বিশ্বে পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে। ৩০টিরও বেশি দেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। পারমাণবিক প্রযুক্তির আর্থিক, কারিগরি ও পরিবেশ গত সুবিধাদি বিবেচনায় ঘনবসতিপূর্ণ ও স্বল্প জ্বালানি সম্পদের অধিকারী রাষ্ট্রগুলো পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কর্মসূচিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে পারমাণবিক প্রযুক্তি নির্ভরতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার মূল কারণ হল, আন্তর্জাতিক বাজারে নিয়মিতভাবে তেল-গ্যাস সরবরাহ ও মূল্য সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা এবং উন্নত দেশগুলোতে তেল-গ্যাসের মজুদ দ্রুত হ্রাস পেতে থাকার প্রক্ষাপটে পারমাণবিক বিদ্যুৎ জ্বালানি শক্তির আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করে। এছাড়া, গ্রীন হাউজ গ্যাসের নিঃসরণ হ্রাসের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে বড় ভূমিকা রাখে। এছাড়া ৪৫ টন উচ্চগ্রেডের কয়লা থেকে যে শক্তি পাওয়া যায়, তা মাত্র ১ কেজি ইউরেনিয়াম থেকে পাওয়া সম্ভব। এ সমস্ত বিষয় বিবেচনায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা বিশ্বজুড়ে ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
সামগ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক বেড়েছে। কিন্তু সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। ২০৩০ সালে বাংলাদেশের সর্ব মোট বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়াবে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এ। আমাদের অর্থনীতির মূল শক্তি কৃষি ও শিল্প কারখানা চালু রাখা, নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন, সর্বোপরি আমাদের প্রতিদিনের জীবন যাত্রা ঠিক রাখার জন্য বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে সরকার ২০৩০ সাল থেকে দেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ১০% পারমাণবিক শক্তি থেকে উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে। আর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজও অনেক দূর এগিয়েছে। আর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নাম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর মধ্যদিয়ে ৩৩তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে অভিজাত নিউক্লিয়ার ক্লাবে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এবং রাশিয়ান ফেডারেশন এর মধ্যে ২০০৯ এর ১৩ মে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপরে ২০১০ এর ২১মে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট এবং ২০১১ এর ২ নভেম্বর রূপপুরে আনুমানিক ১২’শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন দুই ইউনিট বিশিষ্ট পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়
২০১৫ এর ১৩ই জানুয়ারি দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের সরকার প্রধানদের উপস্থিতিতে রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রস্তুতিমূলক পর্যায়ের নির্মাণ কাজের জন্য ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের স্টেট এক্সপোর্ট ক্রেডিট (State Export Credit) সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়ান ফেডারেশনের সরকারি মালিকানাধীন রোসাটম স্টেট কর্পোরেশন রূপপুর প্রকল্পের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত VVER-1200 (AES-2016) Generation 3+পরিবারের বিদ্যুৎ চুল্লি সরবরাহ করবে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বর্তমানে বিশ্বের ৩০টি দেশে প্রায় ৪৫০টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রয়েছে। সেগুলো থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ মোট উৎপন্ন বিদ্যুতের প্রায় ১২ শতাংশ। ১৪টি দেশে আরও প্রায় ৬৫টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। ২০২৫ সাল নাগাদ ২৭টি দেশে প্রায় ১৭৩টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। এগুলোর মধ্যে ৩০টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রই নির্মাণ করা হবে পরমাণু বিশ্বে নবাগত দেশসমূহে, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে আমাদের জল্পনাকল্পনার শেষ নেই। একদিকে যেমন রয়েছে কৌতূহল অপরদিকে শঙ্কা। একদিকে যেমন হতে যাচ্ছি বিশ্বে পারমানবিক দেশগুলোর অভিজাত সংগঠন নিউক্লিয়ার ক্লাবের গর্বিত সদস্য অন্যদিকে এর নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো এত ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশে পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আদৌ সুফল বয়ে আনবে কিনা!
পাবনার ঈশ্বরদীতে যে স্থানে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে তার মাত্র ১০ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষের বসবাস। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, দাবানল কিংবা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে জনগণকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়ার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় পাওয়া যায়। কিন্তু পারমাণবিক বিস্ফোরণ বা পারমাণবিক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে এ সময় মাত্র ২ থেকে ৩ ঘন্টা। অনাকাঙ্ক্ষিত এমন কোন ঘটনা যদি বাংলাদেশে ঘটেই যায় তাহলে তা সামাল দেওয়ার মতো সক্ষমতা কি আমাদের আছে?
জাপানের ফুকুশিমা এবং রাশিয়ার চেরনোবিলের কথা আমাদের মনে আছে। ফুকুশিমা বিস্ফোরণের পর ৫০টি পারমাণবিক চুল্লী সবগুলোই বন্ধ ঘোষণা করে দেয় জাপান। এরপর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধ শক্তিগুলো বেশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এরপর তোপের মুখে পড়ে পারমানবিক শক্তিধর দেশগুলো। বেশিকিছু দেশ ধীরে ধীরে পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কমিয়ে আনার ঘোষণা দেয়।
আসুন জেনে নেওয়া যাক, কেমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে আমাদের স্বপ্নের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে।
পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এজন্য বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে নিরাপদ ও সর্বাধুনিক রিঅ্যাক্টর VVER-1200 (AES-2016) Genertion 3+ নির্বাচন করা হয়েছে।
এ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্বাচিত পারমাণবিক চুল্লিতে যে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকবে-
- ফুয়েল পেলেট
নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রথমটি হচ্ছে ফুয়েল পেলেট, যা অতি উচ্চ তাপমাত্রায় তার জ্বালানি বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে পারে। ফুয়েল পেলেট সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়, ফলে তেজস্ক্রিয় ফিশন প্রোডাক্টসমূহ পেলেটের ভেতরে অবস্থান করে।
- ফুয়েল ক্ল্যাডিং
ফুয়েল পেলেটগুলো জিরকনিয়াম অ্যালয়ে তৈরি ফুয়েল ক্ল্যাডং দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। বিশেষ কোন কারনে সামান্য পরিমাণ ফিশন প্রোডাক্ট ফুয়েল পেলেট থেকে বের হয়ে আসলেও তা এই ক্ল্যাডিং ভেদ করতে পারে না।
- রিয়েক্টর প্রেসার ভেসেল
নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের জন্য বিশেষ মান নিয়ন্ত্রণ করে, অত্যন্ত সতর্কতার সাথে, পুরু ইস্পাতের প্রেশার ভেসেল তৈরী করা হয় যা, উচ্চ তেজষ্ক্রিয় অবস্থাতেও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
- প্রথম কন্টেইনমেন্ট বিল্ডিং
রিইনফোর্সড কনক্রিট দিয়ে ১.২ মিটার পুরুত্বের প্রথম কন্টেইনমেন্ট বিল্ডিং তৈরী করা হয়, যা যেকোন পরিস্থিতিতে তেজস্ক্রিয়তা পরিবেশে ছড়িয়ে পড়া থেকে বিরত রাখে।
- দ্বিতীয় কন্টেইনমেন্ট বিল্ডিং
নিরাপত্তা ব্যবস্থা অধিকতর জোরদার করার জন্য আধুনিক নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টগুলোতে প্রথম কন্টেইনমেন্ট বিল্ডিং-এর পর ০.৫ মিটার পুরুত্বের আরও একটি কন্টেইনমেন্ট বিল্ডিং নির্মাণ করা হয় যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিমান দুর্ঘটনা ইত্যাদি থেকে প্লান্টকে সুরক্ষা করে।
এই পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যের কারণে মনুষ্য সৃষ্ট ঘটনা/দূর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন- শাক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, ভুমিকম্প, বন্যা ইত্যাদিও প্রভাব মোকাবেলায় সক্ষম থাকবে এই পারমাণবিক চুল্লি।
“পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য ছাড়াও এই প্লান্টের ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যাতে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পেও প্লান্ট নিরাপদ থাকবে। এছাড়া ৫.৭ টন পর্যন্ত ওজনের বিমানের আঘাতেও এটি অক্ষত থাকবে। সর্বশেষ প্রজন্মের অত্যাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে রিঅ্যাক্টর বিল্ডিং থেকে ৮০০ মিটারের (এক্সক্লুসিভ জোন) বাইরেই স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যাবে।”
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার বেছে নিয়েছে প্রযুক্তির সেরা রিঅ্যাক্টরই। রাশিয়ান ফেডারেশনের সাথে চুক্তি অনুযায়ী রূপপুরে ব্যবহার করা হবে বিশ্বের সর্বাধুনিক নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর। রূপপুরে ভিভিইআর-১২০০ পরিবারের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উক্ত প্রযুক্তিতে রাশিয়ান ফেডারেশন কর্তৃক উদ্ভাবিত সর্বাধুনিক যেকোন পারমাণবিক নিরাপত্তামূলক বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভূক্ত থাকবে।
আরো পড়ুনঃ
গেজেট, মুভি এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে রিভিউ
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সমস্ত মানদণ্ড অনুসরণ করা হচ্ছে। ভিভিইআর-১২০০ (এইএস-২০১৬) হচ্ছে ভিভিইআর পরিবারের সর্বশেষ সংস্করণ। ফলে রিঅ্যাক্টরটি মনুষ্য-সৃষ্ট কোন দুর্ঘটনা এবং প্রাকৃতিকভাবে ঘটতে পারে এমন যে কোন প্রকার বিপর্যয় যেমন- শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, ভুমিকম্প, বন্যা ইত্যাদি মোকাবেলায় সক্ষম থাকবে। রূপপুরে নির্মিতব্য রিঅ্যাক্টরটি এসব দুর্ঘটনা মোকাবেলা করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম থাকবে।
ভৌত নিরাপত্তা ব্যবস্থা
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা (Security) নিশ্চিতকরণ এবং Physical protection সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা করা একটি অতীব গুরূত্বপূর্ণ বিষয়। এ সকল বিষয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের দায়বদ্ধতা রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মত অতীব গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনার ভৌত নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক যুগোপযগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত এক্সপার্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য Design Basis Threat (DBT)বিশ্লেষণের মাধ্যমে Physical Protection System (PPS)-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে Conceptual design of PPS for Rooppur NPP-র ড্রাফট প্রস্তুত করেছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-র গাইডলাইন ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (BAERA)-র আইনী বাধ্যবাধকতা ও বিভিন্ন দেশের পারমাণবিক স্থাপনার ভৌত নিরাপত্তা পদ্ধতির অনুসরণ করা হয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তা বিধান এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা প্রদানের জন্য রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে একটি মনিটরিং টীম গঠন করা হয়েছে।
পারমাণবিক পদার্থ হিসেবে সাধারণত ইউরেনিয়াম ব্যবহার হয়। পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের জন্য ইউরেনিয়ামকে একটানা ৫ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তারপর এটা পারমানবিক বর্জ্য হিসেবে পরিগণিত হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই পারমানবিক বর্জ্যের তেজস্ক্রিয়তা হাজার হাজার পর্যন্ত অক্ষত থাকে। যা মানবদেহ এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
অধিকাংশ পারমাণবিক বর্জ্য পানির পুলে সংরক্ষণ করা হয়। পানিতে পারমাণবিক বর্জ্য সংরক্ষণের ফলে বিকিরণ হয় না। তেজস্ক্রিয়তাও ছড়িয়ে পড়তে পারে না। এই পুলগুলো সাধারণত পারমাণবিক চুল্লীর অভ্যন্তরে নির্মাণ করা হয়। এজন্য পারমাণবিক বর্জ্যগুলো নিঃসরণের সাথে সাথে পুলে ফেলা হয়। তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পানিতে ফেলার পর সেখানে প্রচুর শক্তি উৎপন্ন হয়। এ শক্তির কারণে পানি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। পানি যাতে না ফুটে সে জন্য পারমাণবিক চুল্লীতে আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর জন্য প্রয়োজন হয় আলাদা শক্তি। যদি কোনভাবে শক্তি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে পানি শীতল রাখার পাম্প ও জেনারেটর বন্ধ হয়ে যাবে। ফলশ্রুতিতে পানি উত্তপ্ত হওয়া শুরু হবে এবং পানিতে থাকা তেজস্ক্রিয় পদার্থসমূহ বিকিরিত হবে। এর ফলে বিষাক্ত পদার্থসমূহ পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।
জাপানের ফুকুশীমাতে ঠিক এ ঘটনাটাই ঘটেছিল। সেখানে পারমাণবিক চুল্লীতে পানিকে শীতল করার পাম্পটি অকার্যকর হয়ে পড়েছিল এবং জেনারেটরটিও কাজ করছিল না। যার দরুন বিষাক্ত তেজস্ক্রিয় পারমাণবিক বর্জ্য বিকিরণের মাধ্যমে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।
বাংলাদেশ এবং রাশিয়ার মধ্যে ২০১৭ এর ১৫ই মার্চ স্পেন্ট ফুয়েল ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এক্ষেত্রে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ফেরত নেবে রাশিয়া। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়ার ফুয়েল বর্জ্য অপসারণ একটি জটিল প্রক্রিয়া যার সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে পাকশীতে নিরাপত্তা ক্যাম্প নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের পরিত্যক্ত ১৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক “পারমানবিক নিরাপত্তা ক্যাম্প” নির্মিত হবে।
এদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য সেনাপ্রধানের নিয়ন্ত্রণে “স্পেশালিস্ট নিউক্লিয়ার সিকিউরিটি ফোর্স” গঠন করা হয়েছে। এই বাহিনী সরাসরি সেনাপ্রধান এবং প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে। এই বাহিনীর অধীনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা যুক্ত থাকবে। এছাড়া অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও এই ফোর্সের সাথে যুক্ত থাকবে।
২০১৩ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমরাস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। যার সিংহভাগ অস্ত্র নিযুক্ত থাকবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে। এছাড়া আধুনিক স্যাম সিস্টেম (Surface To Air Missile System)ক্রয়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পরিত্যক্ত ঈশ্বরদী বিমানবন্দরকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হতে পারে। সার্বিকভাবে যুদ্ধকালীন মুহূর্তে বহিঃশত্রুর আক্রমণ মোকাবেলায় সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে।
This is a Bengali article. It’s the safety measures of the rooppur nuclear power plant are discussed.