পরিমাণ ফোর্স নিয়ে পল্লবীর বাসায় হানা দেয়। কিন্তু আব্দুর রহমান যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল, ব্যর্থ হলো অভিযান।

সানিকে জিজ্ঞাসা করে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্লু জানা গেল। জেএমবির মজলিশে শুরা সদস্য হাফেজ মাহমুদ শায়েখ সম্পর্কে সব তথ্য জানে। এইবার র‌্যাবের হিটলিস্টে উঠে আসলো হাফেজ মাহমুদের নাম। গোয়েন্দা লেলিয়ে দেওয়া হলো হাফেজ মাহমুদের পেছনে।

শায়েখ আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাই; image: prothom alo

র‌্যাবের গোয়েন্দারা দীর্ঘ সময় চেষ্টা তদবির করে জানতে পারল হাফেজ মাহমুদ অবস্থান করছে যশোরে। সেখানে তিনি নারিকেল ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশ ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সংগ্রহ করা হলো হাফেজ মাহমুদের ফোন নম্বর। কিন্তু কোনোভাবেই ফোনে কথা বলতে রাজি নন হাফেজ মাহমুদ। র‌্যাব কর্মকর্তারা এবার আশ্রয় নিলেন ভিন্ন কৌশলে।

গোয়েন্দারা হাফেজ মাহমুদকে পরিচয় দিলেন বিদেশি এনজিও-এর লোক হিসেবে। বিদেশ থেকে মোটা অংকের টাকা পাইয়ে দেয়ার লোভ দেখালেন। জানানো হলো তাদের এই সমস্ত কর্মকাণ্ডের জন্য বিদেশি একটি সংস্থা তাদেরকে অর্থায়ন করতে চায়। এইবার লাইনে আসল হাফেজ মাহমুদ। যেহেতু ইতিপূর্বে এনজিও-এর লোকদের সাহায্য পেয়েছিলেন, তাই এবারও সহজেই রাজি হয়ে গেলেন।



২৮শে ফেব্রুয়ারি রাত আটটায় সিলেটে পৌঁছায় এই দলটি। এরপর থেকে হাফেজ মাহমুদের গতিবিধি এবং তার ফোনের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতে শুরু করল র‌্যাব কর্মকর্তারা। খেয়াল করে দেখা গেল তাদের সঙ্গে কথা বলা শেষ হওয়ার পরপরই হাফেজ মাহমুদ অন্য একটি ফোন নম্বরে কথা বলে। কিন্তু তাদের মধ্যে কথা হয় সাংকেতিক ভাষায়। র‌্যাব ওই সাংকেতিক ভাষার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারল না। তবে র‌্যাবের কর্মকর্তারা এতটুকু নিশ্চিত হলেন যে ওই নম্বরধারী ব্যক্তিই হচ্ছেন শায়েখ আব্দুর রহমান।

র‌্যাব সদস্যরা ফোনে যোগাযোগ বাদ দিয়ে এবার সরাসরি হাফেজ মাহমুদকে গ্রেফতার করার প্রস্তুতি নিলেন। হাফেজ মাহমুদকে এনজিও-এর লোক সেজে আলোচনায় বসার আহবান জানাল র‌্যাব। স্থান নির্ধারণ হলো বায়তুল মোকাররম ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাঠাগারে। ব্যস, হাফেজ মাহমুদও রাজী হয়ে গেল। র‌্যাবের এই পূর্ণ চৌকস গোয়েন্দা কার্যক্রম সম্পন্ন হচ্ছিল কর্নেল গুলজারের তত্ত্বাবধায়নে।

image: daily star

২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০০৫ সাল, যশোর থেকে বাসে করে ঢাকাতে এসে নামেন হাফেজ মাহমুদ। বেলা ১১ টার দিকে বাইতুল মোকাররমের সিড়িতে উঠতে দেখা যায় এক ভিন্ন হাফেজ মাহমুদকে। ক্লিন শেভড, দাড়ি টুপি পাঞ্জাবী কিছুই নেই। গায়ে সবুজ হাফহাতা শার্ট এবং চোখে রঙিন চশমা আটা। তিনি ভেবেছিলেন এই বেশভূষার পরিবর্তনে তাকে হয়তো কেউ চিনতে পারবে না। কিন্তু তার বোধ হয় জানা ছিলনা, যশোরে যখন তিনি বাসে উঠেছেন তখন থেকেই র‌্যাব কর্মকর্তারা তার সমস্ত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন। এমনকি তিনি যে বাসে উঠে এসেছেন সেই বাসেই সাধারণ যাত্রী বেশে তার পাশেই বসে ছিল র‌্যাব সদস্যরা।

এদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সিড়ি, প্রবেশমুখ এবং রাস্তায় ভিক্ষুক, হকার, ফেরিওয়ালা সেজে বসে গেছেন র‌্যাবের সদস্যরা। প্রবেশ মুখ দিয়ে পাঠাগারে প্রবেশ করতেই র‌্যাবের সদস্যরা ঘিরে ফেলল হাফেজ মাহমুদকে। সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন কর্নেল গুলজার এবং মেজর আতিক। কোনোরকম সুযোগ না দিয়েই হাফেজ মাহমুদকে নিয়ে যাওয়া হয় গাড়ির কাছে। এরমধ্যে পালানোর চেষ্টাও করেন হাফেজ মাহমুদ, কিন্তু ব্যর্থ হন।

কর্ণেল গুলজার; image: wikipedia

জিজ্ঞাসাবাদ করে কোনভাবেই শায়েখ আব্দুর রহমান সম্পর্কে মুখ খুলল না হাফেজ মাহমুদ। র‌্যাব সদস্যরা তার ফোন কেড়ে নিয়ে দেখতে পেলেন একটি নাম্বারে বেশ কয়েকবার কথা বলা হয়েছে। র‌্যাবের আইটি শাখার মেজর জোহা ফোন নম্বরটির লোকেশন ট্র্যাক করে জানালেন সিলেটের এমসি কলেজ টাওয়ার থেকে কল করা হয়েছে। টাওয়ারের আট বর্গ কিলোমিটারের মধ্যেই ফোনের অবস্থান।

কর্নেল গুলজার র‌্যাব-৯ (সিলেট) এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোমিনকে নির্দেশ দেন, টাওয়ার থেকে আট বর্গ কিলোমিটার দ্রুত ঘেরাও করে ফেলতে। কর্নেল মোমিন, মেজর শিব্বির ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হায়দার তখনই পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেন। এদিকে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে যায় কর্নেল গুলজারের নেতৃত্বে ৪০ সদস্যের একটি বিশেষায়িত টিম।

২৮শে ফেব্রুয়ারি রাত আটটায় সিলেটে পৌঁছায় এই দলটি। এই দলে আরো ছিলেন মেজর আতিক, মেজর মানিক, মেজর জাভেদ, মেজর ওয়াসি, ক্যাপ্টেন তানভির ও ক্যাপ্টেন তোফাজ্জল। তারা পৌঁছানোর আগেই র‌্যাব-৯ এর আড়াইশো সদস্য চষে বেড়াচ্ছেন নগরের টিলাগড় ও শিবগঞ্জের ৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার প্রতিটি সড়ক ও গলিতে।

ধীরে ধীরে অভিযানের পরিধি কমিয়ে আনা হয়। টিলাগড়, শাপলাবাগ, কল্যাণপুর, কালাশিল ও বাজপাড়া এলাকার প্রতিটি বাড়িতে শুরু হয় তল্লাশি। তল্লাশির এক পর্যায়ে সামনে চলে আসে ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’। পূর্ব শাপলাবাগ আবাসিক এলাকার আবদুস সালাম সড়কের ২২ নম্বর বাড়ি।

তৎক্ষণাৎ র‌্যাব সদস্যরা ঘিরে ফেলল সূর্য দীঘল বাড়ি। লাইফ জ্যাকেট পড়ে ভারী অস্ত্রসস্ত্রসহ জায়গা মত বসে যান র‌্যাবের স্পেশাল কমান্ডোরা। ইতিমধ্যে বাড়িটিকে ঘিরে জড়ো হয়েছেন কয়েকশো র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। জড়ো হয়েছেন অসংখ্যা সাংবাদিক এবং ভীর করছেন সহস্রাধিক উৎসুক জনতা। সারাদেশের মানুষ তখন একরাশ বিস্ময় নিয়ে বসেন আছেন টেলিভিশনের সামনে।



রাত পৌনে একটার দিকে মাইকে বাড়ির লোকদেরকে বাইরে বেড়িয়ে আসতে বলা হলো। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। তাদের নীরবতায় রহস্য আরও ঘনীভূত হয়। আশপাশের বাড়িগুলো থেকে লোকজন সরিয়ে নেয়া হলো। রাত পৌনে দুইটার দিকে ওই বাড়ির মালিক লন্ডন প্রবাসী আবদুল হকের ভাই মইনুল হককে বাইরে থেকে ডেকে আনা হলো। তিনি মাইকে ভাড়াটিয়াদের নাম ধরে ডাকলেন। কিন্তু কোন কাজ হলো না। এর পরে আসলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুন্নবী। তিনিও মাইক হাতে ভাড়াটিয়াদের বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসতে বললেন। কিন্তু তাতেও কাজ হলো না।

রাত দুইটার পর একবার বাড়ির দরজা খোলার শব্দ হলো। র‌্যাব সদস্যরা সতর্ক হয়ে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেল দরজা, কিছুই ঘটল না। আধাঘন্টা পর বাড়ির ভেতর থেকে একজন বয়স্ক এবং গম্ভীর কণ্ঠে উচ্চস্বরে দোয়া দরুদ পড়তে শোনা গেল। চৌকস কর্নেল গুলজার অনুধাবন করলেন বিষয়টা। সঙ্গে সঙ্গে মাইক হাতে নিয়ে তিনি আব্দুর রহমানের নাম ধরে ডাক দিলেন। ভেতর থেকে গম্ভীর গলায় আওয়াজ আসলো

“ওই কাফের! তোর মুখে আমার নাম মানায় না, আমাকে মুজাহিদ বল।’ এটা যে আব্দুর রহমানের কন্ঠ ছিল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

image: ittefaq

টানটান উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে কেটে গেল প্রথম রাত। সকাল হতে না হতেই অসংখ্য মিডিয়াকর্মী লাইভ সম্প্রচার করা শুরু করে দিল। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গেই এ ঘটনা রটে গেল বিশ্বব্যাপী। এদিকে নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে টিভি সেটের সামনে থিতু হয়ে বসেছেন সমগ্র দেশবাসী।

দ্বিতীয় দফায় শুরু হয় র‌্যাবের কৌশলী অভিযান। প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয় ভেতরে। কিন্তু তেমন কোনো লাভ হলো না। ডাকা হল দমকল বাহিনীকে। পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হলো সূর্য দীঘল বাড়ি। কিন্তু ভেতর কোন সাড়াশব্দ নাই। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা নিয়ে সেই দিনটিও কেটে গেল। নেমে আসলো আরেকটা থমথমে রাত।

আরো পড়ুনঃ

এরদোয়ান: রুটি বিক্রেতা থেকে মুসলিম বিশ্বের নেতা

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি ভ্যাক্সসিন ফাইজার এবং মোডের্না কোম্পানির ইতিহাস

দেশে দেশে বোরকা ও আযান নিষিদ্ধের গল্প



এরমধ্যে একাধিকবার আব্দুর রহমানের সঙ্গে কথোপকথন হলেও কোনোভাবেই তাকে আত্মসমর্পণ করাতে রাজি করতে পারেনি র‌্যাব। রাত শেষ হয়ে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। আরেকটা দিনের সূচনা। সকাল ৯টায় হঠাৎ ঐ বাড়ীর ভেতর থেকে বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেল। পরপর পাঁচটি বিস্ফোরণ ঘটল। দ্রুত নিয়ে আসা হয় দালান ভাঙার যন্ত্রপাতি। সাড়ে নয়টার দিকে ভাঙা হয় দক্ষিণের একটি জানালা। বৈদ্যুতিক কাটার এনে ফুটো করা হয় ছাদ।

প্রথমে আয়না লাগিয়ে ভেতরে দেখার চেষ্টা করা হয়। পরে রশি দিয়ে ক্যামেরা নামিয়ে দেখা হয়, ভেতরে কী আছে। দেখা যায়, একটা বিছানা থেকে বৈদ্যুতিক তার বেরিয়ে আছে। ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক, ‘নিশ্চয় সারা বাড়িতে বোমা পাতা আছে’। বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা নিয়ে আসেন বড় বড় বড়শি। ফুটো দিয়ে নামিয়ে বিছানা টেনে তুলে দেখেন, সব ভুয়া, সাজানো আতঙ্ক।

দুপুরের দিকে মুহুর্মুহু কাঁদানো গ্যাস ছুড়তে থাকে র‌্যাব সদস্যরা। গ্যাসে টিকতে না পেরে বেরিয়ে আসেন শায়খের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা। শায়খের স্ত্রী রুপাকে বলা হলো, ‘আপনি আপনার স্বামীকে বেরিয়ে আসতে বলুন।’ রুপা বলেন, ‘আমার কথা শুনবেন না। উনি কারও কথা শোনেন না।’ জেলা প্রশাসক পীড়াপীড়ি করলে শায়খের স্ত্রী মুখে মাইক লাগিয়ে বলেন, ‘শুনছেন, উনারা বের হতে বলছেন, আপনি বের হয়ে আসেন।’ স্ত্রীর কথায়ও কান দেন না আব্দুর রহমান।

image: prothom alo

সে রাতও কেটে গেল। পরদিন সকালে সিলেট জেলা প্রশাসক চূড়ান্ত হুমকির সুরে আব্দুর রহমানকে বেরিয়ে আসতে বললেন। কয়েক সেকেন্ডের জন্য জানালায় উঁকি দিতে দেখা গেল আব্দুর রহমানকে। অবশেষে তিনি বেরিয়ে আসতে রাজি হলেন, তবে জুড়ে দিলেন শর্ত। ধরা দেওয়ার আগে তাকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে দিতে হবে। সে শর্তে রাজী হলো র‌্যাব।

২ মার্চ ২০০৬, ৩৩ ঘন্টা শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর ধীরে ধীরে নেমে এলেন শায়েখ, ধরা পড়লেন র‌্যাবের হাতে। কিন্তু তাকে আর সাংবাদিকদের মুখোমুখি করা হলো না। তার স্ত্রী যখন জানতে পারলেন তিনি আত্মসমর্পণ করেছেন, তখন স্ত্রী অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন, ‘উনি না শহীদ হতে চেয়েছিলেন! কই, হলেন না যে!’



শায়েখ আব্দুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের উগ্রবাদীদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। দ্রুত বিচার ব্যবস্থা আইনে ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ আব্দুর রহমানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এদিকে র‌্যাবের ইতিহাসে সবচেয়ে চৌকশ অফিসার কর্নেল গুলজারের ভাগ্যও বোধহয় সুপ্রসন্ন ছিল না। ২০০৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি পিলখানা ট্র্যাজেডিতে নির্মমভাবে শহীদ হন এই মহান বীর।

অপারেশ সূর্য দীঘল বাড়ির দুর্ধর্ষ কৌশল শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গোয়েন্দা স্কুলগুলোতে পড়ানো হয়। সারাবিশ্বেই এই ঘটনাটি অপরাধ দমনে এক এইকনিক অভিযান হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে। অপারেশন সূর্য দীঘল বাড়ি” আজও সারা বিশ্বের ফোর্সগুলোর কাছে এক অনুকরনীয় অপারেশন। 


This is a Bengali article. It’s about “operation Suraj dighol bari”.

Featured Image: Prothom Alo

All links are hyperlinked

Total
0
Shares
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Article

লাভ (২০২০) : বুদ্ধিদীপ্ত স্ক্রিপ্টিং, ডার্ক কমেডি, সম্পর্কের টানাপোড়ন এবং ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের লেয়ারে মোড়ানো একটি সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার

Next Article

দেশে দেশে বোরকা ও আযান নিষিদ্ধের গল্প

Related Posts
আরও পড়ুন

কিভাবে এলো আজকের সাবমেরিন?

সূচিপত্র Hide সাবমেরিনের ইতিহাস মিলিটারি নিউক্লিয়ার সাবমেরিন বামন সাবমেরিন ব্যক্তিগত সাবমেরিন গভীর সমুদ্র অপারেশনে সাবমেরিন সাবমেরিন এর নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর এর কার্যপদ্ধতি সাবমেরিনের যুগে বাংলাদেশ…

কেমন হবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা?

সূচিপত্র Hide রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে আমাদের জল্পনাকল্পনার শেষ নেই। একদিকে যেমন রয়েছে কৌতূহল অপরদিকে শঙ্কা। একদিকে…

বাংলাদেশে ভাস্কর্য সংস্কৃতি কিভাবে এলো?

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই বাংলায় মূর্তি বা ভাস্কর্যের সংস্কৃতি চলে আসছে। কারণ বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মগুলো হলো হিন্দু,…

মেজর জলিল: অভিমানী এক সেক্টর কমান্ডারের সংগ্রামী জিবন

মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থলে রয়েছে সত্য এবং মুক্তি অনুসন্ধানের আজন্ম পিপাসা। আমি সেই পিপাসায় কাতর হয়েই জাসদ থেকে সরে…

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন

Total
0
Share