বিংশ শতাব্দীর পুরােটা সময় জুড়ে মধ্যপ্রাচ্য সংকট যত বেশি আলােচিত হয়েছে, অন্য কোনাে সংকট এত বেশি আলােচিত হয়নি। মধ্যপ্রাচ্য সংকট মূলত কেন্দ্রিভূত ছিল ফিলিস্তিন তথা আরব রাষ্ট্রগুলাের সাথে ইসরাইলের দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে।
এই দ্বন্দ্বের কোনাে সুরাহা হয়নি। এমনকি অ্যানাপােলিস শীর্ষ সম্মেলন (ডিসেম্বর, ২০০৭)শেষে একটি প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে এই দ্বন্দ্বের কী আদৌ কোনাে সমাধান হবে? বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এসে, অর্থাৎ নব্বইয়ের দশকে মধ্যপ্রাচ্য সংকটের নতুন একটি মাত্রা যােগ হয়, আর তা হচ্ছে, ইরাক কর্তৃক কুয়েত দখলকে কেন্দ্র করে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ ।
তারপরও ফিলিস্তিন-ইসরাইল দ্বন্দ্বের মাত্রা ও গভীরতা এর চেয়ে অনেক বেশি। অনেকটা এই দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা তাত্ত্বিকরা, বিশেষ করে অধ্যাপক হান্টিংটনের মতাে পণ্ডিত তার বিখ্যাত তত্ত্ব সভ্যতার দ্বন্দ্ব উপস্থাপন করেছিলেন। ফিলিস্তিন-ইসরাইল দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে তিন তিনটি যুদ্ধের জন্ম হয়েছে।
ওইসব যুদ্ধে আরব রাষ্ট্রগুলাে হেরে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে চুক্তি করে কোনাে কোনাে আরব রাষ্ট্র (মিসর) তার হারানাে জমি ফেরত পেলেও, আজও মূল সমস্যা অর্থাৎ স্বাধীন একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র এখনও গঠিত হয়নি।
এ নিয়ে বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে একাধিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও, ফলাফল ছিল শূন্য। প্রধানত যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ওইসব আলােচনা চলে আসছিল। অ্যানােপােলিস শীর্ষ সম্মেলনের আগে (যেখানে ৪৪টি আরব রাষ্ট্র ও সংস্থা যােগ দিয়েছিল) দীর্ঘ প্রায় দশ বছর ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে কোনাে উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। ১৯৯৮ সালে সর্বশেষ আলােচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
১৯৯৮ সালের ২৩শে অক্টোবর ওয়াশিংটনের অদূরে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি প্রশাসনের মধ্যে যে ‘উই রিভার’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তার রেশ ধরে খােদ ইসরাইলী রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছিল।
তাদের এই বিরােধিতা ও অধিকৃত আরব এলাকা থেকে চুক্তির শর্ত মােতাবেক প্রত্যাহারের অস্বীকৃতির কারণে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছিল। এর আগে ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি হেবরন শহরে ফিলিস্তিনি শাসন সম্প্রসারণ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে হেবরনের ৮০ ভাগ এলাকা থেকে ইসরাইলী সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়। ওই চুক্তিটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ইসরাইলে ক্ষমতাসীন সরকার এর আগে এ ধরনের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করে আসছিলেন।
১৯৯৩ সালে পিএলও (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন) এবং ইসরাইলের মধ্যে যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তাতে হেবরন থেকে ইসরাইলী সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা ছিল। প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার ফিলিস্তিনি ও প্রায় ৫’শ ইহুদির বাস এই হেবরন শহরে। শহরটির হিব্রু নাম হেবরন, আর আরবি নাম হচ্ছে আল খলিল। এটি মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান। ১৯৬৭ সালে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের সময় ইসরাইল জর্ডানের কাছ থেকে শহরটি দখল করে নেয়।
জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন মাটি চাপা পরে গেছে। নেতানিয়াহু এ ধরনের রাষ্ট্রের বিরােধিতা করছেন। হেবরন চুক্তি করে শান্তির যে সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখন ভেস্তে যেতে বসেছে পূর্ব জেরুজালেমে ইহুদি বসতি স্থাপনের পরিপ্রেক্ষিতে।
ইসরাইল এখানে ৬ হাজার বসতি নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটা ছিল ইতিহাসের অন্যতম ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতকতা।
শান্তি প্রক্রিয়া বারে বারে বাধাগ্রস্ত হলেও ২০ জানুয়ারি, ১৯৯৬ সালে ফিলিস্তিনি স্ব-শাসিত এলাকায় প্রথমবারের মতাে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটা ছিল স্ব-শাসিত এলাকার প্রেসিডেন্ট আর পার্লামেন্টের নির্বাচন। দশ লাখ ভােটারের মধ্যে শতকরা ৮৮ ভাগেরও বেশি ভােট পেয়ে ফিলিস্তিনির প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ইয়াসির আরাফাত। আর পার্লামেন্টের ৮৮ আসনের মধ্যে পিএলও’র আরাফাত গ্রুপ আল-কাতাহ পায় ৫০টি আসন। ২৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীও বিজয়ী হয়েছিল। এরাও আরাফাতের মিত্র ছিল।
ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিল মুসলমানরা। নিঃসন্দেহে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ওই নির্বাচনের গুরুত্ব ছিল অনেক। পরবর্তীকালে স্বশাসিত ফিলিস্তিনি এলাকায় আরাে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শান্তি প্রক্রিয়ায় একটি দুঃখজনক সংবাদ ছিল রাবিনের মৃত্যু। তবে ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রাবিনের মৃত্যুও শান্তি প্রক্রিয়ায় কোনাে অন্তরায় হয়ে দেখা দেয়নি।
উগ্রবাদী জনৈক ইহুদির গুলিতে ১৯৯৫ সালের ৪ নভেম্বর প্রাণ হারিয়েছিলেন রাবিন। তার এই মৃত্যুর দায় ফিলিস্তিনি মুসলমানদের উপর চাপাতে চেয়েছিল ইসরায়েল। কিন্তু অনেক ষড়যন্ত্র আর নীল নকশা করেও আসল ঘটনা ঢেকে রাখতে পারেনি। একজন স্বজাতি ইহুদীর হাতেই তাঁর মৃত্যু ঘটেছিল। মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির প্রশ্নে যারা আশাবাদী ছিলেন, তারা স্বাভাবিক কারণেই এ ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন। তাদের কাছে এটা ছিল অস্বাভাবিক ঘটনা।
জেরুজালেমে রাষ্ট্রীয় শােক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। এ ঘটনায় প্রমাণ করে মার্কিন রাজনীতিতে ইসরাইল কতটা গুরুত্বপূর্ণ! শুধু তাই নয়, তিনটি প্লেনে করে আমেরিকার রাজনীতির প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ যােগ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় শােক অনুষ্ঠানে।
শােক অনুষ্ঠানে যােগ দিয়েছিলেন মিসরের প্রেসিডেন্ট হােসনী মুবারক, যে দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট আনােয়ার সাদাত ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষর করে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন এবং এজন্য ১৯৮১ সালে তাঁকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল রাবিনের বেলায়।
সাম্প্রতিক সময়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে। চুক্তি হয়েছে একাধিক। কিন্তু নিপীরিত ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। অর্থাৎ ইহুদি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ কখনই সৃষ্টি হয়নি। ১৯৪৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যের বুকে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের সৃষ্টির মধ্য দিয়ে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল, আজ প্রায় ৭৩ বছর পরও সে সংকটের কোনো সমাধান হয়েছে তা বলা যাবে না। বরং দিনকে দিন ইহুদীদের রোষানলে ঘর হারাচ্ছে হাজারো ফিলিস্তিনি।
ইহুদি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যে বৈরিতা, সেই বৈরিতার পুরােপুরি অবসান সম্ভব নয়। উভয় সমাজের কিছু কিছু ব্যক্তি এই বৈরিতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে মাঝে মধ্যে উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু সেই উদ্যোগ থেমে গেছে বার বার। ইহুদীদের একরোখা আর যুদ্ধাংদেহী মনোভাবের কারণে প্রতি বছর প্রাণ হারাচ্ছে শত শত নিরীহ মুসলিম। এমনকি বাদ যাচ্ছে না নারী ও শিশুরাও। সেখানে শান্তি আলোচনা একটা অমূলক বিষয়।
ওয়াশিংটন চুক্তি, ১৯৯৩
ফিলিস্তিনি স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপারে ওয়াশিংটন চুক্তি ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। ওই শান্তিচুক্তির ফলে ইসরাইল অধিকৃত গাজা ও পশ্চিম তীরের জেরিকো শহরে সীমিত স্বায়ত্তশাসন স্বীকৃত হয়। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ইসরাইলী সেনাবাহিনী ওই এলাকা দখল করে নিয়েছিল। সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইসরাইল ও পিএলও’র মধ্যে যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল তার রেশ ধরে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ওয়াশিংটন শান্তিচুক্তি।
এর আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৩ সালে ইসরাইল ও পিএলও পরস্পর পরস্পরকে স্বীকৃতি দেয়। সেটা ছিল একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। পারস্পরিক স্বীকৃতি ও শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে অবসান ঘটেছিল দীর্ঘদিনের বৈরিতার। এক সময় পিএলওর জাতীয় কাউন্সিলে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলকে ধ্বংস করার যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তাও বাতিল করা হয়েছিল।
ইসরাইল ও পিএলও’র মাঝে শান্তিচুক্তি স্থাপনের ব্যাপারে যিনি উদ্যোগ নিয়েছিলেন সবচেয়ে বেশি, তিনি হচ্ছেন নরওয়ের প্রয়াত পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ইয়র্গেন হােলস্ট। কিন্তু শান্তিচুক্তি করে জায়ানিষ্টদের সাথে সহাবস্থানে থাকা কি সম্ভব?
দীর্ঘদিন ধরে নরওয়েতে পিএলও ও ইসরাইলের মধ্যে গােপন আলােচনা চলে আসছিল। গােপন আলােচনার ফলেই পিএলও ও ইসরাইল পরস্পর পরস্পরকে স্বীকৃতি দেয়। পিএলও এবং ইসরাইলের মধ্যে স্বাক্ষরিত দলিলটি তিনটি চিঠির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। প্রথম দুটি হচ্ছে, পিএলও নেতা ইয়াসির আরাফাত ও ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আইজাক রাবিনের পরস্পরকে সম্বােধন করে লেখা চিঠি। অবশিষ্ট চিঠিটি হচ্ছে মধ্যস্থতাকারী নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হােলস্টকে লেখা ইয়াসির আরাফাতের চিঠি।
প্রথম চিঠি লেখেন আরাফাত রাবিনকে ৯ সেপ্টেম্বর (১৯৯৩)। তাতে তিনি ইসরাইল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও দুপক্ষের দ্বন্দ্বের শান্তিপূর্ণ সমাধানের অঙ্গিকার করেন। এর জবাব দেন রাবিন ১০ সেপ্টেম্বর। তাতে তিনি পিএলওকে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকার করে নেন ও পিএলও’র সাথে আলােচনা শুরু করার কথা জানান। তৃতীয় চিঠিতে আরাফাত হােলস্টকে সহিসংতা বন্ধের উদ্দেশ্যে পিএলও ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি যে আহ্বান জানানাের পরিকল্পনা করেছে, তার বিবরণ দেন।
ওয়াশিংটনে স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনসহ সাবেক দুজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ও জর্জ বুশ। শান্তিচুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া স্বাক্ষর করে। এখানে বলে রাখা ভালাে যে, ১৯৯১ সালের অক্টোবরে মাদ্রিদে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ এবং সাবেক সােভিয়েত প্রেসিডেন্ট গর্বাচেভের উপস্থিতিতে ও যৌথ সভাপতিত্বে মধ্যপ্রাচ্য শীর্ষক শান্তি আলােচনা শুরু হয়েছিল।
শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের উপস্থিতিও বেশ তাৎপর্য বহন করে। কার্টারের উপস্থিতিতেই ১৯৭৮ সালে ক্যাম্প ডেভিডে তৎকালীন ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেগিন ও মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট আনােয়ার সাদাত একটি শক্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। সেই শান্তিচুক্তির ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই ওয়াশিংটনে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের উপস্থিতিতে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্বকারী পিএলও’র সাথে একটা চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
১৯৭৮ সালে মিসর ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে হারানাে সিনাই এলাকা ফিরে পেয়েছিল। ১৪ বছর পর পিএলও স্বীকৃতি দিয়েছিল ইসরাইলকে। বিনিময়ে ফেরত পেয়েছিল গাজা ও জেরিকো শহর। এটা ছিল নিঃসন্দেহে
একটা ঐতিহাসিক ঘটনা ও মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তিস্থাপনের পথে অন্যতম অগ্রযাত্রা হিসেবে এটি চিহ্নিত হয়। কিন্তু আরাফাতের জন্য একটা দুঃখজনক সংবাদ ছিল, তিনি পুরাে ফিলিস্তিনি জনগণের সমর্থন নিশ্চিত করতে পারেননি। শান্তিচুক্তির বিরােধিতাকারী হামাস, ফিলিস্তিনি নির্বাচন বয়কট করেছিল।
উই রিভার চুক্তি, ১৯৯৮
উই রিভার চুক্তিকে বলা হয় ভূমির বিনিময়ে চুক্তি। দীর্ঘ ১৯ মাসের অচলাবস্থার অবসান করে ১৯৯৮ সালে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও জর্ডানের প্রয়াত বাদশা হােসেনও ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। চুক্তির উল্লেখযােগ্য দিকগুলাে হচ্ছে :
- ইসরাইল অধিকৃত আরব এলাকা পশ্চিম তীরের ১৩ শতাংশ এলাকা ফিলিস্তিনিদের হাতে অর্পণ ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এর মাঝে ৩ শতাংশ এলাকা সবুজ বেষ্টনী’ অথবা সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘােষণা করবে। ওই সবুজ বেষ্টনীতে বসবাসকারী ইসরাইলীদের নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস দমনের বিষয়টি ইসরাইলী কর্তৃপক্ষের হাতে ন্যস্ত থাকবে।
- সন্ত্রাস দমনের ব্যাপারে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে এবং নিজ নিজ বিচারব্যবস্থা অনুযায়ী সন্ত্রাসীদের বিচার করা হবে এবং ইহুদি ও ফিলিস্তিনিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি দুই সপ্তাহ অন্তর সন্ত্রাস দমনে গৃহীত পদক্ষেপগুলাে পর্যালােচনা করবে।
- ৩. ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ সকল প্রকার সহিংসতা ও সন্ত্রাসী তৎপরতা নিষিদ্ধ ঘােষণা করে একটি ডিক্রি জারি করবে।
- ৪. নিরাপত্তা সহযােগিতা প্রশ্নে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষক বিনিময়সহ অব্যাহতভাবে উভয়পক্ষ ব্যাপক দ্বি-পাক্ষিক কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
- ৫. পিএলও’র জাতীয় কমিটি এবং ফিলিস্তিনি কেন্দ্রীয় কাউন্সিল তাদের জাতীয় সনদ থেকে ইসরাইল বিরােধী ধারাগুলাে এক্সপাঞ্জ করবে।
কিন্তু এসমস্ত চুক্তি আর আন্তর্জাতিক চাপের বেড়াজালে বার বারই হেরে গেছে ফিলিস্তিন। অন্যদিকে ইসরায়েল শুধু লোক দেখানো চুক্তি করে গেছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত একটা চুক্তির শর্তও তারা পূরণ করেনি। আর এর জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে সামান্য চাপের মুখেও তাদেরকে পড়তে হয়নি।
এই সিরিজের অন্যান্য পর্বগুলো পড়ুন:
২. ক্রুসেডারদের নৃশংসতা এবং সালাউদ্দিন আইয়ুবীর মহাবিজয়
৩. বেলফোর ঘোষণা এবং এক নতুন ষড়যন্ত্র
৪. ফিলিস্তিনের বুকে দখলদার ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা
This is a Bengali article. This is the fifth episode of ‘The History of Zionist Israel’.
Necessary references are hyperlinked inside the article.
Featured Image: Wikimedia Commons