ইহুদিদের আবির্ভাব মানব ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাদের নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহল কোনাে যুগেই কম ছিল না। আজকের আধুনিক বিশ্ব যেসব খুঁটির (অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি) ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে, তার প্রতিটির পেছনেই রয়েছে ইহুদিদের অদৃশ্য আধিপত্য।
জেরুজালেম থেকে নির্বাসিত হয়ে এক টুকরাে নিরাপদ ভূমির খোঁজে তারা পৃথিবীর নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছে যাযাবরের মতাে। পেরিয়ে গেছে প্রায় ২০০০ বছর। নির্যাতন-নিপীড়ন এখন তাদের জন্য নতুন কোনাে অভিজ্ঞতা নয়। এ নির্যাতন ভােগের পেছনে তাদের প্রতি যে অন্যান্য সম্প্রদায়দের অ্যান্টিসেমেটিক মনােভাব ছিল, তা বলা যায় না।
কারণ, নিজেদের স্বার্থ ও উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তারা আজ পর্যন্ত যত কৌশল উদ্ভাবন করেছে, তার অধিকাংশই সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধুসুলভ ছিল না। পৃথক জাতীয়তাবাদ নীতি ও অসাধু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের দরুন তারা বারংবার বিতর্কিত জাতিতে পরিণত হয়েছে। রাশিয়ায় ইহুদিরাই ছিল বলশেভিক বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দু। সেখানে তারা জবাই করেছে লাখাে তাজা প্রাণ। সেই বিপ্লবের যারা খলনায়ক, তারাই আজ আমাদের চোখে মহানায়ক।
জার্মান সাম্রাজ্য পতনের পেছনেও তারা সবচেয়ে বড় প্রভাবক ছিল। তারা বিষাক্ত অণুজীব হয়ে সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে। একে একে করে দখল করে সেখানকার প্রতিটি শিল্প ও ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান। বিশ্বজুড়ে ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে তারা ইংল্যান্ডকে বানিয়েছে হাতের পুতুল। স্বর্ণ-রৌপ্যের মতাে মহা মূল্যবান সম্পদ চুরি করে নিজেদের প্রাচুর্যতাকে করেছে পাহাড়সম। বিভিন্ন জাতি-গােষ্ঠীকে রক্তক্ষয়ী অন্তঃকোন্দলে জড়িয়ে হাসিল করেছে নিজেদের ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।
প্রবীণ ও তরুণ ইহুদিরা নিজেদের প্রাচুর্যতা ও উচ্চাভিলাসী মনােভাব কাজে লাগিয়ে
আমেরিকাকে একটি যুদ্ধবাজ দেশে পরিণত করেছে, যা আজ তাদের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য
হাসিলের সবচেয়ে বড়াে হাতিয়ার। যেকোনাে সরকারের শাসনামলে তাদের জন্য একটি সুবিধাজনক পদ বিশেষভাবে বরাদ্দ রাখা হয়। হােয়াইট হাউজেও রয়েছে তাদের অবাধ প্রবেশাধিকার। আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে বিষাক্ত মতবাদ ঢুকিয়ে দিতে ইহুদি রাবাইদের যেন পরিশ্রমের শেষ নেই। তারা বলে- ‘আশীর্বাদ চাইলে ইজরাইল যাও। কারণ, আমরাই সৃষ্টিকর্তার একমাত্র মনােনীত সম্প্রদায়।’
জনসংখ্যায় এত অল্প হয়েও তারা যেভাবে নিজেদের ক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তার করেছে, তা ইতঃপূর্বে অন্য কোনাে জাতি পারেনি। পুরােনাে ছেড়া কাপড় সংগ্রহ করে তা বিক্রি করা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থনীতির সবকিছু আজ তারা এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। শিল্প-প্রতিষ্ঠানের অধিক পরিশ্রমী পদে কাজ করার ব্যাপারে তাদের রয়েছে তীব্র অনীহা। উৎপাদন ও যন্ত্রপাতি পরিচালনার মতাে ঝুঁকিপূর্ণ পদগুলােতে সাধারণত জ্যান্টাইলদের (ইহুদী বাদে অন্যান্য ধর্মের মানুষকে জ্যান্টাইল বলা হয়) ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে সেলসম্যান, ম্যানেজার এবং ক্লার্কের মতাে সহজ পদগুলাে তাদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়।
প্রাচীন প্রুশিয়ানদের এক সমীক্ষা অনুযায়ী তাদের মােট জনসংখ্যা ছিল ২৬৯৪০০ জন। এর মাত্র ছয় শতাংশ অর্থাৎ ১৬১৬৪ জন ছিল ইহুদি, যার মধ্যে ১২০০০ জনই ছিল
ব্যবসায়ী এবং ৪১৬৪ জন শ্রমিক। অন্যদিকে ৯৬ শতাংশ জ্যান্টাইল অর্থাৎ ২৫৩২৩৬ জনের মধ্যে মাত্র ১৭০০০ জন ব্যবসায়ী।
বর্তমান প্রেক্ষাপট অবশ্য ইতিহাস থেকে অনেক ভিন্ন। ব্যাবসা-বাণিজ্যের উঁচু পদগুলােতে আজ জ্যান্টাইলদের উপস্থিতি পূর্বের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে তাদের সংখ্যা যে হ্রাস পেয়েছে তা নয়; Jews Encyclopedia অনুযায়ী বর্তমানে
বিশ্বের বৃহদাকার প্রায় সকল বিপণিবিতান তারাই পরিচালনা করছে। ট্রাস্ট, ব্যাংক, কৃষি ও খনিজ সম্পদের মতাে আরও অনেক শিল্প রয়েছে, যা তাদের কবজাধীন হয়ে পড়েছে।
যেসব প্রতিষ্ঠান এখনও জ্যান্টাইলদের মালিকানায় রয়েছে, তার পেছনেও ইহুদিদের বিনিয়ােগকারী গােষ্ঠী কাজ করছে। প্রকাশনী শিল্পে তারা কতটা ক্ষমতাধর, তা আমাদের কল্পনার বাইরে। থিয়েটার, চলচ্চিত্র ও সংগীত জগতে তাদের দ্বিতীয় কোনাে প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। জার্মান লেখক Werner Sombat তার বই Jews and Modern Capitalism-এ
উল্লেখ করেন-
‘যদি আমেরিকার অভিবাসন হার প্রত্যেক জাতিগােষ্ঠীর জন্মহার এবং উন্নয়নসূচক একই ধারায় চলতে থাকে, তবে আগামী পঞ্চাশ বা একশাে বছর পর এ দেশ হবে নিগ্রো, ক্রিতদাস ও ইহুদিদের দেশ; যেখানে তারাই হবে ক্ষমতাধর জনগােষ্ঠী।
দুটি বিষয়ে পরিষ্কার জ্ঞান রাখা উচিত।
প্রথমত, পৃথিবীর সব ইহুদিই সম্পদশালী নয়; তাদের মাঝেও ধনী-গরিব শ্রেণি আছে। তবে গরিব শ্রেণির দরিদ্রতার মূল কারণ তাদের সম্পদশালী জ্ঞাতি ভাইয়েরা। মূলত কৌশলগত কারণেই তারা নিজেদের মাঝে এই শ্রেণি-পার্থক্যের জন্ম দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, শত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তারা নিজেদের ঐক্য ও জাতীয়তায় বিভাজন
তৈরি করেনি। ফলে কৃতিত্ব ও সফলতা অর্জনের দিক দিয়ে অন্য কোনাে সম্প্রদায় কখনােই তাদের সমকক্ষ হতে পারেনি। আজকের আমেরিকা তাে তারাই তৈরি করেছে। উনবিংশ শতাব্দীতে ঔপনিবেশিক শাসন ও ক্ষমতার লড়াই নিয়ে পুরাে পৃথিবী যখন ক্ষত-বিক্ষত, তখন অসংখ্য মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে আমেরিকায় অভিবাসী হয়। আর এই সুযােগ লুফে নিয়ে ইহুদিরাও দলে দলে আমেরিকায় প্রবেশ করা শুরু করে।
অন্যান্য জাতিগােষ্ঠীর যেখানে একমাত্র অবলম্বন ছিল মেধা ও পরিশ্রম, সেখানে তাদের অবলম্বন অঢেল অর্থ-সম্পদ। তারা জন্ম দেয় পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার। শুরু হয় শ্রমবাজারের সাথে পুঁজিবাজারের দ্বন্দ্ব। নামমাত্র পারিশ্রমিকের বিনিময়ে পুঁজিপতিরা কিনে নিতে থাকে সাধারণ মানুষের মেধা ও শ্রম। একটা সময় ছিল যখন তারা শুধু কৃষি কাজ করত। রােমান সম্রাট কর্তৃক জেরুজালেম থেকে নির্বাসিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এটাই ছিল তাদের মূল পেশা। তাহলে কীভাবে তাদের আমূল পরিবর্তন হলাে, আর কীভাবেই-বা উত্থান ঘটল?
আসলে Forinative Period (১০০০ খ্রিষ্টপূর্ব-৫০০ খ্রিষ্টাব্দ)-এর বিশেষ একটি শাসনব্যবস্থা তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে। অর্থনৈতিক কাঠামাে ন্যায়সংগত করতে পয়গম্বর মােজেস (হযরত মুসা আ.) “Money aristocracy’ আইনটির প্রচলন করেন। সুদ-বাণিজ্য এবং ঋণী ব্যক্তির জমি দখল করাকে তিনি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেন। তার আইনে চিরস্থায়ী
আয়েশি জীবনের কোনাে স্থান ছিল না। তিনি দখলদারদের হাত থেকে আত্মসাৎ হওয়া
সকল জমি উদ্ধার করে জনসাধারণের মাঝে বণ্টন করেন। এ আইন ৫০ বছর স্থায়ী
ছিল; যাকে বলা হয় ‘The Year of Jubilee।
কিন্তু এমন আইন মেনে চললে তাে আর রাজকীয় সম্পদের মালিক হওয়া যাবে না। তাই মােজেস মারা যাওয়ার কিছুদিন পর তারা আবারও সুদ-বাণিজ্যে ফিরে আসে। মূলত, মুনাফার প্রশ্নে তারা কখনাে আপস করতে রাজি ছিল না। তাই মােজেসের যেসব আইন অধিক মুনাফা অর্জনে প্রতিবন্ধক, সেগুলাের প্রতিটি তারা পালটে দেয়।
Law of Stranger’নামে তারা নতুন একটি আইন তৈরি করে। এ আইন অনুযায়ী অন্যান্য সম্প্রদায়দের সাথে বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হতাে। যেমন : একজন অপরিচিত জ্যান্টাইলের সাথে সুদ-বাণিজ্য করা যাবে, কিন্তু নিজ ধর্মের ভাইয়ের ওপর কখনােই সুদের বােঝা চাপানাে যাবে না।
ইতিহাস বলে, ইজরাইল সব সময় একটি শাষকরাষ্ট্র হতে চেয়েছে। তারা চেয়েছে, পৃথিবীর প্রতিটি রাজ্য তাদের কুর্নিশ করবে এবং তারাই হবে সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু এমনটা তাে হওয়ার কথা ছিল না! হযরত ইয়াকুব (আঃ) থেকে শুরু করে সকল পয়গম্বর চেয়েছিলেন ইজরাইল পৃথিবীর বুকে একটি ন্যায়পরায়ণ জাতি হিসেবে টিকে থাকবে। ওল্ড টেস্টামেন্টও ঠিক একই কথা বলে। তাহলে কেন তাদের এই অধঃপতন। তা কীভাবেই-বা ঘটল? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের পড়তে হবে ক্যানানাইটদের যুগের ইতিহাস।
ইহুদীদের ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের পুরনো। ইসলাম ধর্মে মতে তারা বনি ইসরাঈলের উত্তরসূরী। হযরত মূসা (আ)-এর অনুসারী। এমনকি বিপথগামী এই জাতির বৃত্তান্ত বর্ণনা করতে গিয়ে পবিত্র কুরআনে বনি ইসরাঈল নামে একটি সূরাই নাজিল করা হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত আলোচনায় ইহুদিদের সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা সম্ভব নয়। সারা পৃথিবী থেকে বিতাড়িত হয়ে যাযাবর ন্যায় ঘুরতে থাকা এক জাতি বর্তমানে গোটা দুনিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি, এবং বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রে রয়েছে ইহুদিরা। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেলফোর এক ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিনে দখলদারি এক রাষ্ট্র তৈরি করেছে তারা। ১৯৪৮ সাল থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত তাদের দখলদারিতে নিষ্পেষিত হয়েছে লক্ষ লক্ষ আরব মুসলিম। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে শত শত মসজিদ। এমনকি পবিত্র শহর জেরুজালেমও আজ তাদের দখলে।
একাধিকবার যুদ্ধ করেও আরবরা তাদেরকে পরাস্ত করতে পারেনি। কারণ তাদের সঙ্গে ছিল ইউরোপ এবং আমেরিকা। বর্তমানে আরবরাই ভেঙে খান খান হয়ে গেছে, কিন্তু তাদের ভীত আরও মজবুত হয়েছে। সবকিছু সম্ভব হয়েছে তাদের কৌশল এবং গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে। তাদের তৈরি মোসাদ’কেই মনে করা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা। ষড়যন্ত্র আর কুটকৌশলের মাধ্যমে দিনদিন বাড়ছে তাদের অধিপত্য, আর ভেঙে খানখান হচ্ছে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।
This is a Bengali article. Here the Jewish millennial conspiracy is discussed.
Necessary Reference Are Hyperlinked Inside The Article.
Book Reference: বইঃ দ্য সিক্রেটস অব জায়োনিজম
Featured Image: Getty Image