বিশ্বের ধনীদের তালিকায় এই পরিবারের কারোর নাম নেই কারণ বাইরের কেউ জানেই না এই পরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ কত। একমাত্র পরিবারের লোকেরাই বলতে পারে তারা মোট কতটূকু সম্পদের অধিকারী। এই পরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ পৃথিবীর অনেক দেশের চাইতেও বেশি। রথসচাইল্ড পরিবার বিশ্বের সবচেয়ে ধনাঢ্য পরিবার হওয়ার পাশাপাশি সম্ভবত সবচেয়ে রহস্যময় পরিবারও বটে।
সপ্তদশ শতাব্দী পর থেকে ইহুদি জাতিগোষ্ঠীর আকস্মিক উত্থানের পেছনে এই পরিবারটির উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। এছাড়া, ইসরায়েল পুনঃপ্রতিষ্ঠা, লীগ অব নেশনস, জাতিসংঘ গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে তাদের ছিল প্রভাবশালী ভূমিকা। ইউরোপের প্রতিটি যুদ্ধে উভয়পক্ষকেই তারা ঋণ দিত। যে দেশ বিজয়ী হত তাদের কাছ থেকে উচ্চহারে সুদে ঋণের অর্থ ফেরত নিত। অন্যদিকে পরাজিত দেশটির সকল সম্পদ তাদের কাজে ব্যবহৃত হতো। এভাবেই ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী পরিবারে পরিণত হয় তারা। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমেরিকার বিপক্ষশক্তি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীকে ২০ মিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করেছিল এই পরিবারটি।
কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হল রথসচাইল্ড পরিবার?
এই পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা মেয়ার আমসেল রথসচাইল্ডের ব্যবসায়িক দক্ষতার কারণে প্রিন্স উইলহেম তাকে জার্মানির অর্থ বিভাগে নিয়োগ দেয়। যে অর্থ তিনি আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিপক্ষশক্তিকে ঋণ দিয়েছিলেন সেই একই অর্থই পরবর্তী সময়ে ফরাসি বিপ্লবে বিনিয়োগ করেন।
ইউরোপের সর্বত্র ব্যাংকিং বা সোজা ভাষায় ঋণ ব্যবসায় একচ্ছত্র আধিপত্য আনে রথসচাইল্ডের চার ছেলে। ইউরোপের ঐ সময়কার সবচেয়ে সমৃদ্ধ শহর গুলো ছিল নাপোলি, প্যারিস, ভিয়েনা, লন্ডন ও ফ্রাঙকফুর্টে। এই ৫টি শহর থেকে ইউরোপের সমস্ত রাজকীয় পরিবারের সাথে রথসচাইল্ডরা ব্যবসা গড়ে তোলে। রথসচাইল্ডরা বিভিন্ন দেশের রাজা-বাদশাদেরকে উচ্চ সুদে ঋণ, বন্ড ইত্যাদি দিত।
রথসচাইল্ড পরিবারের ষড়যন্ত্র
প্রায় ২০০ বছর ধরে এই রথচাইল্ডকে নিয়ে আছে অনেক রহস্য। কারো কাছে এসব স্রেফ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, আবার কারো কাছে বাস্তবতা। বিশেষজ্ঞরা বলেন- ফরাসি বিপ্লব, ওয়াটারলুর যুদ্ধ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, রুশ বিপ্লব, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, এমনকি হিটলারের হলোকাস্ট- এর সব কিছুর পেছনেই ভূমিকা আছে রথসচাইল্ড পরিবারের। নিজেদের ব্যবসার স্বার্থেই এসব করেছে তারা। সঙ্গে কাজ করেছে ধর্মীয় অনুভূতিও।
১৯১৯ সালের ২৯ মার্চ বলশেভিক বিপ্লব বিষয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম টাইমস অব লন্ডন এক প্রতিবেদনে বলা হয়-
বলশেভিক বিপ্লবের ব্যাপারে সবচেয়ে কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপারটি হচ্ছে- এর নেতাদের একটি বিরাট অংশই রুশ নয়। বিপ্লবের মূলে ভূমিকা রাখা ২০ থেকে ৩০ নেতার মধ্যে ইহুদির হার ৭৫ ভাগের কম হবে না। ভ্লাদিমির লেনিন নিজেও ইহুদি। তবে পরে নাকি রুশদের সঙ্গে আর মিলে থাকা সম্ভব হয়নি রথচাইল্ডের। কারণ বিপ্লবের সময় কথা ছিল, কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না সরকার। পরে সে কথা রাখেনি বলশেভিক সরকার।
এ সব তত্ত্বের কোনটা সঠিক, আর কোনটা ভুল- তা যাচাই করা কঠিন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে বিশ্বের ধনাঢ্য পরিবারের তালিকায় শীর্ষেই থাকছে রথসচাইল্ড। আর সেই সঙ্গে হয়ে আছে রহস্যময়।
বিশ্বব্যবস্থায় রথচাইল্ড ফ্যামিলির প্রভাব
বলা হয়ে থাকে পুরো বিশ্বের ব্যাংক ব্যবস্থা, সামরিক ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ব্যবস্থা এই পরিবারের নিয়ন্ত্রণে। ডলার ও পাউন্ড-এর নোট ছাপানোও তাদের হাতে। বলা হয়ে থাকে এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট কে হবে সেটাও নির্ধারণ করে দেয় এই পরিবার! তবে এই তথ্যের নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ নেই। বিশ্বজুড়ে এই পরিবারকে নিয়ে অনেকগুলো কনস্পিরেসি থিওরি প্রচলিত আছে। এদের মাঝে এটি একটি।
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়া কমিউনিষ্ট আন্দোলনের মূল কান্ডারী ছিল ইহুদীরা। এমনকি চীন, কিউবা, ভিয়েতনামে সমাজবাদীদেরও অর্থ দিয়েছিল রথসচাইল্ড পরিবার। নিজেদের পরিবারের অস্ত্বিত্ব টিকিয়ে রাখতে আজব কিছু রীতি চালু আছে পরিবারটিতে। তাদের পরিবারের রক্তের সম্পর্কের ভেতরেই বিয়ে সম্পন্ন করার রীতিনীতি রয়েছে। এর একটা মাত্রই কারণ, যাতে তাদের বংশবৃদ্ধির সম্প্রসারণ একই পরিবারের ভেতরেই হয়। যাতে করে ব্যবসার সম্প্রসারণ শুধুমাত্র তাদের নিজেদের মধ্যেই হয়ে থাকে।
বর্তমানে রথসচাইল্ড ফ্যামিলির কার্যক্রম শুধুমাত্র অর্থনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বলা হয়ে থাকে বিশ্বের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডগুলোতে তাদের অবদান রয়েছে। বিশেষ করে যুদ্ধ এবং সামরিক ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণেই পরিচালিত হয় বলে প্রচলিত আছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রেসিডেন্টকে দিয়ে তারা তাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যেকোনো কাজ করিয়ে নিতে পারে। মূলত রাষ্ট্রের মধ্যে তারা আরেকটি রাষ্ট্র তৈরি করে ফেলেছে।
সবচেয়ে রহস্যময় বিষয়টি হলো, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে রথসচাইল্ড ফ্যামিলির কার্যক্রম সম্পর্কে খুব কমই প্রকাশিত হয়ে থাকে। এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোও রথসচাইল্ড ফ্যামিলির হাত ধরে নিয়ন্ত্রিত হয়। যার কারণে তাদের কর্মকান্ড সব সময় গোপন থাকে।
লীগ অব নেশনস: এক ব্যর্থ সংগঠনের আদ্যোপান্ত
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ হওয়ার কারণ এবং যার ফলশ্রুতি এর ভয়াবহ পরিণতি
This is a bengali article. This article is about the most mysterious Rothschild family in the world.
Necessary reference are hyperlinked within article
Featured Article: Wikipedia