কিন্তু সত্যিই যদি কখনো হঠাৎ করে বিশ্বের সব মানুষ বিলুপ্ত হয়ে যায়, তাহলে পৃথিবীতে কী কী ঘটতে পারে? মানব সভ্যতা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হতে কীরকম সময় লাগতে পারে?
উৎসাহী বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময় এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন। বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গবেষকের সাহায্যে মনুষ্য পরবর্তী যুগের পৃথিবীর চিত্র আঁকার চেষ্টা করেছেন। সামান্য কিছু পার্থক্য থাকলেও তারা অধিকাংশই মোটামুটি একই ধরনের সম্ভাবনা এবং আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন। চলুন জেনে নিই কী ঘটতে পারে পৃথিবীর ভাগ্যে, যদি আমরা হঠাৎ করেই গায়েব হয়ে যাই।
গুয়াতেমালার রেইন ফরেস্টের গভীরে মায়া সভ্যতার অন্যতম বিখ্যাত ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। প্রায় ২,০০০ বছরের পুরানো তিকাল দুর্গটি ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছিল। বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক ও সাংবাদিক অ্যালান ওয়েজম্যান যখন আশেপাশের অঞ্চল জুড়ে ভ্রমণ করেছিলেন, তখন তিনি পথিমধ্যে আকর্ষণীয় কিছু আবিষ্কার করেন। অ্যালান ওয়েজম্যান বলেন-
আপনি যখন ঘন রেইন ফরেস্টের মধ্য দিয়ে হাঁটছেন, অথবা আপনি পাহাড়ের উপর দিয়ে হাঁটছেন, যা এক সময় মানুষের বসতি ছিল। কর্মচঞ্চল এক শহর ছিল। কিন্তু তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার কারণে আপনি বুঝতেও পারছেন না।
তবে, সৌর বিদ্যুৎ ও জলবিদ্যুৎ অনেকদিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। এক সময় উইন্ডমিলের লুব্রিক্যান্টস শেষ হয়ে যাবে, সোলার প্যানেলের উপর ধুলাবালির আস্তরণ পড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে। শুধুমাত্র চলু থাকবে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো কয়েক বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। তবে একসময় অব্যবস্থাপনার কারণে সেগুলোও নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে কয়েক শতাব্দী পর প্রথমবারের মতো সমগ্র পৃথিবী গভীর অন্ধকারে ঢেকে যাবে।
সবচেয়ে বিধ্বংসী কাণ্ডগুলো ঘটবে অয়েল রিফাইনারি এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে। কেননা, নিয়ন্ত্রণ করার লোকের অভাবে সেগুলা অব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে এবং একসময় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটবে। নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এর প্রতিক্রিয়া হবে চেরনোবিল এবং ফুকুশিমার সম্মিলিত বিপর্যয়ের চেয়েও মারাত্মক। বিশাল এলাকা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে এবং পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে যাবে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত পৃথিবীর বড় একটি অংশ জুড়ে এর প্রভাব বজায় থাকবে। আশেপাশের এলাকার প্রচুর প্রাণী দীর্ঘকাল পর্যন্ত ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। গাছপালা ও ভূপ্রকৃতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ড ঘটলেও তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। নিয়ন্ত্রণ করার কেউ না থাকায় সেগুলো মাসের পর মাস ধরে জ্বলতে পারে। লোকালয় কিংবা বনাঞ্চল থেকে বেশি দূরে অবস্থিত না হলে অগ্নিকান্ড ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে। গ্রামের পর গ্রাম শহরের পর শহর জুড়ে আগুন জ্বলতে থাকবে। কাঠের অধিকাংশ ঘরবাড়ি ধীরে ধীরে ঘুণপোকা এবং ছারপোকার আক্রমণে ধ্বসে পড়তে থাকবে। মোটামুটি ৭৫ বছরের মধ্যে কাঠের বিম এবং কলামগুলো ভেঙে পড়তে শুরু করবে এবং ১০০ বছরের মধ্যে বিশ্বের অধিকাংশ কাঠের স্থাপনা ধ্বসে পড়বে। এছাড়াও প্রথম ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই শক্তি গ্রহণের মাত্রায় ব্যাপক হ্রাস হওয়ায় বিশ্বের নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেফ মোডে চলে যাবে।
দুই-তিন দিনের মধ্যেই বিশ্বের অধিকাংশ ভূগর্ভস্থ রেললাইন এবং টানেল পানিতে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়ে যাবে। নিয়মিত পানি নিষ্কাশনের জন্য অধিকাংশ ভূগর্ভস্থ রেললাইন এবং টানেলেই পাম্প ব্যবহার করা হয়। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় এবং জেনারেটরের জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ায় সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে এবং পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব না হওয়ায় ধীরে ধীরে ভূগর্ভস্থ পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত হয়ে পড়বে।
দুই-তিন দিনের মধ্যেই বিশ্বের অধিকাংশ ভূগর্ভস্থ রেললাইন এবং টানেল পানিতে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়ে যাবে। নিয়মিত পানি নিষ্কাশনের জন্য অধিকাংশ ভূগর্ভস্থ রেললাইন এবং টানেলেই পাম্প ব্যবহার করা হয়। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় এবং জেনারেটরের জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ায় সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে এবং পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব না হওয়ায় ধীরে ধীরে ভূগর্ভস্থ পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত হয়ে পড়বে।
২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে ফুটপাথ এবং রাস্তাঘাটগুলোতে ফাটল ধরে সেখানে আগাছা এবং গাছপালা জন্মাতে থাকবে। এ সময়ের মধ্যে ফুটপাত এবং খোলা চত্বরগুলোর তিন-চতুর্থাংশই ঘাস এবং আগাছায় আবৃত হয়ে যাবে। বিশ্বের অনেক রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাবে। শীত প্রধান দেশে শীতকালে পানি জমে বরফ হয়ে যাবে এবং গরমকালে আবার বরফ গলে পানিতে রূপান্তরিত হবে। এই তারতম্যের কারণে রাস্তাঘাটের ভাঙণ ত্বরান্বিত হবে। বৃষ্টির পানি ছাদের উপর জমে কনক্রিটের ভবনগুলোরও একই দশা সৃষ্টি করবে। মোটামুটি ২০০ বছরের মধ্যে বিশ্বের অধিকাংশ কনক্রিটের বিল্ডিং ভেঙে পড়তে শুরু করবে।
দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে স্টিল ব্রিজ কিংবা টাওয়ারগুলো মরিচা ধরতে শুরু করবে। মোটামুটি ৩০০ বছরের মধ্যে আইফেল টাওয়ার, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, হাওড়া ব্রিজ এবং গোল্ডেন ব্রিজসহ স্টিল নির্মিত বিশ্বের সমস্ত স্থাপনা ভেঙে পড়বে। বুর্জ খলিফাসহ আরব বিশ্বের অধিকাংশ ভবন বালির নিচে চাপা পড়তে থাকবে। অধিকাংশ শহর রক্ষা বাঁধগুলো কয়েকশো বছরের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যাবে। ফলে তলিয়ে যাবে বিশ্বের অধিকাংশ বিখ্যাত শহরগুলো। প্রকৃতি ধীরে ধীরে মানব সভ্যতাকে গ্রাস করে নিতে থাকবে।
This is a Bengali article. It’s About What would happen to Earth if humans suddenly disappeared?